মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভুল চিকিৎসায় বিশ্বনাথের শিশু রিফাতের মৃত্যু

বিশ্বনাথ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২০, ৫:০২ পিএম

সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার মা ও শিশু হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও গলাকাটা বিল আদায়সহ রয়েছে গুরুতর নানা অভিযোগ। এরই মাঝে খবর পাওয়া গেল, এ হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ মারা গেছে এক ফটো সাংবাদিকের ৩ মাস বয়সী এক শিশুপুত্র। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা-বাবা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের তেলিকোনা গ্রামের বাসিন্দা ও বিশ্বনাথের ফটো সংবাদিক নূর উদ্দিনের ৩ মাস বয়সী ছেলে রিফাতের জন্মের পর পায়খানার রাস্তায় সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় কিছুদিন আগে নূর উদ্দিন তার ছেলেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক শিশুসার্জন ডা. শামসুর রহমান ময়নার শরণাপন্ন হন। ডা শামসুর রহমান রিফাতের অপারেশন প্রয়োজন জানিয়ে সিলেট নগরের সোবহানীঘাটস্থ মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি হতে পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শমতেই গতকাল রোববার বেলা আড়াইটার দিকে নূর উদ্দিন ছেলে রিফাতকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
রাত ৯টায় রিফাতের অপারেশন করবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. শামসুদ্দিন ফোনে জানান এবং সবকিছু প্রস্তুত করতে বলেন। রাত ৯টায় অপারেশন করার কথা থাকলেও তিনি আসেন রাত সাড়ে ১০টার দিকে। দেড় ঘণ্টাব্যাপী অপারেশন শেষে হসপিটালের আয়ার মাধ্যমে নূর উদ্দিনকে লম্বা রগের মতো একটি বস্তু দেখানো হয় এবং তাকে জানানো হয় রিফাতের পেট থেকে ওই জিনিসটি বের করা হয়েছে।
তখন নূর উদ্দিনের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। কারণ তার এক মেয়েরও ওই সমস্যা ছিলো এবং তারও অপারেশন প্রয়োজন হয়। কিন্তু মেয়ের অপারেশনের সময় এমন কিছু ঘটেনি।
পরবর্তীতে রিফাতকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে রাখা হয় এবং রাত দেড়টার দিকে নূর উদ্দিনকে না জানিয়ে শিশুকে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি জানতে পেরে হতভম্ব হয়ে যান নূর উদ্দিন। ওই সময় কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে বলেন, আপনার ছেলের অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমরা আপনাকে না জানিয়েই আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এসময় ডা. শামসুদ্দিনকে কল করার কথা বললে নূর উদ্দিনকে তারা জানান, তিনি আসতে পারবেন না। তবে তাঁর পরামর্শমতেই সব করা হয়েছে।
পরে রিফাতের অবস্থা আরো খারাপ হয় এবং আজ (সোমবার) সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করেন হাসপাতালের ডাক্তাররা।
সাংবাদিক নুর উদ্দিন বলেন, রোববার রাতে অপারেশনের পর ডাক্তার শামসুল ইসলামকে ছেলের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে তড়িঘড়ি করে চলে যান। আমি ওয়ার্ডে গিয়ে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তাদেরকে বললে, তারা বলেন আপনার ছেলের অবস্থা ভাল না। তাকে আইসিউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সকালে ছেলে মারা গেছে বলে জানান তারা। সাংবাদিক নুর উদ্দিন তার শিশুপুত্রকে ডাক্তারের অবহেলা আর ভূল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান।
এবিষয়ে মা ও শিশু হাসাপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার মোরশেদুর রহমান শিশুটির ভূল চিকিৎসায় বা হাসপাতালের গাফলতির কারণে মৃত্যু হয়নি দাবি করে বলেন, ওই শিশুর অপারেশন আমাদের ওখানে হয়েছে এবং শিশুটি মারা গেছে ঠিকই। তবে শিশুর পিতা আবেগাপ্লুত হয়ে আমাদের প্রতি ভূল চিকিৎসার অভিযোগ এনেছেন। তার ছেলের খাদ্যনালী ও পায়খানার রাস্তায় সমস্যা ছিলো। অপারেশন শেষে শিশুর নিউমোনিয়া বেড়ে যায়, যে সমস্যা ওই শিশুর আগে থেকেই ছিলো।
নূর উদ্দিন আরও বলেন, ডা. শামসুদ্দিনের কথামতই আমরা মা ও শিশু হাসাপাতালে রিফাতকে নিয়ে এসেছিলাম। তা না হলে আমরা তাকে অন্যত্র ভর্তি করাতাম। এখানে ডাক্তার-নার্স এমনকি মাসির সঙ্গেও ঠিকমতো কথা বলা যায় না। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে খুব বাজে আচরণ করেন তারা।
এ বিষয়ে মা ও শিশু হাসাপাতালের অ্যাডমিন ম্যানেজার মুরশেদুর রহমান বলেন, ওই শিশুর অপারেশন আমাদের ওখানে হয়েছে এবং শিশুটি মারা গেছে ঠিকই। তবে শিশুর পিতা আমাদের প্রতি ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনেছেন। তার ছেলের খাদ্যনালী ও পায়খানার রাস্তায় সমস্যা ছিলো। অপারেশন শেষে শিশুর নিউমোনিয়া বেড়ে যায়, যে সমস্যা ওই শিশুর আগে থেকেই ছিলো। এমতাবস্থায় আমরা শিশুকে আইসিইউতে নেই এবং তার চাচার সঙ্গে কথা বলেই নিয়েছি। ওই সময় শিশুর পিতা ওখানে উপস্থিত ছিলেন না তাই তাকে জানানো যায়নি। কিন্তু শিশুর অবস্থার উন্নতি হয়নি তাই ে সে মারা যায়। এ বিষয়ে জানতে ডা. শামসুর রহমান ময়নার মোবাইল ফোন নাম্বারে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে মা ও শিশু হাসপাতালে ডাক্তারদের দায়িত্বে অবহেলার অনেক ঘটনা ঘটেছে। গত ৬ জুন এক বৃদ্ধ মা ও শিশু হাসপাতালসহ নগরীর আরও ৫টি হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসাসেবা পাননি। এছাড়া, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে হাসপাতালকে ৫০ হাজার টাকা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এরআগে, ২০১৭ সালের ৬ অক্টোবর হাসপাতালের বিল আদায়ের জন্য প্রসূতি মা ও ভূমিষ্ট শিশুকে একটি কক্ষে বন্দি করার অভিযোগ এনে মৌলভীবাজার জেলা কোলাউড়া থানার মোহনলাল গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে চুনু মিয়া বাদি হয়ে সিলেটের চিফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৭জন ডাক্তারসহ ১০জনকে আসামি করে মামলা (নম্বর ১৩৫৫) দায়ের করেছেন। একই বছরের ১৫ আগস্ট ডাক্তারদের অবহেলার কারণে নগরীর মেন্দিবাগের কয়েছ আহমদের শিশু মারা যায়। ওইদিন সন্ধ্যায় রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল ভাংচুর করেছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন