চীন ভারতের সাথে চলমান সীমান্ত বিরোধে গ্যালওয়ান ভ্যালি, হট স্প্রিংস, প্যাংগং হ্রদ এবং নাকু লা’তে কর্তৃত্ব লাভের পর উত্তরের দেপসাং এবং দক্ষিণের ডেমচকে নতুন সামরিক স্থাপনা তৈরি করেছে। চীনের উদ্দেশ্য, নতুন সামরিক স্থাপনার মাধ্যমে ভারতীয় সেনাকে বিতর্কিত সীমান্ত এলাকা থেকে দূরে হটিয়ে দেয়া। ৯৭২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেপসাং সমভ‚মি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৬ হাজার ফুট উঁচুতে, গালওয়ান উপত্যকার উত্তরে এবং মুরগো গ্রামের ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। দেপসাং চীন-ভারত সীমান্তের উত্তর-সেক্টরের অংশ এবং এর ২শ’ ৫৫ কিলোমিটার রাস্তাটি কারাকোরাম পাসের কাছাকাছি অঞ্চল দারবুক-শায়োক-মুরগো-দৌলত বেগ ওল্ডিকে যুক্ত করেছে বলে এর রাজনৈতিক তাৎপর্য অপরিসীম। এই রাস্তাটি ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এবং এ অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্রুত মোতায়েনের জন্য নির্মিত হয়েছিল। ভারত এর পশ্চিম অংশটি লাদাখ, অধিকৃত কাশ্মীরের (আইওকে) অংশ হিসাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং এর পূর্ব অংশটি এখন চীন অধিকৃত আকসাই চীনের অংশ।
সম্প্রতি, চীন তার সামরিক বাহিনীকে এলাকাটির ‘ওয়াই’ জংশন বা বাধা হিসাবে পরিচিত একটি অঞ্চলে মোতায়েন করেছে। ওয়াই জংশন অধিগ্রহণের ফলে দৌলত বেগ ওল্ডির বিমানবন্দরে এবং সিয়াচেন অঞ্চলে ভারতীয় প্রবেশাধিকার রোধ করবে। চীন এখন দেপসাং সমভ‚মির পশ্চিমে ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সাসের লা অঞ্চলটি দখলের চেষ্টা করতে পারে। এতে সাসোমা রোড থেকে সিয়াচেন পর্যন্ত একটি রাস্তা খোলার সুবিধা পাওয়া যাবে, যা ওয়াই জংশন ছাড়িয়ে আরও বিচরণযোগ্য হয়ে উঠবে। এরফলে এখন ভারত তার পূর্বের দাবিকৃত এবং টহল চালানো কয়েকশ’ বর্গকিলোমিটারে প্রবেশ করতে সক্ষম হচ্ছে না, যদিও দেশটি তার শক্তি প্রদর্শন করতে বিমানবাহিনীর সুখোই বিমান ও অ্যাপাচি হেলিকপ্টারে করে বিভিন্ন এলাকায় সৈন্য পরিচালনা করেছে এবং প্রতিরোধ ধরে রাখার জন্য ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ-আইটিবিপি এবং লাদাখ স্কাউটসের অতিরিক্ত ব্যাটালিয়নও মোতায়েন করেছে। চীন ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন দক্ষিণ লাদাখের (আইওকে) ডেমচোক অঞ্চলেও প্রবেশ করেছে। ডেমচোক দক্ষিণ-পূর্ব লাদাখের তহসিল নিয়োমের সর্বশেষ গ্রাম এবং এর ১৯ হাজার ৩শ’ ফুট উচ্চতার উমলিং পাস ডেমচোককে লেহের সাথে সংযুক্ত করেছে। এ গ্রামটিতে একটি বিশাল ভারতীয় সামরিক শিবির রয়েছে এবং এটি জাগাংয়ের চীনা গ্রামের কাছাকাছি অবস্থিত। এ অঞ্চলেও চীন তার সেনাবাহিনীকে সহায়তা দেয়ার জন্য যথাযথ অবকাঠামো তৈরি করেছে। চীনারা এখন কেবল দৌলত বেগ ওল্ডির রাস্তাই নয়, এর আকাশ পথকেও ভারতের জন্য হুমকির সম্মুখীন করেছে। প্রাথমিকভাবে এটি তথাকথিত এলএসি থেকে ১শ’ কিলোমিটার দূরে ছিল। চীনারা ৬টি আঙুলের মতো রাস্তা তৈরি করে এবং পুরো অঞ্চলের সাথে আকসাই চীনের সংযোগ স্থাপন করে বিষয়টি সমাধান করেছে। এই রাস্তাগুলির সাহায্যে চীন দ্রুত গতিতে লাদাখ জুড়ে তাদের স্থাপনাকে আরো শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।
ভারত এ হাইওয়ে অবরোধ করতে বিমানের মাধ্যমে বা বিশেষ বাহিনী নামিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে পারে। তবে চীনা সেনাবাহিনী পিএলএ গালওয়ান থেকে ডেমচোক পর্যন্ত পূর্ব লাদাখে ভারতীয় সেনা অবস্থানগুলোর চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলছে এবং দৌলত বেগ ওল্ডির কৌশলগত রাস্তা নিয়ন্ত্রণ করছে। স্পষ্টতই ভারত এখন চীনা চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছে এবং চীন তার দখলদারি কৌশলগুলি সীমানা নিয়ে দর কষাকষির কাজে ব্যবহার করবে। একই সাথে চীন ভারতের সেসব অঞ্চল দখল করেছে, ভারত চীনকে তা ধরে রাখতে অনুমতি দেবে। (বিদেশি সূত্র)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন