করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের প্রতিটি দেশের মতো বাংলাদেশও লড়াই করছে। নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর খবরের মধ্যেও থেমে নেই মানুষের কর্মজীবন। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মনোবল চাঙ্গা রেখে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ১৮টি মন্ত্রণালয় করোনা মোকাবিলায় সরাসরি যুদ্ধ করছে। বাকি ৪০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ করোনায় কিছু কাজ করছে। করোনা শেষ হলে এসব মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেয়ার চিন্তা করছে সরকার।
সবক্ষেত্রেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নিয়মিত দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা কাজ করছেন। করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ ১৮টি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
মন্ত্রণালয়ে শতভাগ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি না থাকলেও অনেকেই বাসায় বসে অফিস করছেন। ইতোমধ্যে করোনায় বেশ ক’জন সরকারি কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক পরিচালক ইনকিলাবকে বলেন, সরকার করোনা মোকাবিলায় লড়াই করছে। লড়াই শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী ১৮টি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও কর্মচারীদের পুরস্কার দিবেন। কি দিবেন সেটা এখনো ঠিক হয়নি। আবার অনেকেই আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। তবুও করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তারা। অপরদিকে কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর সামনে চলে আসায় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।
জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক কর্মসূচি এবং খাদ্য বান্ধব কর্মসূচিতে চাল বিতরণের তালিকায় অনিয়ম এবং আত্মসাতের অভিযোগে এ পর্যন্ত বরখাস্ত করেছে ১০৭ জনপ্রতিনিধিকে। এদের মধ্যে ৩৫ ইউপি চেয়ারম্যান, ৬৬ ইউপি সদস্য, ১ জেলা পরিষদ সদস্য, ৪ পৌর কাউন্সিলর এবং ১ জন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনগুলো শহরের অলিগতিতে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা করেছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে দেশের সকল রাস্তা ঘাট দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ শুরুতেই করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দিতে পারেনি। এছাড়া করোনাকালেও স্বাস্থ্যখাতে কেনা কাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। স্বাস্থ্য সচিবসহ বিভাগের অনেক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। এ অবস্থায় নতুন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগর সচিব পদে নিয়োগ পান আব্দুল মান্নান। দায়িত্ব নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পারিবারিক এই বিপর্যয়ের মধ্যেও প্রশাসনিক কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষ ডাক্তার নার্স নিয়োগের পরিকল্পনা শুরু করেছেন।
করোনার শুরুতে একটি মাত্র টেস্টিং ল্যাব থেকে বর্তমানে ৬৬টিতে উন্নীত হয়েছে। করোনা রোগীদের জন্য মাত্র ১৫ দিনে বসুন্ধরায় ২ হাজার বেড, উত্তর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট ও উত্তরার দিয়া বাড়িতে মোট প্রায় ৩ হাজার বেডের হাসপাতাল করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনা টেস্টসহ চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে করোনা চিকিৎসা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাত্র ১০ দিনে ২ হাজার নতুন চিকিৎসক ও প্রায় ৬ হাজার নতুন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অন্তত ৭০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ, মেডিকেল কলেজে অনলাইনে পড়ালেখা ও পরীক্ষা ব্যবস্থার চেষ্টাসহ করোনায় স্বাস্থ্যখাতের সকল কার্যক্রমের তদারকি করছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন