বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

প্রতিবেশীর অধিকার

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইসলামের বিধান অনুাযায়ী প্রতিবেশীর হক বা অধিকারসমূহ হচ্ছে: ১. কোনো প্রতিবেশী বিপদগ্রস্ত হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করলে সাধ্যানুসারে তাকে সাহায্য করা কর্তব্য।

নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে অন্য কোনো মোমেন ব্যক্তিকে একটি বিপদ থেকে উদ্ধার করবে, আল্লাহ তাকে পরকালের মহাবিপদসমূহের কোনো একটি হতে নিরাপদ রাখবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যতক্ষণ কোনো বান্দা অন্য কোনো বান্দাকে (বিপদে) সাহায্য করার কাজে লিপ্ত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তায়ালাও সেই সাহায্যকারী বান্দার প্রতি সাহায্য সহায়তার হস্ত প্রসারিত রাখেন।’

২. কোনো প্রতিবেশী রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে তার খোঁজখবর নেয়া এবং সম্ভবপর হলে কিছু সময় তার পরিচর্যায় ব্যয় করা উচিৎ। ৩. কোনো প্রতিবেশী দাওয়াত করলে, শরীয়ত বিরুদ্ধ কাজে জড়িত হওয়ার আশঙ্কা না থাকলে সেই দাওয়াত সাদরে গ্রহণ করা সৌজন্য।

৪. কোনো জিনিস কিনে আনলে কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি হতে পাঠানো হলে তার কিছু অংশ প্রতিবেশীদেরকেও দেয়া উচিৎ। ৫. নিজ ঘরে কোনো উৎকৃষ্ট খাবার রান্না করলে তা হতে প্রতিবেশীদের জন্য সামান্য পরিমাণ হলেও প্রেরণ করা উচিৎ। ৬. প্রতিবেশীদের ঘরের সম্মুখে কোনোরূপ ময়লা বা আবর্জনা নিক্ষেপ না করা উচিৎ। ৭. প্রতিবেশীদের ঘরে বা তার চলাচলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এরূপ উঁচু করে নিজের ঘর নির্মাণ না করা।

৮. প্রতিবেশীদের কোনো দোষ থাকলে তার চর্চা না করে তা গোপন রাখা উচিৎ। ৯. কান কথা শুনে বা চোগলখোরের কুমন্ত্রণায় উদ্বুদ্ধ না হয়ে, তার কথার সত্যতা যাচাই না করে, কোনো প্রতিবেশীর সাথে মনোমালিন্য কিম্বা ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত হওয়া সঙ্গত নয়। ১০. মূর্খ, অজ্ঞ ও দুষ্ট প্রকৃতির প্রতিবেশীর সাথে আত্মসম্মানের খাতিরে বিনম্র আচরণ করার সাধ্য থাকলে তাকে সৎপথে আনার চেষ্টা করা উচিৎ।

১১. কোনো ব্যাপারে কারো সাথে বিরোধ দেখা দিলে শান্তিপূর্ণভাবে তা মীমাংসা করার চেষ্টা অথবা ধৈর্য ধারণ করা উচিৎ। ১২. প্রতিবেশীদের শিশু ছেলে-মেয়েদের আদর-যতœ করা উচিৎ। ১৩. নিজের কোনো কাজ দ্বারা প্রতিবেশীর কোনো অনিষ্ট সাধন উচিৎ নয়। ১৪. কোনো দরিদ্র প্রতিবেশীর মৃত্যু হলে তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা কর্তব্য।

হজরত ওমর (রা.) একদা মিম্বরে উঠে বললেন, হে লোক সকল, তোমরা বিনয়ী হতে চেষ্টা কর, আমি হজরত রাসুলে করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহই তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। যে নিজেই নিজেকে ছোট বলে মনে করে কিন্তু লোকে তাকে মহৎ বলে ভক্তি করে; কিন্তু যে অহংকারী সে নিজেকে নিজেই বড় বলে মনে করলেও লোক চোখে সে নিতান্ত হেয় বলে প্রতিপন্ন হয়। তার পরিণাম এতদূর শোচনীয় হয়ে দাঁড়ায় যে, ক্রমে সে সকলের নিকট শূকর-কুকুর অপেক্ষাও ঘৃণ্য বলে বিবেচিত হয়।’ (মেশকাত)

নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘সকল মুসলমানই একটি দেহ স্বরূপ, যদি তার চোখে বেদনা উপস্থিত হয় তবে, তাতে তার সমস্ত দেহই যন্ত্রণায় অধৈর্য্য হয়ে উঠে এবং যদি তার মস্তকে বেদনা উপস্থিত হয় তাতেও তার সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ বেদনাযুক্ত হয়ে পড়ে।’

হজরত ওমর (রা.)-এর খেলাফতের সময় দীন-দরিদ্রের প্রতি অনুগ্রহের ব্যবস্থা থাকলেও যাতে অলস এবং ভিক্ষুকের দল বৃদ্ধি না পায় এবং কেবলমাত্র পরের ওপর নির্ভর করে খাওয়ার প্রথা যাতে লোক সমাজে বিস্তার হয়ে না পড়ে, তার প্রতি তিনি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
তোফাজ্জল হোসেন ১২ জুলাই, ২০২০, ১:৩০ এএম says : 0
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদাচরণ করা, তাদের খোঁজখবর নেওয়া, প্রয়োজন পূরণ করা সরাসরি আল্লাহতায়ালার নির্দেশ।
Total Reply(0)
সাকা চৌধুরী ১২ জুলাই, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
প্রতিবেশী প্রসঙ্গে ইসলাম এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে, কোনো প্রতিবেশী যদি অমুসলিমও হয় তবু তার প্রতি উদার হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
Total Reply(0)
জোবায়ের আহমেদ ১২ জুলাই, ২০২০, ১:৩১ এএম says : 0
প্রতিবেশীর দাওয়াত কবুল করা। প্রতিবেশী ধনী হোক আর গরিব, সে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত কবুল করা উচিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কাউকে খাবারের জন্য দাওয়াত করা হয় তখন সে যেন তাতে সাড়া দেয়। অতঃপর ইচ্ছা হলে সে খাবে, ইচ্ছা না হলে না।’ মুসলিম।
Total Reply(0)
গাজী ওসমান ১২ জুলাই, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
প্রতিবেশী। মানব সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ফলে ইসলামে প্রতিবেশীর হককে অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জিবরীল (আ.) আমাকে প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে এত বেশি তাকিদ করেছেন যে, আমার কাছে মনে হয়েছে না জানি প্রতিবেশীকে মিরাছের অংশিদার বানিয়ে দেয়া হয়। (দ্র.সহীহ বুখারী ৬০১৪; সহীহ মুসলিম ২৫২৪)
Total Reply(0)
কামাল ১২ জুলাই, ২০২০, ১:৩২ এএম says : 0
প্রতিবেশী বলতে মুসলিম, কাফের, নেক বান্দা,ফাসেক, বন্ধু, শত্রু,পরদেশী, স্বদেশী, উপকারী, ক্ষতিসাধনকারী, আত্মীয়, অনাত্মীয়, নিকটতম বা তুলনামূলক একটু দূরের প্রতিবেশী সবাই অন্তর্ভুক্ত।
Total Reply(0)
আবু সাইদ ৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:১৪ পিএম says : 0
রফিক সাহেবের প্রতিবেশি মারা যায়।পূর্বকার বিবাদের কারণে তিনি প্রতিবেশির জানাযায় অংশগ্রহণ করেন নি।তাহলে প্রতিবেশির হক্বসমূহ কী? রফিক সাহেবের কাজটির মূল্যায়ন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন