বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ওয়াছিলা নির্ধারণে সীমা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

বুযুর্গ ব্যক্তিদের তাদের নেক আমল ও গুণাবলীকে ওয়াছিলা না বানিয়ে সরাসরি তাদের কাছে আবেদন করা তাদেরকে বিপদ হতে মুক্তিদানকারী রূপে ধারণা করা শিরক।

শিরক সর্বতোভাবেই পরিত্যাজ্য ও হারাম। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ক. নিশ্চয়ই আল্লাহকে ছাড়া অন্য যাদেরকে আহবান করো, তারা সকলে একত্রিত হয়ে চেষ্টা করলেও একটা মশা, মাছি পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারবে না। (সুরা হাজ্জ: আয়াত ৭৬)। খ. হে নবী, আপনি বলুন, আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদেরকে তোমরা প্রভ‚ মনে করে আহবান করো (মনোবাসনা পূর্ণ করা, বিপদ হতে মুক্তি দেওয়ার জন্য) আসমান ও জমিনে তারা বিন্দুমাত্র ক্ষমতা ও আধিপত্য রাখে না, আসমান-জমিনে তার কোনো অংশী-শরিক নেই। আর আল্লাহর বিপক্ষে তার কোনো সাহায্যকারী নেই। (সুরা সাবা: আয়াত ৭২)।

গ. আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যে সকল উপাস্যকে ডাকাডাকি করছ, তাদের সামান্যতম ক্ষমতাও নেই। যদি তোমরা তাদের আহবান করো, তারা তোমাদের আহবান শুনছে না। (যদি তোমাদের দাবি অনুসারে) তারা শোনেও, তবে তোমাদের আহবানে সাড়া দেবে না বরং কেয়ামতের দিন তোমাদের শিরককে তারা অস্বীকার করবে, আর যে তোমাকে মহান খবরদাতার মতো কোনো খবর দিতে পারবে না। (সুরা ফাতির: আয়াত ১৪-১৫)।

ঘ. তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কোনো উপাস্যকে ডেকো না, যে তোমার লাভ-ক্ষতি করতে পারে না। এরপরও যদি তুমি এরূপ করো, তাহলে অবশ্যই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি আল্লাহ তোমার কোনো ক্ষতি করেন, তবে তিনি ব্যতীত কেউ তা থেকে উদ্ধারকারী নেই। যদি তোমার ব্যাপারে তিনি কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তবে আল্লাহর দয়াকে কেউ ফিরিয়ে দিতেও পারবে না। (সুরা ইউসুফ: আয়াত ১০৬-১০৭)।

ঙ. আসমান-জমিনের প্রভুত্ব একমাত্র আল্লাহর, তিনি যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করেন, তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাদান করেন, আর যাকে ইচ্ছা পুত্রদান করেন। অথবা যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। অবশ্যই তিনি সর্বজ্ঞ ও সর্ব বিষয়ের ওপরই ক্ষমতাবান। (সুরা শুরা: আয়াত ৪৯-৫০)।

চ. যদি তোমরা তাদেরকে (তোমাদের ঘোষিত রবকে) ডাক, তারা তোমাদের আহবান শুনবেই না; (ধরে নাও) যদি তারা শোনেও, তবুও আহবানে সাড়া দেবে না। (সুরা আল ফাতির: আয়াত ১৪)।

ছ. এ প্রসঙ্গে শাহ ওয়ালীউল্লাহ মোহাদ্দেসী দেহলভী রাহ. বলেন, শিরকের মূল কথা হলো, কোনো বুযুর্গ বা মহৎ ব্যক্তি সম্পর্কে এরূপ বিশ্বাস রাখা যে, যখন তার থেকে অপূর্ব আশ্চর্য কোনো ক্রিয়াকলাপ প্রকাশ পায়, যা মানুষ থেকে সংঘটিত হওয়ার কথা নয়, বরং তা একমাত্র আল্লাহপাকের জন্য নির্ধারিত, তবে তখন যদি কেউ এ কথা বলে বা বিশ্বাস করে যে, উক্ত বুযুর্গ সিফাতে কামালের গুণে (আল্লাহর গুণ) গুণান্বিত হওয়ার কারণেই তার দ্বারা এরূপ কাজ সম্ভব হয়েছে অথবা এমন মনে করে যে, আল্লাহপাক কাউকে উলুহিয়্যাতের ভ‚ষণ দান করেন, অথবা এমন বিশ্বাস করে যে, বুযুর্গ ব্যক্তিটি স্বয়ংসম্প‚র্ণ হয়ে গেছে, সুতরাং কারও এ ধরনের ভ্রান্ত বিশ্বাসই হলো শিরক। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ: খন্ড ১, পৃ. ১৪৪)।

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহপাকের জাত, সিফাত, আসমাউল হুসনা, পুণ্যবানদের নেক আমল, যথা- সালাত, সাওম, সাদাকাহ, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত, গুনাহ হতে বিরত থাকা ইত্যাদিকে তাওয়াক্কুল করা জায়েজ আছে। এ ক্ষেত্রে ‘হাদিসুল গার’কে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। এতে উল্লেখ আছে, তিন ব্যক্তি ঝড়-বৃষ্টিকবলিত হয়ে পাহাড়ের এক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করে। পাহাড় হতে পতিত এক প্রস্তর খন্ডে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তারা নিরুপায় হয়ে তাদের নেক আমলের ওছিলায় দোয়া করার ফলে আল্লাহপাক তাদের মুক্তি দান করেন। (সহীহ বুখারী: খন্ড ২, পৃ. ৮৮৩)।

এ হাদিসের দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের জন্য মুস্তাহাব হলো বিপদের সময়ে ও ইস্তিসকা ইত্যাদির সময়ে নিজের সৎ আমল স্মরণ করে দোয়া করা, আল্লাহর সামনে উক্ত নেক আমলকে ওয়াছিলা হিসেবে পেশ করা। হাদিসে উল্লেখিত ব্যক্তিত্রয় এমনটি করেছে বলেই আল্লাহপাক তাদের দোয়া কবুল করেছেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) উক্ত ব্যক্তিদের মর্যাদা ও ফজিলত বর্ণনা প্রসঙ্গেই এই ঘটনাটির কথা উল্লেখ করেছেন। (সহিহ মুসলিমের নবভী শরাহ: খন্ড ২, পৃ. ৩৫৩)।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন