শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা

মৌসুমী বায়ু সক্রিয় : দু’দিন পর থেকে টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশে বন্যা এবার দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর মধ্যাঞ্চলেও বন্যা বিস্তৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো প্লাবিত হচ্ছে। আগামী দু’এক দিনের বৃষ্টিপাতে মধ্যাঞ্চলসহ দেশের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে এমনটাই বলা হয়েছে। জুলাইয়ের সাত তারিখের পর টানা বৃষ্টিপাতের কথাও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।

জুলাইয়ের প্রথম থেকে এদেশে বন্যার প্রকোপ শুরু হয়। প্রতি বছর বন্যায় উত্তরের জেলাগুলোই বেশি আক্রান্ত হয়। সাধারণত ওসব এলাকায় মধ্য মেয়াদে বন্যার প্রবণতাই বেশি দেখা দেয়। তারপর থেকে মধ্যাঞ্চল হয়ে নিম্নাঞ্চল দিয়ে বন্যার পানি সাগরে গিয়ে পড়ে। বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে। কিন্তু এবার স্বাভাবিক সময়ের দু’সপ্তাহ আগেই বন্যার প্রকোপ শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও বন্যার কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। এই অবস্থায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদী বন্যায়।

বন্যা ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কয়েকটি জেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুড়িগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ নদের পানি যমুনা হয়ে পদ্মায় নামছে। এতে দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা বিস্তৃত হচ্ছে। পদ্মাপাড়ের জেলা শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জে বন্যার পানি বাড়ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানিও বাড়ছে। ওই নদের তীরবর্তী জেলা শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পানি বৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ময়মনসিংহ জেলাও বন্যা কবলিত হতে পারে। বন্যাক্রান্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ ও ওষুধের মজুত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে উঠছে। এ কারণে দেশের আকাশে উড়ে আসা মেঘমালার আনাগোনা বাড়বে। এর প্রভাবে বৃষ্টিও বাড়বে। গতকাল রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বৃষ্টির দাপট। আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানিয়েছে, জুলাইয়ের সাত তারিখের পর বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে। তারা বলেছে, জুলাই মাস জুড়ে সারাদেশে স্বাভাবিক বা ৫০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। যার বেশিরভাগটাই হবে সাত তারিখের পর।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশের পূর্বাংশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। আগামী দুই দিন সারা দেশে বৃষ্টি বাড়তে পারে।

মূলত ভারত থেকে আসা ঢল ও মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে বছরের জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে দু’তিন দফায় বন্যা হয়। এসব বন্যা ৩ থেকে ১০ দিন স্থায়ী হয়। এবার জুনের শেষে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় যেমন কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্দা, এসব জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। দুই সপ্তাহ পার হলেও সেই পানি নামেনি বরং প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গতকালও তিস্তা, ধরলা ও পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এদিকে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার পাঁচ-ছয়টি জেলায় বন্যার পানিও বাড়ছে। সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, জামালপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে পানি বাড়ছে। আগামী দু’তিনদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ঢাকার নিম্নাঞ্চল ডেমরায় বন্যার পানি চলে আসতে পারে।

বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও পানি বিশেষজ্ঞ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা ও যমুনার পানি এবার একটু দেরিতে নামবে বলে মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পানি বৃদ্ধির ধরন ও উজানের বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, এই বন্যার পানি নামতে আগস্টের মাঝামাঝি সময় লেগে যেতে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে সুরক্ষিত এলাকাতেও পানি ঢুকে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।

দৈনিক ইনকিলাবের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী গতকালও দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পদ্মা ও যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া নতুন করে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে নদীভাঙন। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন জেলায় ২২ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বন্যার্তরা এখনো ত্রাণ পাচ্ছেন না।

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে গতকালও বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপরে। যমুনায় পানি বাড়ায় সিরাজগঞ্জ জেলায় এনায়েতপুরের ঘাটাবাড়ি ও পাকুরতলায় ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে। পাউবো থেকে সেখানে অস্থায়ী জরুরি প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হলেও ভাঙন কোনভাবেই থামছে না।

কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন