বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রশাসন-নাগরিকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ওয়ারী লকডাউনের দ্বিতীয় দিন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে ২১ দিন লকডাউন শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে করোনার হটস্পটখ্যাত পুরান ঢাকার ওয়ারীতে। আগে ঘোষণা দিয়ে, প্রস্তুতি নিয়ে ওয়ারীতে শুরু হওয়া লকডাউনের গতকাল ছিল দ্বিতীয় দিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হলেও লকডাউনে বাসিন্দাদের অনেকেই নিয়মনীতি ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে চাইছেন না। নানা অজুহাত ও ছুতো দেখিয়ে তারা বাইরে যেতে চান। যেতে দেয়া না হলে বিভিন্ন সময় স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন। তবে উপযুক্ত কারণ ছাড়া কাউকেই লকডাউন এলাকা থেকে বের হতে দিচ্ছেন না স্বেচ্ছাসেবকরা। বাসিন্দারা বলছেন, কাঁচাপণ্যের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। মানুষকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিএসসিসির ৪১ নম্বর ওয়ার্ড ওয়ারীর এক বর্গ কিলোমিটার এলাকা লকডাউনের আওতায় পড়েছে। এলাকাটিতে রয়েছে টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন), লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‌্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট। বসবাসকারীদের কেউ নিয়ম অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

গতকাল লকডাউনে থাকা ওয়ারীর ভেতরে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জরুরি পরিবহণের যাতায়াতের জন্য দুটি পথ খোলা রেখে সবগুলো পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকাটিতে সুনসান নীরবতা। পুরো এলাকার ভেতরে ওষুধের দোকান, সুপার শপ, হাসপাতাল খোলা রয়েছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করছে। সড়ক ও গলিপথগুলো অনেকটা ফাঁকা। তবে টিকাটুলি মোড়সহ কিছু মোড়ে দুই/একজন তরুণকে দাঁড়িয়ে থেকে আলাপ করতে দেখা যায়। লকডাউন এলাকার ভেতরে পুলিশের মোবাইল টিমের সদস্য, টহল টিমের সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকরা একটু পর পর এলাকা পরিদর্শন করছেন।

লকডাউনে ওয়ারীর বাসিন্দাদের খাবারের চাহিদা মেটাতে মীনা বাজার, বিগ বাজার ও স্বপ্ন এ তিনটি সুপার শপের আউটলেট খোলা রয়েছে। তাছাড়া ৪১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে এই তিনটি সুপারশপের চুক্তি হয়েছে, তারা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে বাসিন্দাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। এছাড়াও বাসিন্দাদের জন্য এলাকায় দশটি ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে বাজারমূল্যেও চেয়ে ৩০ শতাংশ কম দামে সবজি বিক্রি করা হয় বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এজন্য সবজি বিক্রেতা কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে দৈনিক ৫০০ টাকা সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানানো হয়। তবে বাসিন্দারা বলছেন অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের পণ্যের বেশি দাম নেয়া হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ লকডাউনকে অনেক বাসিন্দা স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকেই আবার একে দেখছেন অহেতুক ভোগান্তি হিসেবে। তাদের বক্তব্য এক এলাকায় লকডাউন করে তেমন সুবিধা হবে না। ফলে তাদের কাজ করতে যেতে দিতে হবে। শরীফ নামের একজন বলেন, করোনায় মরার ভয়ে লকডাউন মেনে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু কাজ করতে না পারলে ঘরে না খেয়ে মরতে হবে।

ওয়ারীর র‌্যাংকিং স্ট্রিটে বসবাস করেন মুশফিকা বেগম। তিনি একটি অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। লকডাউনের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ওয়ারীতে লকডাউন দেয়া মানে একটা ভোগান্তি। এই লকডাউনের কোনো মানে নেই। যারা বাইরে যাওয়ার তারা ৪ জুলাইয়ের আগেই চলে গেছে। তাদের মধ্যে কেউ করোনা আক্রান্ত থাকলে অন্য এলাকায় গিয়ে রোগ ছড়াবে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি, তাদের ব্যবসা বন্ধ, সবকিছু বন্ধ। ভোগান্তির মধ্যেই পড়ে আছি। ভোগান্তির মধ্যে দুইদিন কেটে গেলো।

ব্যবসায়ী মো. রাশেদ চৌধুরী বসবাস করেন টিপু সুলতান রোডে। লকডাউনের কারণে এলাকা থেকে বের হয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পারায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তাকে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে তর্কাতর্কি করতেও দেখা যায়। তিনি বলেন, ব্যবসা করি নবাবপুরে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না, বাসায় থাকতে হচ্ছে। এই লকডাউন মানুষের জন্য ভোগান্তি। লকডাউন দিলে পুরো ঢাকা সিটি দিতে পারতো। তাতে লাভ হতো। কিন্তু ছোট একটি জোন দিয়ে কোনো লাভ নেই। মানুষকে শুধু শুধু কষ্ট দেয়া হচ্ছে।

ওয়ারীর লকডাউনে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নবাবপুর, ইসলামপুরের অনেক ব্যবসায়ী ওয়ারী এলাকায় বসবাস করেন। তারা বাইরে বের হতে চাচ্ছেন বেশি। কেউ বলছেন, ব্যাংকে আমার লোন আটকে যাবে; কেউ বলছেন, কোর্টে মামলার শুনানি আছে যেতে হবে; কেউ টিভি মেরামত করতে যেতে চাইছেন; আবার কেউ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে চাইছেন। এছাড়াও নানা কারণ দেখিয়ে লোকজন বাইরে বের হতে চাইছেন। তবে উপযুক্ত কারণ ছাড়া কাউকে বের হতে দেয়া হয়নি। বের হতে দেয়া না হলে অনেকেই বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হচ্ছেন। লকডাউনের দায়িত্ব পালনরত স্বেচ্ছাসেবক মো. ওয়াহিদ বলেন, কাজের গুরুত্ব দেখিয়ে অনেকেই বাইরে যেতে চান। কিন্তু জরুরি চিকিৎসা সেবার বিষয় ছাড়া কাউকে আমরা ভেতরে আসতেও দিচ্ছি না এবং বাইরে বের হতেও দিচ্ছি না।

জানতে চাইলে ওয়ার্ড কাউন্সিলর আহমেদ ইমতিয়াজ বলেন, কাউকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। দুই দিনে ২০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত লকডাউন শক্তভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন