শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

বিশ্বনাথে স্কুল শিক্ষিকা আসমার মৃত্যু নিয়ে এলাকায় তোলপাড়

বিশ্বনাথ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ জুলাই, ২০২০, ৩:৫৯ পিএম

সিলেটের বিশ^নাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর ‘আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অফিস সহকারি আসমা শিকদারের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু আসমা শিকদার নিহতের খবর শুনেই প্রতিষ্ঠনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিম উদ্দিন গাঁ ঢাকা দেয়ায় এলাকায় নানা গুঞ্জন ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি লন্ডন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের পরিবারের দাবি পারিবারিক কলহের জেরেই আসমা শিকদার আত্মহত্যা করেছেন। এখন গভর্নিংবডির উপর দায় চাপিয়ে আমরা নীরিহ প্রাবাসিদেরকে হয়রানী করা হচ্ছে। দু'পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দু'পক্ষের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে এলাকায় নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্ঠি হয়েছে।
এদিকে নিহতের স্বামী ও পিতার পরিবারের দাবি ‘আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও এক সদস্যের চাপ ও অপমান সইতে না পেরে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন আসমা শিকদার। এ ঘটনায় আসমা শিকদারের স্বামী ফজলু মিয়া বাদি হয়ে ৩ জনের না উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পুলিশ একজনকে আটকও করেছে।
তবে, এই ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য সুষ্ট তদন্ত দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী। তারা বলেন, এ ঘটনাকে পুজি করে নিরীহ কাউকে হয়রানি যেন না করা হয় সেদিকে প্রশাসনের সু-নজর থাকে।
জানা গেছে, গত ৬জুলাই হারপিক পানের পর ৮জুলাই ‘আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ দৌলতপুর’র অফিস সহকারী আসমা শিকদার সীমলা (৪০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাহাড়া-দুভাগ গ্রামের ফজলু মিয়ার স্ত্রী।
ওইদিন (৮ জুলাই) বিকেলে গভর্নিংবডির সভাপতির সাথে কথা বলে তাঁর বাড়ি থেকেই দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা ও গভর্নিংবডির সদস্য আনওয়ার মিয়াকে (৪২) আটক করে পুলিশ। পরদিন ৯ জুলাই নিহতের স্বামী ফজলু মিয়া বাদি হয়ে গভর্নিং বডির সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হাসিম উদ্দিন (৫৫) ও কমিটির সদস্য আনওয়ার মিয়াকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ৬)। আর ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে (৯জুলাই) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে পুলিশ।
সরেজমিন গিয়ে নিহত আসমা শিকদারের বাবার বাড়ি আটপাড়া গেলে তার স্বামী ফজলু মিয়া বলেন, মামলায় সভাপতিসহ অভিযুক্ত তিনজনই তার স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত স্কুলের হিসাব নিকাশ নিয়ে মানষিকভাবে টর্চার করা হতো। ৬জুলাই প্রতিষ্ঠানে বৈঠক শেষে আবারও অসালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। যে কারণে তার স্ত্রী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। এ ঘটনায় সঠিক দতন্তের মাধ্যমে জড়িতদের গ্রেফতার দাবিও করেছেন।
অন্যদিকে, মামলার প্রধান আসামি গর্ভনিং বডির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফের স্ত্রী রাবেয়া রউফ বলেন, তাঁর স্বামী স্কুল প্রতিষ্ঠকালীন সময় থেকে এবং কলেজ বাস্তবায়নে বড় অংকের আর্থিক অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজ করছেন। আর এ কারণেই তারা (স্বামী-স্ত্রী) গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে আসেন এবং সম্প্রতি তার স্বামীকে গভর্নিং বডির সদস্যরা সভাপতি নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে বাঁধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি অযতা হয়রানী করতে অফিস সহকারী আসমা শিকদারের আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় তার স্বামীকেও অন্যায়ভাবে আসামি করা হয়েছে। তিনিও মামলার হয়রানি থেকে রেহাই পেতে প্রশাসনের কাছে সুষ্টু তদন্তের দাবি জানান। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও নিহতের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য উদঘাটন হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা হলে প্রতিষ্ঠানের কলেজ ভবন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম খান সোহেল জানান, আসমা শিকদার খূবই ভালো ও জনপ্রিয় একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তার মৃত্যুর ৪/৫ দিন পূবে আমাকে মোবাইল ফোনে বলেছিল তার পরিবারের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে দু:খ প্রকাশ করে বলেন, অসময়ে একটি মাত্র সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ত্যাগ করতে হলো। ভবিষ্যৎ নিয়ে সে খুব দুশ্চিন্তা করছিল। আমি তাকে আশ্বস্থ করেছিলাম কিছু দিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে আমার বাড়িটা আসমাকে দিয়ে দিব। কিন্তু এর আগেই সে পরপারে চলে গেল। তার আত্মহত্যার প্ররোচনায় যারা দায়ী, সুষ্ট তদন্ত সাপেক্ষে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।
এ প্রসঙ্গে দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমির আলী সাংবাদিকদের বলেন, এই মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি এ মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটনের জন্য সাংবাদিক ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার্স ইনচার্জ শামীম মুসা বলেন, অভিযুক্ত আসামীরাই আত্মহত্যার প্ররোচনার জন্য দায়ী। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন