শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

৮৬ বছর পর শোনা গেল আজানের ধ্বনি

ইস্তাম্বুলের হাইয়া সোফিয়া

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

বিশ্বখ্যাত সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটিকে মসজিদে রূপান্তরে কোন বাধা নেই- তুরস্কের আদালত থেকে এ ধরনের রায় পাবার পরই ইস্তাম্বুলের হাইয়া সোফিয়ায় আজান দেয়া হয়েছে। এর ফলে এই স্থানটিতে দীর্ঘ ৮৬ বছর পর ধ্বনিত হল সুমধুর আজানের ধ্বনি। এর আগে সাবেক এই গির্জাকে জাদুঘরে পরিণত করা ঠিক ছিল না বলে রায় দিয়েছে তুর্কী আদালত। এর পরেই তুরস্কের ইসলামপন্থী সরকারের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান এটিকে মসজিদ বানানোর এক আদেশে সই করেছেন।

দেড় হাজার বছরের পুরনো হাইয়া সোফিয়া এক সময় ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা, পরে তা পরিণত হয় মসজিদে, তারও পর একে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলছেন, আদালতের রায়ের পর নামাজ পড়ার জন্য হাইয়া সোফিয়াকে খুলে দেয়া হবে। হাইয়া সোফিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। টুইটারে এক পোস্টে জনাব এরদোগান জানান, হাইয়া সোফিয়ার সম্পত্তি ‘দিয়ামাত’ বা তুর্কী ধর্মীয় বিষয়ক দফতরের হাতে সোপর্দ করা হবে। এরপরই হাইয়া সোফিয়াতে প্রথমবারের মত আজান দেয়া হয়। সরকার সমর্থক ‘হাবার টিভি’সহ অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলে এই দৃশ্য স¤প্রচার করা হয়। হাইয়া সোফিয়ার ইতিহাস : বসপরাস প্রণালীর পশ্চিম পাড়ে ইস্তাম্বুলের ফাতিহ এলাকায় গম্বুজশোভিত এই বিশাল ঐতিহাসিক ভবনটি খুব সহজেই দর্শকদের নজর কাড়ে। সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ানের আদেশে এ হাইয়া সোফিয়া নির্মাণ শুরু হয়েছিল ৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ইস্তাম্বুল শহরের নাম তখন ছিল কনস্টান্টিনোপল, যা ছিল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী - যাকে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যও বলা হয়। এ সুবিশাল ক্যাথিড্রাল তৈরির সময় তখনকার প্রকৌশলীরা ভ‚মধ্যসাগরের ওপার থেকে নির্মাণসামগ্রী নিয়ে এসেছিলেন।

হাইয়া সোফিয়া নির্মাণ শেষ হয় ৫৩৭ সালে। এখানে ছিল অর্থডক্স চার্চের প্রধানের অবস্থান। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজকীয় অনুষ্ঠান, রাজার অভিষেক ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হতো এখানেই। প্রায় ৯০০ বছর ধরে হাইয়া সোফিয়া ছিল পূর্বাঞ্চলীয় অর্থডক্স খ্রিষ্টান ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু। অবশ্য মাঝখানে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে একটি সংক্ষিপ্ত কালপর্ব ছাড়া, যখন চতুর্থ ক্রুসেডের সময় ইউরোপের ক্যাথলিকরা এক অভিযান চালিয়ে কনস্টান্টিনোপল দখল করে নেয়। তারা হাইয়া সোফিয়াকে একটি ক্যাথলিক ক্যাথিড্রালে পরিণত করেছিল।

কিন্তু ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের অটোমান সাম্রাজ্যের দখলে চলে যায় কনস্টান্টিনোপল। এর নতুন নাম হয় ইস্তাম্বুল। চিরকালের মত অবসান হয় বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের। হাইয়া সোফিয়ায় ঢুকে বিজয়ী সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ নির্দেশ দেন এটাকে সংস্কার করে একটি মসজিদে পরিণত করতে। তিনি এ ভবনে প্রথম শুক্রবারের নামাজ পড়েন। তার কয়েকদিন আগে অভিযানকারী বাহিনী এখানে ধ্বংসলীলা চালায়।

অটোমান স্থপতিরা হাইয়া সোফিয়ার ভেতরের অর্থডক্স খ্রিষ্টান ধর্ম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতীক-চিহ্নগুলো সরিয়ে ফেলেন বা পলেস্তারা দিয়ে ঢেকে দেন। ভবনের বাইরের অংশে যোগ করা হয় উঁচু মিনার। ইস্তাম্বুলে ১৬১৬ সালে ব্ল-মস্ক বা নীল মসজিদ নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত হাইয়া সোফিয়াই ছিল শহরের প্রধান মসজিদ। নীল মসজিদসহ এ শহরের এবং বিশ্বের অন্য বহু মসজিদের নির্মাতাদের অনুপ্রাণিত করে এর স্থাপত্য।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৮ সালে শেষ হলে অটোমান সাম্রাজ্য পরাজিত হয়। বিজয়ী মিত্রশক্তিগুলো তাদের ভ‚খন্ডকে নানা ভাগে ভাগ করে ফেলে। তবে ওই সাম্রাজ্যের অবশেষ থেকেই জাতীয়তাবাদী তুর্কী শক্তির উত্থান হয়। তারা প্রতিষ্ঠা করে আধুনিক তুরস্ক। তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক আদেশ দেন, হাইয়া সোফিয়াকে একটি জাদুঘরে পরিণত করতে। হাইয়া সোফিয়াকে ১৯৩৫ সালে সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পর এটি তুরস্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটনস্থলে পরিণত হয়েছে।

এই হাইয়া সোফিয়া এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
তুরস্কের ভেতরে এবং বাইরে বহু গোষ্ঠীর জন্য হাইয়া সোফিয়ার ১৫০০ বছরের ইতিহাস ব্যাপক ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। ১৯৩৪ সালে করা এক আইনে এই ভবনটিতে ধর্মীয় প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু ইসলামপন্থী ও ধার্মিক মুসলিমরা দাবি করেন যে, হাইয়া সোফিয়াকে আবার মসজিদে পরিণত করা হোক। তারা ওই আইনের বিরুদ্ধে ভবনটির বাইরে বিক্ষোভও করেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের বক্তব্যে এ দাবির প্রতিধ্বনি শোনা যায়। গত বছর স্থানীয় নির্বাচনের আগে এক প্রচার সভায় দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, হাইয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে পরিণত করা ছিল এক ‘বিরাট ভুল’। এরপর তিনি তার সহযোগীদের নির্দেশ দেন কীভাবে ভবনটিকে মসজিদে পরিণত করা যায় তা খতিয়ে দেখতে।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের অর্থডক্স খ্রিষ্টানরা হাইয়া সোফিয়াকে মসজিদের রূপান্তরের বিরোধিতা করে আসছে। তাদের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা আদালতে স্থিতাবস্থা চেয়ে আবেদন করেছিল যা গত শুক্রবার খারিজ হয়ে গেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু জোর দিয়ে বলেন, এ ভবনটির অবস্থান তুরস্কের ভ‚খন্ডে, তাই এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাইরের কিছু বলার থাকতে পারে না। তুরস্কের টুয়েন্টিফোর টিভিকে জনাব কাভুসোগলু বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশে আমাদের সম্পদ নিয়ে কী করছি তা আমাদের বিষয়’। সূত্র : বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Abdul Awal ১২ জুলাই, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
Massallah Alhumdulillah Allahuakbar
Total Reply(0)
Shamsuddin Noman ১২ জুলাই, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ
Total Reply(0)
Salman Ahamad ১২ জুলাই, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ গতকাল খবর শুনে খুশি হলাম ।তুর্কি মহাবীর আরতুগ্রুল গাজী এর বংশধর ও উনার ছেলে উসমান গাজী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত উসমানি সাম্রাজ্য সপ্তম সুলতান মোহাম্মদ ফাতিহ এর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদ ।অনেক বছর পর এখন আবার মসজিদে রূপান্তরিত হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ ধন্যবাদ রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
Total Reply(0)
Mohammed Sumon Mollah ১২ জুলাই, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ এরদোগানের নেক হায়াত দান করুন।
Total Reply(0)
জান্নাতুল নাঈম মনি ১২ জুলাই, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
গ্রেট! নেতা যোগ্য হলে দেশ ও সমাজ তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে পারে। আর নেতা যদি আমাদের গুলার মতন হয় তাহলে আনা তো দূরে থাক যা আছে তাও হারিয়ে বসে থাকবে।
Total Reply(0)
MD Samiun Islam ১২ জুলাই, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
যেই সেকু ও মেকুরা আজ কান্না করতেছে তাদের জানা উচিত সেই সময়কার যুদ্ধনীতি। আর কনস্ট্যান্টিনোপল বিনা রক্তপাতে বিজয় হয়নি অনেক রক্তক্ষয়ী হয়েছিলো, কিন্তু ২য় মুহাম্মদ ফাতিহে ইসলামের উদারতায় সেখানকার খ্রিস্টানদের বসবাসের সুযোগ ও গীর্জাটা ক্রয় করে মসজিদ করেছিলেন
Total Reply(0)
Kawsar Shah ১২ জুলাই, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ যেন এই আযান কেয়ামত পর্যন্ত জারি রাখে।।
Total Reply(0)
আলোর পথে ১২ জুলাই, ২০২০, ১:১৭ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ঔদেশের মানুষগুলোকে হেদায়েত দান করুন।আমিন।
Total Reply(0)
M.D. JAMAL UDDIN ১২ জুলাই, ২০২০, ৩:২৯ এএম says : 0
Alhamdulillah silsila jari rakio allah
Total Reply(0)
Abu Zafor Mohammed Nurullah ১২ জুলাই, ২০২০, ৮:৪৮ এএম says : 0
Subhanallah. Long live Sir, Erdogan. Allah will be blessing him.
Total Reply(0)
Jons ১২ জুলাই, ২০২০, ১০:৩৯ এএম says : 0
এই গির্জা যে সুলতান ক্রয় করেছিল সেটা বললেন না? গির্জা এখনও অহরহ বেচা কেনা হয়। সংবাদ সঠিকভাবে প্রচার করুন
Total Reply(0)
Md.Murad Hossain ১২ জুলাই, ২০২০, ১১:২১ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ গতকাল খবর শুনে খুশি হলাম ।তুর্কি মহাবীর আরতুগ্রুল গাজী এর বংশধর ও উনার ছেলে উসমান গাজী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত উসমানি সাম্রাজ্য সপ্তম সুলতান মোহাম্মদ ফাতিহ এর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদ ।অনেক বছর পর এখন আবার মসজিদে রূপান্তরিত হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ ধন্যবাদ রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন