বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদ সীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত

১ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি, ফ্লাড বাইপাস সড়ক হুমকির মুখে

লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২০, ৯:১৮ পিএম

লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে লালমনিরহাটে প্রবাহিত হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে জেলার ৫ উপজেলায় তিস্তাও ধরলার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক মানুষজন আবারও নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এদিকে তিস্তা ব্যারাজ রক্ষা ফ্লাডবাইপাস সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছেন।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ তিস্তা পাড়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।
ভাঙনে গৃহহারা হয়েছে প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবার ঘর বাড়ি হারিয়ে বাঁধের রাস্তায় আশ্রায় নিয়েছে। পানিবন্দি পরিবার গুলো চরম দুভোর্গে পড়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব।
১৩ জুলাই সোমবার সকালে লালমনিরহাটের দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি আবারও হুহু করে বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ৪৪ টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
গত রোববার রাত ১২টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৩ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর আগে রাত ১০টায় একই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৩ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে অব্যাহতভাবে পানি বাড়ার কারনে তিস্তা মধ্যবর্তী চর এলাকার লোকজনকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, রোববার রাতে পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করে। সেই কারণেই নদীর চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে। তবে ১৩ জুলাই সোমবার সকাল থেকে পানি কিছুটা কমে সন্ধা ৬টায় বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ দিকে লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চর গড্ডিমারী গ্রামের আনোয়ার হোসেনের এক বছরের ছেলে আরিফ হোসেন ঘুমন্ত অবস্থায় পানিতে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন,ছেলেকে নিয়ে বিছানায় ঘুমে ছিলাম কখন পড়ে গেছে বলতে পারি না।
লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমার ইউনিয়নের তিস্তানদীর চর ধুবনীর এক বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পাটিকাপাড়া ও সিন্দুর্না ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক পারিবারে ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এসব পরিবার স্থানীয় বাধে রাস্তায় তাবু টাংগিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। হুমকির মুখে পড়েছেন পাটিকাপাড়া ইউনিয়নে পশ্চিম হলদিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পুর্ব হলদিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেব মোড় থেকে ভেসির বাঁধ পর্যন্ত তিস্তার প্রবল ¯্রেেতর কারনে স্থানীয়রা পাঁকা রাস্তায় বালির বস্তা ফেলে ভাঙ্গান রোধে কাজ করছেন।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, কালীগঞ্জ উপজেলার, চর বৈরাতী, ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সিদুর্ণা, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ধুবনী, ডাউয়াবাড়ি এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের দেড় লাক্ষাধিক পরিবার গত তিন দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এসব এলাকার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চর এলাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
তিস্তা পাড়ের হোসেন আলী বলেন, ৯৬ সালের বন্যার পর এবারে আর একটি ভয়াবহ বন্যা দেখা দিল। পরিবার নিয়ে গড্ডিমারী বালিকা বিদ্যালয়ে আশ্রায় নিয়ে আছি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর জানান, পানিবন্দি পরিবার গুলোর জন্য ১২০ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার উপজেলার নির্বাহী অফিসারদেরকে ত্রাণ বিরতণ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন