শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যার আরও অবনতি

প্লাবিত ১৮ জেলা : পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ : ভেসে গেছে অনেক মৎস্য খামার

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

টানা বৃষ্টি আর ভারতের ঢলে দেশের প্রায় সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে দেশের ১৮টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে বন্যর্তরা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১২টি জেলার বন্যা পরিস্থিতি পুনরায় ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এ জেলাগুলো হচ্ছেÑ কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, সিলেট। এ ছাড়া পদ্মা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ঢাকার আশপাশের নদীগুলোÑ বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালুর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। গত ৮ জুলাই থেকে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় হওয়ার কারণে উজানে ভারতের অরুনাচল, আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর ফলে গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়ছে। অন্যদিকে আসাম ও মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিúাতের ফলে মেঘনা অববাহিকায় সুরমা-কুশিয়ারা ও আপার মেঘনায়, যাদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভোগাই, কংস, ধনু, মগড়া, খোয়াই এসব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে গতকাল নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতে তিস্তা ব্যারাজ এলাকা ও এর আশপাশ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
ভারত গজলডোবার সবকটি গেট খুলে দেয়ায় প্রবল স্রোত ও পানি বৃদ্ধির ২৪ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তিস্তা। লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফলে জেলার ৫ উপজেলায় তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের দেড় লক্ষাধিক মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া তিস্তা ব্যারাজ রক্ষা ফ্লাড বাইপাস সড়কটি হুমকির মুখে পড়েছে। ১৯৯৬ সালে তিস্তার ভয়াবহ বন্যার পর ২০২০ সালে একই রকম বন্যা দেখা দিয়েছে। ২৪ বছর পর এই বন্যা আবারও ভয়াভয় রূপ নিয়েছে।
চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, ভারতের ঢলে চাঁদপুরের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মা-মেঘনা-ধনাগোদা নদী সংলগাœ চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তরের কয়েকটি চরাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ওই সব এলাকায় বসবাসরত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মতলব দক্ষিণ উপজেলার একটি আশ্রায়ন প্রকল্প পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় আশ্রিতরা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেঘনা রুদ্ররূপ ধারণ করেছে। এ কারণে শহর রক্ষা বাঁধের পুরানবাজার অংশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। গত কয়েকদিন ডাকাতিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার কারণে প্রায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি ধেয়ে আসায় তিস্তা ব্যারেজ ও আশপাশের চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, গতকাল ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার, নুন খাওয়া পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার, ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে ৯২ সেন্টিমিটার এবং তিস্তা কাউনিয়া পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে জেলার ৯টি উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ধরলা নদীর পানির প্রবল চাপে সদর উপজেলার সারডোবে একটি বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, দ্বিতীয় দফায় যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আবারও প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে চরাঞ্চলের ফসলি জমি। ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ১২ দিনের ব্যবধানে সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে দ্বিতীয়বারের মত পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জ থেকে মঞ্জুর মোর্শেদ জানান, মুন্সীগঞ্জে পদ্মা এবং মেঘনা নদীর পানি এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার তীব্র স্রোতে লৌহজেং থড়িয়া, শামুর বাড়ি, হলদিয়া এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। মেঘনার ভাঙনে গজারিয়া উপজেলার ইসমানিচরের ও নয়ানগর এলাকার বেশ কিছু বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হয়েছে। এতে জেলার ৪০ ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নতুন করে বন্যা কবলিত হওয়ায় পানিবন্দি এসব মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। জামালপুরে গতকাল যমুনার পানি বাহাদুরবাদঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
নেত্রকোনা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ্ জানান, গত দু’তিন দিন ধরে অব্যাহত ভারী বর্ষণ ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলায় পুনরায় বন্যা দেখা দিয়েছে। নেত্রকোনা উব্দাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে ৩৩ সেন্টিমিটার, বিজয়পুর পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, কংশ নদীর পানি জারিয়া পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার ও কংশ নদীর পানি নেত্রকোনা পয়েন্ট ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলের তোড়ে দুর্গাপুর উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের বন্দ উষান গ্রামের নেতাই নদীর বেড়িবাঁধটি ভেঙে গেছে। এছাড়াও দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলার প্রায় ২০টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ নিন্মাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক। ফলে গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা একবারে ভেঙে পড়েছে।
সুনামগঞ্জ থেকে হাসান চৌধুরী জানান, কয়েকদিনের ব্যবধানে দু’বার বন্যায় সুনামগঞ্জে সবকটি উপজেলায় মৎস্য খামারিদের মাছ বানের পানিতে ভেসে গেছে। এর ক্ষতি ৩০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি থেকে মুক্তার হোসেন রানা জানান, উজানের ঢল আর প্রবল বর্ষণে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দ্বিতীয় দফার বন্যায় ফুলছড়ি উপজেলার সৈয়দপুর ঘাট হতে বালাসীঘাট পর্যন্ত পুরাতন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় আবারও ভাষারপাড়া ও মাঝিপাড়া গ্রামের অনেক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন জানান, টানা দুই দিনের বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর ৬ স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার প্রায় ১৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১.৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জীবন ১৪ জুলাই, ২০২০, ১:৫৮ এএম says : 0
সাহেদ আর সাবরিনার খবর প্রচার বন্যায় এক লক্ষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন সেটা এই দুজনের নিউজের কারণে ধামাচাপা দিতেই যতেষ্ট
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন