বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ভেজাল জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

একটি সহযোগী দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, সারাদেশে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল জ্বালানি তেল। এই ভেজাল তেলের উৎস হিসেবে বলা হয়েছে, পরিশোধন না করে গ্যাসের উপজাত কনডেনসেট বাজারে ছাড়া হয়েছে। এই অপরিশোধিত কনডেনসেট জ্বালানি তেলের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে গোল্ডেন রিফাইনারি, লার্ক রিফাইনারি ও সিভিও পেট্রোকেমিকেল রিফিইনারির বিরুদ্ধে। এ তিনটি কোম্পানী মোট সাড়ে ৭ কোটি লিটার কনডেনসেট ক্রয় করেছিল পেট্রোবাংলার কাছ থেকে। বিধান অনুযায়ী, এই কনডেনসেট পরিশোধন করে সরকারের কাছে বিক্রি করার কথা। বাস্তবে তারা বিপিসি’র কাছে মাত্র ২৯ লাখ লিটার পেট্রোল-ডিজেল বিক্রি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাকি বিপুল পরিমাণ কনডেনসেট রূপান্তর না করেই পেট্রোল পাম্পে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানিয়েছেন অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় জড়িত কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে খুব শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ভেজাল জ্বালানি তেল ব্যবহারের ফলে গাড়ীর মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
কনডেনসেট নিয়ে বিপিসি’র সাথে নানা জটিলতার খবর নতুন নয়। এ ব্যাপারে এর আগেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। রিফাইনারিদের সাথে দামের মতপার্থক্যের কারণে সৃষ্ট জটিলতার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্নরূপ নিয়েছে। মূল চাপ এসে পড়ছে জনসাধারণের উপর- যারা পয়সা দিয়ে জ্বালানি তেল কিনছে। সাধারণত তেলের পাম্পগুলো ভেজাল তেল বিক্রি করে বলে অভিযোগ আছে। দামী তেলের সাথে কমদামী তেল মিশিয়ে ভেজাল করা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, যাদের রিফাইন করার কথা তারাই পাম্পগুলোতে ভেজাল ও নিম্নমানের জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে। এসব তেল ব্যবহারের ফলে গাড়ীর মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। এতে ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাড়ীর গতি বাধাগ্রস্ত হয়। গাড়ীর সিস্টেম বিকল হয়ে দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। শুধু গাড়িই নয়, পরিবেশেরও ভয়াবহ ক্ষতি করে, ভেজাল তেল। এক সময় পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার চিন্তা থেকেই জ্বালানি তেলের বিকল্প হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছিল। গাড়ী গ্যাস বা তেল যা দ্বারাই চালিত হোক না কেন কম বেশি জ্বালানি তেল ব্যবহার করতেই হয়। সেদিক থেকে ভেজালতেলের নেতিবাচক প্রভাব পরিবেশের উপর পড়তে বাধ্য। বর্তমানে গ্যাসেও ভেজাল হচ্ছে। অনেক পাম্পেই গ্যাসের পরিবর্তে বাতাসের পরিমাণ বেশি দেয়া হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভেজাল জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হবার দায় বিপিসি’র উপরই কার্যত বর্তাবে। কারণ, এটি দেখভালের অভাবেই ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব বলেছেন, অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করা হচ্ছে। অথচ সময় মতো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পরিশোধিত তেল দিচ্ছে কিনা অথবা এক্ষেত্রে কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না, বিষয়গুলো যদি তারা মনিটরিং করত তাহলে এ বাস্তবতা তৈরি হতে পারত না। এবছরের গোড়ার দিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল জ্বালানি তেল। তখনকার খবরেই বলা হয়েছে, এ অবৈধ ব্যবসার সাথে অসাধু বেসরকারি রিফাইনারি মালিক, ট্যাঙ্কলরির মালিক ও শ্রমিক সমিতি, ফিলিং স্টেশনের মালিকসহ অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার জড়িত। বিপিসি’র কোন কোন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যুক্ত থাকার কথাও বলা হয়েছে। এটাও লক্ষণীয়, অনেকদিন থেকে জ্বালানি তেলের পাম্পগুলোতে ভেজালবিরোধী অভিযান বন্ধ রয়েছে। যেখানে বারবার অভিযান চালিয়ে ভেজাল তেল বিক্রি ও মাপে কম দেয়ার বিষয়টি বন্ধ করা যায়নি, সেখানে দীর্ঘদিন থেকে এধরনের অভিযান বন্ধ রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
ভেজাল তেলের কারণে ব্যক্তির ক্ষতি হচ্ছে, এটা মনে করার কোন কারণ নেই। এটি দেশের ক্ষতি। জাতীয় অর্থ ব্যয় করেই গাড়ী আমদানি করা হয়। এ বিবেচনায় ভেজাল তেলের কারণে গাড়ী অকার্যকর হয়ে গেলে তা দেশের অর্থেরই অপচয়। ভেজাল জ্বালানি তেলের পেছনে কারা জড়িত অবশ্যই তা উদ্ঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সেই সাথে একথাও মনে রাখতে হবে, মূল ক্ষতি হয়েছে জনগণের। দুনিয়াব্যাপী যখন তেলের দাম কমেছে বাংলাদেশে কার্যত তা নিয়ে এক ধরনের প্রহসন করা হয়েছে। সেই সাথে কনডেনসেট নিয়ে যা হয়েছে তাকে গভীর বিবেচনায় নেয়া জরুরি। যারা এর সাথে জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। ভবিষ্যতে যাতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। ভেজাল জ্বালানি তেলের উৎস এবং এর বিপণন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য ও ছাড় দেয়া যাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন