বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দ্বিতীয় দফা বন্যায় আরো অবনতি

মানুষ আশ্রয় নিচ্ছে উঁচু বাঁধে ও বিভিন্ন শিবিরে ভাঙনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দুর্যোগসহনীয় বাড়ি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৭ এএম

অব্যাহত বৃষ্টি আর ভারতের ঢলে দেশে দ্বিতীয় দফা বন্যার আরও অবনতি হচ্ছে। প্রায় সবগুলো প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন উঁচু বাঁধে বা আশ্রয় শিবিরে। পানি বৃদ্ধিতে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে কুড়িগ্রামের উলিপুরে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর দেয়া দুর্যোগসহনীয় বাড়িটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। যমুনা-তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ধরলা, পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির দ্রæত বিস্তার ঘটছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের আরও কিছু জেলা বন্যা কবলিত হতে পারে। সব মিলিয়ে এবার ২৩-২৪টি জেলা বন্যা কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বৃষ্টি থাকবে আরও দু’দিন চারদিন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজধানীসহ দেশের উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ১৪ জুলাই পর্যন্ত টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টির পরিমাণ কমে এলেও পাঁচদিন বিরতি দিয়ে ফের বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আবহাওয়ার সর্বশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে। সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সাধারণত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি বাড়লে দেশের ২০ থেকে ২৪টি জেলায় বন্যা দেখা দেয়। এবারও এই চারটি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ২৩ থেকে ২৪ জেলা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

নতুন করে পানি বৃদ্ধির ফলে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। প্রমত্তা মেঘনার ভাঙনে চাঁদপুরে বিলীন হয়ে গেছে নদীর পশ্চিম পাড়ের অর্ধশত বাড়িঘর। শরীয়তপুরের শিবচরে পদ্মার ভাঙন তীব্র হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলা সদরে যমুনা নদীর পানির প্রবল স্রোতে একটি বাঁধের ৭০ মিটার নদীতে ধসে গেছে। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলায়ও যমুনা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ নিচ্ছে। কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর ভাঙন নিঃস্ব হচ্ছে নদী তীরবর্তী মানুষ।

বন্যা মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ খবর রাখছেন ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। এর মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে বন্যা দুর্গত এলাকার সব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। এছাড়া জেলা প্রশাসকরাও নিজ নিজ জেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছেন।

সুনামগঞ্জ থেকে হাসান চৌধুরী জানান, অব্যাহত পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জনবসতিতে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার। পানি বৃদ্ধির ফলে তলিয়ে গেছে সব রাস্তাঘাট। সুনামগঞ্জ জেলার সাথে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও বন্যার পানিতে ছাতক-সিলেট সড়কে সকাল থেকে যান চলাচল বন্ধ হয়েগেছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের সবক’টি রাস্তা ডুবে গিয়ে উপজেলা সদরে বাসাবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। একই অবস্থা তাহিরপুর উপজেলায়ও।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ভরতে চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টিপাত আারও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও সংস্থাটি জানিয়ছে। এতে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের নির্দেশে জেলা উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এক সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলগুলো প্রস্তুত রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, বর্ষা ও উজানের পানির ঢলে টইটম্বুর চাঁদপুর বেষ্টিত পদ্মা ও মেঘনা নদী। বইছে তীব্র স্রোত। বন্যার পানির ঢল আর তীব্র স্রোতে পদ্মা-মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। এক কথায় চলতি বর্ষায় চাঁদপুরে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে পদ্মা ও মেঘনার ভাঙনে নদীর দু’পাড়ে অসংখ্য ঘর-বাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে হাইমচর রক্ষা বাঁধ ও চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুরাণবাজার এলাকা। করোনাভাইরাসের পাশাপাশি অব্যাহত নদী ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন পদ্মা-মেঘনা পাড়ের মানুষ।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ভারি বর্ষণ ও ভারতের ঢলে কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নুনখাওয়া পয়েন্টে ৫সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় ১৯টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্র রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে ১১টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে হাফিজুর রহমান সেলিম জানান, তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ২ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী অববাহিকার বিস্তীর্ণ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট ও যমুনা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ১৩টি পয়েন্টে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন