বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

‘রেডিমেড’ বনাঞ্চল তৈরি করছে চীন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২০, ৪:৪৮ পিএম

পৃথিবীতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠে বনাঞ্চল। তবে এবার রেডিমেড উপায়ে বনাঞ্চল তৈরি করছে চীন। এই উপায়ের মাধ্যমে গাছের ডাল-পালা কেটে ফেলা হয়। যাতে গাছের শাখা-প্রশাখা চারদিকে ছড়িয়ে জায়গা দখল না করে। এ কারণেই চীনা কর্তৃপক্ষ গাছ না কেটে বরং তার ডালপালা কেটে তা প্লাস্টিকে মুড়ে রাখার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে গাছ নিচের দিকে না বেড়ে উপরের দিকে বাড়ে।
বিগত কয়েক বছর ধরে চীনা সরকার কৃত্রিম বন তৈরি করছেন। সেখানে জনসংখ্যার চাপে অতিরিক্ত হারে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। জ্বালানি প্রয়োজন মেটাতে কিংবা বসবাসের জমি তৈরি করতে নির্বিচারে গাছ কাটছে অনেকেই। এমনকি শত শত বছরের পুরনো গাছও কেটে ফেলা হয়েছে।
তাই সরকার হাজারো গাছ লাগাচ্ছে পুরো দেশ জুড়ে। বাড়ির সামনে, সড়কের পাশে, খালি জমিতে গাছ লাগানো হচ্ছে। তবে এই গাছগুলো বড় করতে অন্য প্রক্রিয়া ব্যবহার করছে তারা। যাতে গাছগুলো চারদিকে শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে না পারে। এমনকি গাছের পাতাও যাতে রাস্তায় না পড়ে। গাছের ছায়াতেও তাদের সমস্যা হয়ে থাকে, কারণ এতে শীত আরো বাড়ে। এজন্যই চীনের নতুন বনাঞ্চল অনেকটা কৃত্রিম উপায়ে গড়ে উঠছে। আর এভাবেই গড়ে উঠছে রেডিমেড বনাঞ্চল
এক্ষেত্রে গাছের ডাল-পালা ও পাতা কেটে গাছটি প্লাস্টিক কাগজে মুড়িয়ে রাখা হচ্ছে। আর নিচ থেকে কাঠের বা রডের কাঠামো তৈরি করে গাছের সঙ্গে বেঁধে দেয়া হচ্ছে। যাতে গাছগুলো নিচের দিকে না ছড়িয়ে উপরের দিকে বাড়তে পারে।
এক চীনা ফটোগ্রাফার ইয়ান ওয়াং প্রেস্টন বলেন, তিনি সাত বছর আগে ইয়াংটি নদীর পাশে প্রায় ১০০ কি.মি. জায়গা জুড়ে গাছ দেখেছেন। সেগুলোর ছবিও তুলেন তিনি। ২০১৩ এর মার্চ মাসে, প্রেস্টন ইউনান প্রদেশের জিয়ালিয়ু নামে একটি ছোট্ট গ্রামে গিয়ে ৩০০ বছরের পুরনো ফিকাস গাছ দেখেন। তখন সেটি গ্রামের রাস্তা এবং বাঁধ তৈরি করার সময় কেটে ফেলার কথা ছিল।
তাই প্রেস্টন যতটা সম্ভব ছবি তুলে রেখেছিলেন, যাতে এগুলো নথি করতে সুবিধা হয়। তিন মাস পরে প্রিস্টন যখন জিয়ালিয়ুতে আবার গেলেন। তখন তিনি পুরোই অবাক হয়ে গেলেন। সেখানে না আছে কোনো গাছ না আছে মানুষের বাস। তারা সবাই সেখান থেকে চলে গেছে। এমনকি সব গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।
সেখানকার একজন বলেন, গ্রামের সমস্ত পুরানো গাছ প্রায় ১০ হাজার ডলার সমপরিমাণে বিক্রি হয়েছে। এই গাছগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় আর পুরনো ছিল ৩০০ বছর বয়সী ফিকাস গাছ। যার নাম ফ্র্যাঙ্ক। সেখান থেকে প্রায় দুই ঘন্টা দূরে বিনচুয়ান সিটিতে নির্মিত একটি পাঁচতারা হোটেলে বিক্রি করা হয়েছিল এই গাছটি।
প্রেস্টন যখন সেখানে যান একটি ফাঁকা নির্মাণ স্থানে গাছটি দেখতে পেলেন। হোটেলটি নির্মাণও শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। এটি একটি হৃদয়বিদারক দৃশ্য ছিল। গাছটি এমন অবস্থায় ছিল যেন কোনো মানুষের হাত, আঙ্গুল এবং চুল সমস্ত কেটে দিলে যেমন দেখাবে। গাছের সব ডাল, পাতা কেটে ফেলা হয়েছিল। এরপর প্রেস্টন মৃতপ্রায় গাছটি বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। নতুন করে রোপন করে পুষ্টিকর গাছের খাবার দিয়েছিলেন।
তবে ২০১৭ সালে প্রেস্টনের সব চেষ্টা বৃথা করে মারা যায় গাছটি। প্রেস্টন বলেন, চীনে গাছের চারা রোপণ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। প্রচুর সংখ্যক গাছ নতুন শহর ও পুনর্র্নিমাণে ধ্বংস করা হয়েছে। যা এখানকার জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলে। ভিয়েতনাম থেকে কিছু গাছ এখানে আনা হয়। যেগুলো বিশালাকার প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে রাখা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গাছগুলো নিচের দিকে নয় উপরের দিকে বেড়ে উঠবে। সূত্র: অ্যামিউজিংপ্লানেটস

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন