বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হচ্ছে ৭ মার্চ

মন্ত্রিসভার প্রথম ভার্চুয়াল বৈঠক ঈদের ছুটি ৩ দিন, কর্মস্থল ত্যাগে মানা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৪৯ এএম

একাত্তরের যে দিনটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, সেই ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণায় সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া দেশের পঞ্চম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনায় হচ্ছে। এজন্য শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, খুলনা ২০২০-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটি বাড়ানো হবে না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন বৈঠকে। বেলা ১১টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রথম মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ভার্চুয়াল মিটিংয়ে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আর সচিবালয়ে প্রান্তে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, সাতজন মন্ত্রী ও সাতজন সচিব যুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কনফারেন্স কক্ষে উপস্থিত ছিলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।

বৈঠক শেষে দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ৭ মার্চকে জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং দেশের সব জেলা-উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণের বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব তুলেছিলে। এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর মন্ত্রিসভা ৭ মার্চকে বিশেষ দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নতুন করে প্রস্তাব আনতে বলেছে।

আনোয়ারুল বলেন, ৭ মার্চকে জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এ সংক্রান্ত পরিপত্রের ‘ক’ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাব সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় করেছিল। হাইকোর্ট বছরের শুরুতে এক আদেশে ৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণা করে এক মাসের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সঙ্গে প্রতি উপজেলায় জাতির জনকের ম্যুরাল নির্মাণের আদেশও দিয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এগুলো সভায় আলোচনা হয়েছে। ৭ মার্চ একটি ঐতিহাসিক দিবস এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইউনেস্কো তাদের মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসব বিষয়ে আলোচনার পর ৭ মার্চকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ৭ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসকে কেন্দ্র করে সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড হাতে নিয়েছে। তাই মন্ত্রিসভা আলাদাভাবে বঙ্গবন্ধুর কোনো মুর‌্যাল করার প্রয়োজন নেই বলে মনে করে। কারণ ওই প্রোগ্রামের মধ্যেই অনেক কিছু আছে। হাইকোর্টকে এ জিনিসটি অবহিত করা হবে। পুরো যে প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হচ্ছে হাইকোর্ট সম্ভবত সে বিষয়ে অবহিত না। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এখন হাইকোর্টে বিষয়টি উপস্থাপন করবে।
এরপর ৭ মার্চকে বিশেষ দিবস হিসেবে ঘোষণার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে নতুন করে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব আনতে বলা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ কোটি বাঙালিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ঘোষণা দেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পরাজিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে। বিভিন্ন দেশের ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করেছে ইউনেস্কো।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, সেবার মানোন্নয়ন এবং সুযোগ-সুবিধা স¤প্রসারণে সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সকল বিভাগীয় শহরে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে মর্মে সরকারের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। সরকারের চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে খুলনা জেলায় শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চিকিৎসা শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত বিশেষজ্ঞ ও গবেষক তৈরি করার লক্ষ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় মেডিক্যাল কলেজগুলোর শিক্ষার মান সংরক্ষণ ও উন্নয়নই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মুখ্য উদ্দেশ্য। প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রণীত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনে মোট ৫৫টি ধারা রয়েছে। এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণে বিধিমালা, প্রবিধানমালা ও সংবিধি প্রণয়েনের বিধান রাখা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের ৪ থেকে ৬ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, এখতিয়ার এবং ক্ষমতার বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। ৯ ধারা ও ৪৩ ধারায় যথাক্রমে পরিদর্শন ও আর্থিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভ‚মিকা উল্লেখ রয়েছে। ১০ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী এবং ১২ থেকে ১৮ ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্টার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, ক্ষমতা ও দায়িত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের আওতাধীন সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউট এবং চিকিৎসা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা, সেবার মান এবং সুযোগ-সুবিধার স¤প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটবে। প্রস্তাবিত মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে খুলনা বিভাগে উন্নত চিকিৎসাসেবা স¤প্রসারিত হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঈদুল আজহার ছুটি বাড়ানো হবে না। পূর্ব নির্ধারিত তিন দিনই ছুটি থাকবে। এছাড়া ঈদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না, এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ জুলাই বা ১ আগস্ট দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে তিন দিন ছুটি রয়েছে। করোনার কারণে ৬৬ দিনের টানা ছুটি শেষে গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Nizam Uddin ১৪ জুলাই, ২০২০, ১:২০ এএম says : 1
‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হচ্ছে ৭ মার্চ --- khub valo khabor
Total Reply(0)
জীবন ১৪ জুলাই, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
ঈদের ছুটি কমপক্ষে পাঁচদিন হওয়া উচিত। ৯০% মুসলমানের দেশ, ছুটি মাত্র তিনদিন।
Total Reply(0)
Md Arif Abir ১৪ জুলাই, ২০২০, ২:১৮ এএম says : 0
আবারও যে শ্রমজীবি মানুষগুলো অধিকার বঞ্চিত হলো এটাই সত্য!
Total Reply(0)
Md Islam ১৪ জুলাই, ২০২০, ২:১৯ এএম says : 1
অতি উওম অতি উত্তম,, ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে,,
Total Reply(0)
Kabir Hossain ১৪ জুলাই, ২০২০, ২:১৯ এএম says : 0
ছুটি দেওয়া আত্মগাতি সিদ্ধান্ত হবে।
Total Reply(0)
Mohammad Shamsuddoha Tapos ১৪ জুলাই, ২০২০, ২:২০ এএম says : 1
ভালো সিদ্ধান্ত
Total Reply(0)
ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১৪ জুলাই, ২০২০, ৩:১৩ পিএম says : 0
৭ইমার্চের ভাষণে এভারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম এভারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। ঐদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার দিন। ঐদিন দেশ জাতির সাড়ে সাতকোটি মানুষের মনের কথা স্বাধীনতা ঘোষণার দিন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ত্রিশলক্ষ শহীদের বাংলাদেশ। আজকের ১৮কোটির বাংলাদেশ। ৭ইমার্চ জাতীয় ঐতিহাসিক ভাবে স্বাধীনতা দিবস। ঐভাষণে রনাঙ্গনের প্রস্তুতি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আশংকা সহ সবকিছুই ছিল। বঙ্গবন্ধু ইতিহাস বঙ্গবন্ধুর ত‍্যাগ। বঙ্গবন্ধুর মানুষের প্রতি ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু বিশালাকার মন মানুষিকতা বাংলাদেশের মানুষ কে ভালবাসতেন সত্যিকার ভাবে। নৈতিকতা আদশ‍্যে মানবতার মহান আদশ‍্য বিদ‍্যমান ছিল। বঙ্গবন্ধু বিপদে আপদে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সাহায্য সহযোগিতা কর তেন। বিশালাকার মনের বঙ্গবন্ধুর কন‍্যা বাংলাদেশের কান্ডারী। বাংলাদেশের মানুষের আশা ভরসাস্থল শেষ ঠিকানা। বাংলাদেশের স্বার্থে। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জাতির স্বার্থে। জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস ৭ইমার্চ সার্থক হোক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন