শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতে ২০ বছরে সাপের কামড়ে মৃত্যু ১২ লাখ

বিবিসি নিউজ | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

ভারতে গত বিশ বছরে ১২ লাখ মানুষ সাপের কামড়ে মারা গেছে বলে নতুন এক গবেষণার ফলাফলে জানা গেছে। গবেষণার জরিপে বলা হয়েছে সাপের কামড়ে মৃতের প্রায় অর্ধেকের বয়স ৩০ থেকে ৬৯-এর মধ্যে এবং এক চতুর্থাংশ শিশু। ভারতে সর্পদংশনে বেশির ভাগ মানুষ মারা যায় কোবরা (ভারতীয় গোখরা), রাসেলস ভাইপার এবং ক্রেইৎস (কালাচ) প্রজাতির সাপের কামড়ে। বাদবাকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে অন্যান্য অন্তত ১২টি বিভিন্ন প্রজাতির সাপের কামড়ে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় যেসব এলাকায় দ্রæত চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায় না। বর্ষাকালে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ সময় সাপ বাইরে বেরিয়ে আসে বেশি। আর সাপ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কামড় দেয় পায়ে।

ই-লাইফ নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত এ গবেষণাটি চালিয়েছিলেন যৌথভাবে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। ভারতে অসময়ে মৃত্যুর ওপর চালানো মিলিয়ন ডেথ স্টাডি নামে বিশাল এক জরিপ থেকেও তথ্য নেয়া হয়েছে এ গবেষণার কাজে।

রাসেলস ভাইপার ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় খুবই বিষধর প্রজাতির সাপ। এ অঞ্চলে এ সাপ দেখা যায় খুবই বেশি। এরা সাধারণত ইঁদুর জাতীয় প্রাণী খায়। কাজেই শহরাঞ্চলে এবং গ্রামেও মানুষের বাসার আশেপাশেই তাদের ঘোরাফেরা বেশি।

ভারতীয় ক্রেইৎ সাপ সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় না। কিন্তু রাতের বেলা তারা হিংস্র হয়ে ওঠে। এ সাপ দৈর্ঘে প্রায় পাঁচ ফুট ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।

ভারতীয় কোবরা বা গোখরা সাপ সাধারণত কামড়ায় অন্ধকার হওয়ার পর। গোখরার কামড়ে শরীরের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়। ফলে এ সাপ কামড়ালে সাথে সাথে জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন। জরিপে আরও দেখা গেছে, ২০০১ সালে থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সাপের কামড়ে মারা যাবার ৭০ শতাংশ ঘটনা ঘটেছে ভারতের আটটি রাজ্য- বিহার, ঝাড়খÐ, মধ্য প্রদেশ, ওড়িশা, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্র প্রদেশ, রাজস্থান এবং গুজরাটে।

বলা হয়, ভারতে মানুষের ৭০ বছর বয়স পুরো হবার আগে সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রতি ২৫০ জনে প্রায় একজনের। কিন্তু নতুন এ জরিপে বলা হচ্ছে, কোন কোন এলাকায় এই ঝুঁকি এখন বেড়ে প্রতি ১০০ জনে একজন হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন গ্রামে কৃষক স¤প্রদায়ের মানুষ। তারা বর্ষা মওশুমে সর্প দংশনের বড় ঝুঁকিতে থাকেন। তারা বলছেন, এসব এলাকায় ‘সচেতনতা বাড়ানো, শিক্ষা এবং কিছু সহজ পদ্ধতি শেখানোর’ কর্মসূচি নেয়া উচিত। তাদের ‘সাপ থেকে নিরাপদ’ থেকে কৃষিকাজ করার সহজ কিছু পদ্ধতি শেখানো সম্ভব, যেখানে তারা রবারের তৈরি বুট পরে মাঠে যেতে পারেন, হাতে গøাভস পরতে পারেন কৃষিকাজের সময় এবং ঝুঁকি কমাতে হাতে টর্চ রাখতে পারেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সাপের কামড়ের বিষয়টিকে এখন তারা ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার’ দিচ্ছে। সংস্থাটি বলছে, সাপের দংশন থেকে যেসব জটিলতা তৈরি হয়, তা বিচার করলে দেখা যায়. সাপে কামড়ানোর বিষয়টি ট্রপিকাল এলাকার রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উপেক্ষিত একটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

প্রতি বছর পৃথিবীতে ৮১ হাজার থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। প্রায় তিনগুণ মানুষ প্রাণে বেঁচে যান, কিন্তু সাপের কামড় থেকে স্থায়ীভাবে তারা নানা কারণে পঙ্গু হয়ে যান।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন