বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

নওগাঁর রাণীনগরে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত কয়েকটি গ্রাম

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২০, ৫:৩৫ পিএম

নওগাঁর রাণীনগরে ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধটি ভেঙ্গে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ। পানিতে প্লাবিত হয়ে নষ্ট হওয়ার পথে আউশ ও আমন ধানের বীজতলা। এছাড়াও পানিতে প্লাবিত হয়েছে কিছু সবজির ক্ষেত। গত মঙ্গলবার বাঁধটি ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করছে।

গোনা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খাঁন হাসান জানান, আশির দশকে স্থানীয়রা চলাচলের জন্য ছোট যমুনা নদীর তীরের পাশ দিয়ে নির্মাণ করেন নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর গ্রামীণ রাস্তাটি। কালের আর্বতে নদীর ভাঙ্গনে সেই রাস্তাটি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নদীর বেরিবাঁধে পরিণত হয়। কিন্তু বছরের পর বছর রাস্তা নামক সেই বেরিবাঁধটিকে সংস্কার কিংবা মেরামত না করায় তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় পরিণত হয়। তাই বর্ষা মৌসুমে ছোট যমুনা নদীতে পানি এলেই নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় দুই উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষকে। গত বছরও এই বেরিবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিতে ভেসে যায় শতাধিক পুকুরের মাছ, নষ্ট হয় রাস্তা-ঘাট ও সবজির ক্ষেত। তারই ধারাবাহিকতায় এবছরও বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানিতে ভাসছে মানুষ। প্রতিবছরই বাঁধ ভাঙ্গার পর পরিদর্শন করতে এসে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তাব্যক্তিরা বস্তা ভরা আশ্বাস দিয়ে যায় আর নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই ভেঙ্গে যায় বাঁধটি। বছরের পর বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে বাঁধটির সংস্কার কাজের জন্য ধর্না দিয়েও আজ পর্যন্ত কোন ফল হয়নি। চলতি বছর বাঁধের ঝুঁকিপূর্ন ১৫০ফিট অংশ মেরামত করার জন্য অর্থ এলেও নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জোড়াতালি দেওয়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ করতে না পারায় আবার বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে ভাসছে নান্দাইবাড়ি,কৃষ্ণপুর, মালঞ্চিসহ কয়েকটি গ্রাম। জানি না এই বেরিবাঁধের ভাগ্যে কি আছে? ভাগ্যে কি আছে এই অঞ্চলের মানুষদের। বর্তমানে এই বেরিবাঁধটি রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষদের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। কবে সরকারের নেক নজর বাঁধটির উপর পড়বে আর স্থায়ী ভাবে মেরামত করা হবে এই অভিভাবকহীন নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর বেরিবাঁধটি সে দিনের অপেক্ষায় হাজার হাজার মানুষ।

উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন যে দপ্তরের বাঁধ তার কোন চিন্তা নেই আর যত দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি আমাদের। বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করলেই অপূরনীয় ক্ষতি হয় কৃষি বিভাগের। দিন-রাত বন্যাকবলিত এলাকায় পরিশ্রম করতে হয় কৃষি বিভাগের লোকদের। কিন্তু যদি একবার স্থায়ী ভাবে এই ঝুঁকিপূর্ণ বেরিবাঁধটি সংস্কার কিংবা মেরামত করা হয় তাহলে এই অঞ্চলের মানুষদের দু:খ যেমন চিরবিদায় নেয় তেমনি ভাবে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায় কৃষক, মৎস্যচাষীসহ হাজার হাজার মানুষ। ইতিমধ্যেই নদীর পানি নেমে যাওয়ায় উপজেলার কিছু নিম্মাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। নতুন করে বেরিবাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করায় কিছুটা ক্ষতি হতে পারে ধানের বীজতলা আর কিছু সবজির ক্ষেত। এছাড়া কৃষিতে তেমন কোন ক্ষতি হবে না কারণ মাঠে বর্তমান সময়ে উল্লেখ্যযোগ্য কোন ফসল নেই। তারপরও আমরা নতুন করে উ”ু জমিতে বীজতলা স্থাপন করছি। তাই বন্যার পানি স্থায়ী হলেও আউশ কিংবা আমন ধানের চারার কোন সংকট পড়বে না।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শিল্পী রায় বলেন বন্যার পানি প্রবেশ করে যেসব পুকুর ভেসে গেছে তাদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করবো। আর বন্যা শেষে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষীদের চ’ড়ান্ত তালিকা করে উপড়মহলে পাঠাবো। যদি কোন সরকারি অনুদান আসে তাহলে তা ক্ষতিগ্রস্থ্য মৎস্যচাষীদের মাঝে বিতরন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন এই বেরিবাঁধটির সংস্কার করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু তাদের অবহেলার কারণে প্রতিবছরই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধটি ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে দুই উপজেলার শতাধিক গ্রাম। আর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারন মানুষরা। তবে ইতিমধ্যেই এবার ভেঙ্গে যাওয়া অংশটিকে মেরামত করে পানি প্রবেশ বন্ধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন