বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

গোদাগাড়ী মোফা কাউন্সিলরকে ফাঁসাতে গিয়ে ফেঁসে গেলেন সোহেল রানা

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ জুলাই, ২০২০, ৮:২৫ পিএম

রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি এলাকাটি মাদকপ্রবণ এলাকা। এখানে কাউকে হেনস্থা করতে চাইলে প্রতিপক্ষরা তার বাড়িতে মাদকদ্রব্য ফেলে যান। এরপর খবর দেয়া হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। এভাবে গোদাগাড়ী পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছেন এক যুবক।
এলাকাবাসী তাকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে তার এক বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এই যুবকের নাম সোহেল রানা (২৬)। তিনি মাদারপুর কাইয়াপাড়া মহল্লার মো. নঈমুদ্দিনের ছেলে। রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মহিষালবাড়ি মহল্লায় কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন মোফার বাড়ির সামনে থেকে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এ ঘটনায় কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন সোমবার গোদাগাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। এতে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- মাদারপুর মহল্লার মৃত মতিউর রহমানের স্ত্রী মুক্তি বেগম (৩৮), আবুল কাশেমের ছেলে আবদুর রহিম (২৬), শহিদুল ইসলামের ছেলে জয় (২২) এবং মিনা খাতুনের ছেলে নিরব আলী (২০)। তারা তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন বলে কাউন্সিলর জিডিতে উল্লেখ করেছেন। গ্রেপ্তার হওয়া সোহেলও এদের নাম বলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে দুইজন কাউন্সিলর মোফাজ্জলের বাড়ির ছাদে উঠে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ওপর স্কচটেপ মেরে দিচ্ছিলেন। আর বাড়ির সামনে পাহারায় ছিলেন সোহেল। প্রতিবেশি এক ব্যক্তি রাতে বাড়ির বাইরে গিয়ে এসব দেখতে পান। এ সময় তিনি সোহেলকে জাপটে ধরেন। তখন ছাদ থেকে লাফ দিয়ে অন্য দুইজন পালিয়ে যান। এরপর রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আটক সোহেলকে থানায় নিয়ে যায়। সোমবার দুপুরে তাকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ এমরানুল হকের সামনে হাজির করা হলে সোহেল নিজের দোষ স্বীকার করেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ এমরানুল হক তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। পরে পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠায়।
কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন মোফা বলেন, সম্প্রতি নিরবের মা মিনা খাতুন তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। এরপর থেকেই তিনি তাকে ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে আসছিলেন। আতঙ্কে গেল শুক্রবার তিনি বাড়িতে সিসি ক্যামেরা বসান। এরপর রাতে মিনারই লোকজন তার বাড়িতে মাদকদ্রব্য ফেলতে গিয়েছিল। সিসি ক্যামেরা দেখে তারা প্রথমে সেটির ওপর স্কচটেপ বসাচ্ছিল। তখনই এলাকাবাসী একজনকে আটক করে। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ে অন্য দুইজন পালিয়ে যায়।
কাউন্সিলর মোফাজ্জল তার জিডিতে উল্লেখ করেছেন, তার বাড়িতে মাদকদ্রব্য ফেলে দেয়ার প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও মিনা, মুক্তি, রহিম, জয় ও নিরব তাকে হুমকি দিয়েছেন, যে কোন মূহুর্তে তাকে ফাঁসানো হবে। এতে তিনি আতঙ্কিত। তিনি অভিযুক্তদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিনার বাড়ি ময়মনসিংহ। তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ময়মনসিংহে তার নামে মাদকের মামলা আছে। মাদক ব্যবসার সুবাদেই গোদাগাড়ীতে তার বিয়ে হয়। মিনার ভাই মুন্না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। আরেক অভিযুক্ত মুক্তির স্বামীও গোদাগাড়ীতে নিহত হয়েছেন বন্দুকযুদ্ধে। স্বামীর মৃত্যুর পর মুক্তি নিজেই এখন সামলাচ্ছেন মাদকের কারবার।
গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি হয়েছে তারা মাদকের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু মাদকসহ তাদের হাতেনাতে আটক করা যায় না। কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে একজন আটক হলেও তার কাছে মাদক পাওয়া যায়নি। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, যারা পালিয়ে গেছেন তাদের কাছে হেরোইন ছিল। কাউন্সিলরও তা দাবি করছেন। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ অনুসন্ধান করছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন