চট্টগ্রাম ব্যুরো : পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাÐে ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলির উৎস অজানা রেখেই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে পুলিশ। অস্ত্র মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) বাকলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মহিম উদ্দিন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ অভিযোগপত্র জমা দেন। আগামীকাল রোববার এটি আদালতে পেশ করা হবে।
অভিযোগপত্রে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ভোলা ও রিকশাচালক মনির হোসেনকেই আসামি করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে ঘটনার ‘পরিকল্পনাকারী’ কামরুল শিকদার ওরফে মুছাকে কার নির্দেশে এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা অস্ত্র দিয়েছিলেন, তা উঠে আসেনি। এসব অস্ত্র-গুলি কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তাও উল্লেখ নেই অভিযোগপত্রে।
বাকলিয়া থানার ওসি আবুল মনসুর বলেন, মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে এহতেশামুল হক ভোলার নাম রিকশাচালক মনিরের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। তবে রিমান্ডেও ভোলা কার নির্দেশে মাহমুদা হত্যার পরিকল্পনাকারী মুছাকে অস্ত্র দিয়েছিলেন, তা স্বীকার করেননি। ভোলা কার কাছ থেকে অস্ত্রগুলো পেয়েছেন এবং কার নির্দেশে ভোলা মুছাকে মাহমুদা হত্যায় ব্যবহারের জন্য এগুলো দিয়েছেন, জবানবন্দিতে তা তিনি স্বীকার করেননি। তদন্তেও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই মামলায় দুজনকেই আসামি করে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলা তদন্তের একপর্যায়ে গ্রেফতার খুনি চক্রের সদস্য ওয়াসিম ও আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। তারা আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র মূলহোতা আবু মুছার সহযোগী ভোলা সরবরাহ করেছিল বলে তারা তথ্য দেয়। তারা জানায়, খুনের আগের দিন রাতে মুছার বাসায় বৈঠক হয়, সেখানে ভোলাও উপস্থিত ছিল। খুনের পর অস্ত্র ও গুলি আবার ভোলার কাছে জমা দেওয়া হয়।
এই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যাকাÐে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ ভোলা ও তার সহযোগী ও রিকশাচালক মনির হোসেনকে গ্রেফতার করে। ভোলার দেওয়া তথ্যে এবং মনিরের দেখানো মতে মনিরের বাসা থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। ভোলাকে মিতু হত্যা মামলায় গ্রেফতারের পাশাপাশি বাকলিয়া থানায় অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলায় আসামী করে পুলিশ। ওই মামলায় মনিরকেও আসামী করা হয়।
আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে আইও উল্লেখ করেন, মাহমুদা হত্যা মামলার আসামি মোতালেব ওরফে ওয়াসিম গত ২৫ জুন গ্রেফতারের পর স্বীকার করেন, মাহমুদা হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি তাদের সহযোগী ও দলনেতা মুছা ঘটনার আগের রাতে ভোলার কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। হত্যাকাÐের পর ভোলার কাছে এগুলো ফেরত দেওয়া হয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকা থেকে ২৭ জুন ভোলাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই এলাকার রিকশাচালক মনির হোসেনকে পরদিন ভোরে গ্রেফতার করা হয়। মনিরের কাছ থেকে একটি পিস্তল, একটি রিভলবার ও ছয়টি গুলি উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে পিস্তলটি মাহমুদা হত্যাকাÐে ব্যবহৃত হয়েছে। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ অস্ত্র-গুলি নিজ হেফাজতে রাখায় আসামি ভোলা ও মনিরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
মিতু হত্যা মামলার দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার ২৬ জুন আদালতে জবানবন্দি দেন। এতে তারা উল্লেখ করেন, হত্যাকাÐে ওয়াসিম, আনোয়ার, মো. রাশেদ, নবী, মো. শাহজাহান, কামরুল সিকদার ওরফে মুছা ও মো. কালু অংশ নেয়।
হত্যাকাÐে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে ছিলেন ওয়াসিম, মুছা ও নবী। মাহমুদাকে ছুরিকাঘাত করেন নবী। ভোলা অস্ত্র সরবরাহ করেন। এদের মধ্যে রাশেদ ও নবী কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। পুলিশও নিশ্চিত হয়েছে খুনের মূলহোতা আবু মুছা। তবে তাকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। তবে মুছার স্ত্রীর দাবি পুলিশ তাকে ২২ জুন বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। পুলিশ এমন অভিযোগ অস্বীকার করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন