বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আদালতে আত্মসমর্পণের চেষ্টা সাহেদের!

আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন ঘনিষ্ঠ তিন আইনজীবী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

টিভি অন করলেই ভেসে উঠতো যার চেহারা। সরকারি দফতর, মন্ত্রী-সচিবদের খাস কামরায় যার দেখা মিলতো যখন-তখন। নীতি নির্ধারকদের অন্ধর মহলে যার যাতায়াত ছিলো ডাল-ভাতের মতো। গত ৫ জুলাইও যাকে দেখা গেছে গুলশানের হাসপাতালে- সেই জ্বলজ্যান্ত মানুষটি নিমিষেই হাওয়া! কোথাও মিলছে না তার সন্ধান। র‌্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা হন্য হয়ে খুঁজছে তাকে। ঘটনার পর সপ্তাহ ঘুরে এলেও যার টিকিটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাহলে সময়ের সেই আলোচিত ‘হঠাৎ বুদ্ধিজীবী’ সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদ এখন কোথায়? বিদ্যমান করোনা-বাস্তবতাকে ছাপিয়ে এ প্রশ্ন এখন জনমনে। সাহেদ কি দেশেই আছেন? নাকি কোনো হোমরাচোমরার আশ্রয়ে দেশেই আত্মগোপন করে আছেন? নাকি আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী ইতোমধ্যেই তাকে নিজেদের করায়ত্তে নিয়ে নিয়েছে? শুধুমাত্র গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা সময়ের ব্যাপার মাত্র? এসব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে কৌতুহলি মানুষের মনে। তাকে নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনাও। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিনই তাকে গ্রেফতারের আশাবাদ ব্যক্ত করেই চলেছেন।

এদিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ভিন্ন দুটি সূত্র জানিয়েছে, সাহেদ শেষ পর্যন্ত আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি ঘনিষ্ঠ তিনজন আইনজীবীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তারা তাকে আইনি পরামর্শ দিচ্ছেন। তাদের পরামর্শে দুয়েক দিনের মধ্যেই আত্মসমর্পণ করতে পারেন সাহেদ। এমন নিশ্চিত তথ্য পেয়ে ঢাকা জেলা আদালত এবং হাইকোর্টে কড়া গোয়েন্দা নজরদারি বসানো হয়েছে। অন্যদিকে একটি বেসরকারি সূত্র জানিয়েছে, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালালেও এসব বাহিনীর অভ্যন্তরে থাকা সাহেদের শুভাকাঙ্খী ব্যক্তিরা গ্রেফতার এড়ানোর বিষয়ে সহযোগিতা করছেন। তাদের সহযোগিতায় তিনি আদালতে আত্মসমর্পণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আদালত সূত্র জানায়, করোনা প্রকোপে উচ্চ আদালতে আগাম জামিন বন্ধ রয়েছে। ভার্চুয়াল আদালতে শুধু কারাগারে থাকা আসামিদের জামিনসহ জরুরি বিষয় শুনানি চলছে। ভার্চুয়াল আদালতকে আগাম জামিন প্রদানের ক্ষমতা দিতে আইনজীবীরা দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। যদিও গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রাপ্ত আসামিদের আত্মসমর্পণের জন্য সম্প্রতি আদেশ জারি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসারে গত ৫ জুলাই থেকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আসামি আত্মসমর্পণের আবেদন গ্রহণ করছে বিচারিক আদালতগুলো। সাহেদ চেষ্টা করছেন এ প্রক্রিয়ায় আত্মসমর্পণের।
সুপ্রিম কোর্ট বারের অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম বলেন, যেকোনো মানুষেরই অধিকার রয়েছে আইনের আশ্রয় লাভের। সে ক্ষেত্রে সাহেদও সম্মানজনক পন্থা হিসেবে আদালতের মাধ্যমে আত্মসমর্পণের সুযোগ নিতে পারেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রীর বক্তব্যেও সাহেদ আত্মসমর্পণ করতে পারেন এমন প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে।

প্রসঙ্গত টিভি টকশো’র মাধ্যমে হঠাৎ বুদ্ধিজীবী বনে যাওয়া সাহেদুল করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করে আলোচনায় আসেন। তার প্রতিষ্ঠিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দিয়েছে র‌্যাব। সাহেদসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪০৬/৪১৭/৪৬৫/৪৬৮/৪৭১ ও ২৬৯ ধারার দায়ের করা হয়েছে মামলা। গত ৭ জুলাই দায়ের করা এ মামলায় ইতোমধ্যেই ৭ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সাহেদসহ বাকিরা এখনও পলাতক। এখন এক এক করে প্রকাশিত হচ্ছে কথিত বুদ্ধিজীবী মোহাম্মদ সাহেদের প্রতারণা এবং নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের তথ্য। করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঘটনাকে ছাপিয়ে এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ হয়ে উঠেছে সাহেদ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন