মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লাজ ফার্মাকে ফের ২০ লাখ টাকা জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শিশুদের বাসার বাইরে বের করতে মানা। তাই রোদ থেকে পাওয়া ভিটামিন-ডি সঙ্কটে ভুগছে অনেক শিশু। আর তাই রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা সৈয়দ গালিব চিকিৎসকের পরামর্শে তার ১ মাস বয়সী শিশুর জন্য উত্তরার তামান্না ফার্মেসী থেকে ভিটামিন-ডি’র বিদেশি সাপ্লিমেন্ট ক্রয় করে খাওয়ান। গত বৃহষ্পতিবার তামান্না ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে বিদেশি ওষুধকে হুবহু নকল করে ওষুধ বাজারজাত করার প্রমাণ পায়। পরে সৈয়দ গালিব শিশুর জন্য ক্রয় সাপ্লিমেন্ট’র প্যাকেটে দেখতে পান তার ক্রয় করা বোতলে নেই কোন মেয়াদ ও কোন দেশের ওষুধ তার প্রমাণ। এখন তার মধ্যে অপরাধ বোধ কাজ করছে ছোট শিশুকে তিনি কি খাওয়ালেন এই নিয়ে। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তাই ইনকিলাবের এ প্রতিনিধির কাছে ফোন করে নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রির দায়ে তামান্নাসহ অন্যান্য ফার্মেসির মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে সৈয়দ গালিব বলেন, এ রকম নামিদামি ফার্মেসি থেকে ওষুধ ক্রয় করতে গিয়েও যদি বিপাকে পড়তে হয় তাহলে যাব কোথায় প্রশ্ন রাখেন। তিনি এসব নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বাজারজাতকারীদের ক্রসফায়ার অথবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকরের দাবি জানান।
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন থেকে দেশিয় নামিদামি কোম্পানির ওষুধ হুবহু নকল করে বিক্রি করছিলো একটি চক্র। কিন্তু দেশিয় ওষুধের দাম কম এবং এতে লাভ কম হওয়ায় চক্রটি বেশি মুনাফার আশায় বিদেশি ওষুধ নকল করে বাজারে বিক্রি করছে। চক্রটি আমেরিকা, ইংল্যান্ড, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশের ওষুধ কোম্পানির মোড়কে ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করছে। এসব ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে লাজফার্মা, তামান্না ফার্মার মতো নামিদামি ফার্মেসিতে। তবে এবার ওষুধে ভেজাল ও নকল প্রতিরোধে সক্রিয় হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ফের অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অভিযোগে লাজ ফার্মাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে গত বৃহষ্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির উপকরণ উদ্ধার করেছে। এ সময় আটক করা হয়েছে ১৬ জনকে। যদিও আইনের ফাঁক গলে ছাড়া পেয়ে এসব নকল ও ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারক বা বিক্রেতারা আবার কিছুদিন পর একই কাজ করছে।
গতকাল অনুমেহাদনহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওযুধ রাখা, বেশি দামে ওষুধ বিক্রি এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ওষুধ আমদানির দায়ে লাজ ফার্মার কাকরাইল শাখাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর কাকরাইল শাখায় যৌথ অভিযান চালায় র‌্যাব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এ সময় অনেক ক্রেতা উপস্থিত হয়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঘষামাজাসহ লাজফার্মার নানা প্রতারণার অভিযোগ তুলে ধরেন। যেসব অনুমোদনহীন ও ভেজাল ওষুধ পাওয়া গেছে তার বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকার বেশি বলে জানান, ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। বিষয়টি আরো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে এই শাখা সিলগালা করা হবে বলেও জানানো হয় র‌্যাবের পক্ষ থেকে।
এদিকে, অভিযান চলাকালে জব্দ করা ওষুধের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি লাজ ফার্মা কর্তৃপক্ষ। ধারণা করা হচ্ছে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে ওষুধগুলো দেশে আনা হয়েছে। অভিযানে র‌্যাবের পক্ষে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু আর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষে নেতৃত্ব ছিলেন সহকারি পরিচালক ইকবাল হোসেন।
এর আগে গত বৃহষ্পতিবার উত্তরায় একটি নকল ওষুধের কারখানায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এসময় এসবি করপোরেশন নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া যায়। যারা আমেরিকা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ওষুধ আমদানির নাম করে দেশেই তৈরি করে আসছে মানহীন ওষুধ। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের অভিযানে অরেক্সিস, হাইজিংক, ডায়ানাসহ ৬টি বিদেশি ব্রান্ডের বিপুল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ ও ওষুধ তৈরির উপকরণ জব্দ করা হয়। এসব ওষুধের মোড়কে, আমেরিকা ইংল্যান্ডের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম থাকলেও তৈরি হয় টঙ্গীর চেরাগ আলীতে। হলোগ্রাম, কৌটা আর কাচামাল আনা হয় ফকিরাপুল থেকে। পরে জানা যায় এসব ওষুধ রাজধানীর লাজ ফার্মা এবং তামান্না ফার্মাসহ নামিদামি ফার্মেসিগুলোতে সরবরাহ করা হতো। এরপর লাজ ফার্মা এবং তামান্না ফার্মায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ। তারা আটা-ময়দা আর রং মিশিয়ে এসব ওষুধ তৈরি করে বিক্রি করতো।
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য মতে, রাজধানীর লাজফার্মা, তামান্না ফার্মাসহ বেশকিছু ওষুধের দোকানে দীর্ঘদিন থেকে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি ভেজাল ওষুধ। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মুখপাত্র ও পরিচালক আইয়ুব আলী ইনকিলাবকে বলেছেন, নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চলমান আছে। এটা তাদের নিয়মিত কাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
salman ১৪ জুলাই, ২০২০, ৫:৩৪ এএম says : 0
Nam Jemon LAJ, Nai o oder Laj Lojjha
Total Reply(0)
Azad mullah ১৫ জুলাই, ২০২০, ৫:৪০ পিএম says : 0
মানুষ মারার কারখানা সামান্য টাকা জরিমানা করে কোনো লাভ হবে না তাই ওদের কে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আয়োজন করতে হবে
Total Reply(0)
Muhammad Nazrul Islam ১৬ জুলাই, ২০২০, ১২:২৮ এএম says : 0
বলা হচ্ছে ভেজাল ওষুধ। 'ভেজাল ওষুধ' বললে মনে হয় ওষুধই তবে এতে ভেজাল মেশানো হয়েছে। কিন্তু এখানে তো দেখা যাচ্ছে আটা-ময়দা, রং মিশিয়ে হয়তো ট্যাবলেট-ক্যাপসুলের আকার দিয়ে কিছু একটা তৈরি করে বিক্রি করছে। বলা যায় ওষুধের নাম করে আটার গুলি বিক্রি করছে। ভেজাল ওষুধ বললে ওষুধই বলা হয়। এতে ভেজাল থাকে আর কি। আটার গুলিই যদি হয় তাহলে ভেজাল হলো কোত্থেকে?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন