শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চামড়ায় সিন্ডিকেট শঙ্কা

এবারও কোরবানির চামড়ার টাকা থেকে বঞ্চিত হতে পারে গরিব জনগোষ্ঠী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২০, ১২:৫১ এএম

কোরবানির পশুর চামড়ার হকদার এতিমখানা ও মাদরাসার গরীব ছাত্রছাত্রী এবং মিসকিন প্রকৃতির মানুষ। যুগের পর যুগ ধরে যারাই কোরবানি দেন তারাই হয় মাদরাসা ও এতিমখানায় চামড়া দেন; নয়তো বিক্রি করে সে টাকা এতিম ও মিসকিনদের দিয়ে দেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই এতিম মিসকিনদের হকের ওপর থাবা বসায় স্থানীয় রাজনীতিকরা। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-পাতিনেতারা প্রভাব খাটিয়ে কম দামে চামড়া কিনে বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হন। কিন্তু গতবছর তাদের টেক্কা দিয়েছে ট্যানারি মালিক ও ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা।

গতবছর নিজেরা সিন্ডিকেট করে চামড়া না কেনায় হাজার হাজার চামড়া পুঁতে রাখা হয়। কেউ বা সামান্য মূল্যে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা সচিবালয়ে মন্ত্রীর রুমে বসে চামড়ার দাম নির্ধারণ করেন। ফলে চামড়ার হকদার ফকির-মিসকিন ও এতিমরা টাকা না পেলেও চামড়া ব্যবসায়ীরা ঠিকই কোটি কোটি টাকা লাভ করেন। এবারও ঈদের আগেই চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেটের শঙ্কা প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগীরা। তাদের বক্তব্য সরকার আগে থেকেই সিন্ডিকেটের বিষয়ে নজর না রাখলে এবারও চামড়া নিয়ে খেলা হবে; এতিমরা বঞ্চিত হবে।

গত বছর কোরবানি পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম না পেয়ে লাখ লাখ পিস চামড়া ধ্বংস করা হয়। যার বেশির ভাগ মাটিচাপা দেয়া হয়। কিছু ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে। চামড়ার মূল্য না থাকায় স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে দেশের চামড়ার বাজার। ফকির-মিসকিনদের বঞ্চিতের পাশাপাশি চামড়া শিল্পে প্রায় হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গত বছর ৩০০-৪০০ টাকায় কিনে সে চামড়া ৫০ টাকা বিক্রি করতে পারেনি। করোনার কারণে চামড়া নিয়ে এবারো সেই সঙ্কট আরো বাড়ার শঙ্কা করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী, কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা। স¤প্রতি চামড়া শিল্প রক্ষায় গঠিত টাস্কফোর্সের সভায় এ শঙ্কার কথা জানান তারা।

সূত্র জানায়, কোরবানির পশুর চামড়ার সঙ্কট উত্তরণ এবং চামড়া শিল্প রক্ষায় গত বছর অক্টোবরে সরকারের চারটি মন্ত্রণালয় ও বেশ কয়েকটি বিভাগের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় এবারো কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা করেন সরকারের তিন মন্ত্রী এবং এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। সভায় একগুচ্ছ প্রস্তাব ও কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ছিল ঈদের এক মাস আগে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে ব্যাপকভাবে প্রচার, এক মাস আগে ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের জন্য চামড়া কেনার প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় করা, প্রয়োজনে সরকার বাজার থেকে অবিক্রিত চামড়া কিনে গুদামজাত করা এবং কাঁচা চামড়া রফতানি করা যায় কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। ঈদের বাকি আছে আর মাত্র ১৮ থেকে ২০ দিন। অথচ সেই সভার একটি সিদ্ধান্ত এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অর্থ ছাড়ের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হলেও কবে নাগাদ সেই টাকা পাওয়া যাবে বা কারা পাবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন ট্যানারি মালিকরা।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ডেপুটি সেক্রেটারি মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার চামড়া নিয়ে আরো ভয়াবহ সঙ্কট হবে। কারণ টাস্কফোর্সের সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয় সেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন হয়নি। এ ছাড়াও কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই ট্যানারিগুলো সাভারে নিয়ে যাওয়া, মালিকদের জমির দলিল না দেয়া, জমি ও কারখানার টাকা পরিশোধ করে মালিকদের নগদ টাকার সঙ্কট, ব্যাংকগুলো ঋণ না দেয়া, বিশ্বব্যাপী চামড়ার দাম কমে যাওয়া সঙ্কট হবে।

জানা গেছে, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল গত বছরের ধ্বসের কারণে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা যদি যথাসময়ে চামড়া কিনতে অনাগ্রহী হয় তাহলে বাজারে অতিরিক্ত চামড়া সরকারিভাবে কিনে দুই তিন মাস গুদামজাত করা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশের মসজিদের ইমাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এতিমখানা ও মাদরাসার প্রধানদের চামড়া নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বেচাকেনা হয় কি না তা মনিটরিং করতে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সরকারের দেয়া ঋণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে সরকারের আর্থিক বিভাগ। এসব সিদ্ধান্ত কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি।

সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীরা যাতে চামড়া কিনতে পারে সেজন্য ট্যানারি মালিকদের সমন্বয়ে গত বছর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু দামে ধস নামে। যত দিন ট্যানারি মালিকদের আর্থিক সমস্যার সমাধান না হয় তত দিন কোরবানির চামড়া নিয়ে একটি বিকল্প সমাধান বের করতে হবে। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মাজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, চামড়া শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে তিনটি মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে কাজ করছে। গত বছরের মতো এবারো চামড়া সঙ্কট যাতে তৈরি না হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। চলতি বছর চামড়া যেন নষ্ট না হয় সে জন্য জেলা পর্যায়ে চামড়া সংগ্রহ করে বিভিন্ন গুদামে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বলেন, টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা বাস্তবায়ন হলে সঙ্কট কাটানো সম্ভব ছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। ট্যানারি সাভারে যাওয়ায় অনেক কারখানা এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। এতে আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে রফতানি। ফিনিশড লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি দিলজাহান ভ‚ঁইয়া বলেন, চামড়া শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে এ খাতে ঋণখেলাপিদের ব্যাপারে একটি নীতিমালা করা দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ ইলিয়াস খান ১৪ জুলাই, ২০২০, ১২:১০ পিএম says : 0
কাঁচা চামড়া রপ্তানীর সুযোগ দিলে সিন্ডিকেট করতে পারবে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন