মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়

স্বাস্থ্যখাত সিন্ডিকেটে বন্দি, উপেক্ষিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০৫ এএম

বিতর্কিত রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে সমঝোতার সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উপস্থিতি ও জানা না জানা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক গত শনিবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। পরদিন অধিদফতরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা জানতে চায় মন্ত্রণালয়। আর এরই অংশ হিসেবে গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যাখাও দেয় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক।

এদিকে চুক্তির বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে শুধু দাওয়াত দেয়া হয় অনুষ্ঠানে থাকার জন্য। ওই দিন একই স্থানে অপর একটি অনুষ্ঠান শেষে দেশের করোনা পরিস্থিতিতে ভালো একটি উদ্যোগ ভেবে উপস্থিত অন্যান্যদের নিয়ে তিনি ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। কে বা কার মাধ্যমে বিতর্কিত রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে তা স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানতেন না বলেও সূত্র জানায়। মন্ত্রী নিজেও সে কথা মিডিয়ার কাছে স্বীকার করেছেন।

তবে অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি জানা সত্তে¡ও স্বাস্থ্য অধিদফতর হাসপাতালটির সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়েন বর্তমান স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক আমিনুল হাসান। তার যোগসাজশেই রিজেন্টের সঙ্গে এই চুক্তি হয়। সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঊর্ধ্বতনরাও রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করতে চাননি। কারণ এই হাসপাতালটি মানসম্পন্ন ছিলো না এবং মানুষের কাছে পরিচিতও ছিল না। কিন্তু আমিনুল হাসানের পীড়াপিড়িতে অধিদফতর বাধ্য হয় চুক্তি করতে। যদিও এ বিষয়ে আমিনুল হাসান ইনকিলাবকে বলেছেন, সবার সম্মতিতেই চুক্তি হয়েছে। এটা তার একার বিষয় ছিলো না। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে আড়াল করে একটি সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন বিভাগে ক্রয়সহ অন্যান্য কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন ক্রয় ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা বিভিন্ন দাফতরিক দলিল থেকে দেখা যায়, ওই সব চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি), স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, পরিচালক হাসপাতাল ও ক্লিনিককে অনুলিপি দেয়া হলেও দেয়া হচ্ছে না স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। কেন্দ্রীয় ওষুধাগারের ক্রয়সহ বিভিন্ন চিঠি ইনকিলাবের হাতে রয়েছে। তাতে এ তথ্য উঠে এসেছে। অথচ দেশের স্বাস্থ্যখাতের ভালো-মন্দের জন্য জবাবদিহি করতে হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেই। আর তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এভাবে উপেক্ষা করে বিভিন্নভাবে বিপাকে ফেলতে চাচ্ছে ওই সিন্ডিকেট।

সূত্র মতে, হাসপাতাল পরিচালনার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এবং প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি সিলগালা করা রিজেন্ট হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান কিছু সরকারি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি রয়েছে। সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরোজ ডিপো (সিএমএসডি) পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান সম্প্রতি এসব সরকারি মালামাল সিএমএসডিতে ফেরত আনার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

গত ১৩ জুলাই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে লেখা এক স্মারকে তিনি জানান, গত ৭ মে এসব মালামাল সিএমএসডি থেকে রিজেন্ট হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তিনি জরুরি ভিত্তিতে এসব মালামাল ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিবকে অনুরোধ জানান। স্মারকে তিনি বলেন, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় বিভিন্ন ধরণের অনিয়ম পাওয়া গেছে। কোভিড-১৯ এর পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ইত্যাদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। হাসপাতাল পরিচালনার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে অবৈধ ঘোষণা ও সিলগালা করে। এ হাসপাতালের অনেক কর্মী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। বর্তমানে হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। ইতোপূর্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিবন্ধন না থাকা সত্তে¡ও অবৈধ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বক্ষরিত হয়। গত ৭ মে সিএমএসডির সাবেক প্রশাসন রিজেন্ট হাসপাতালের অনুক‚লে দুইটি ডায়ালাইসিস মেশিন, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ডিসটিলড) একটি, আইসিইউ ভেন্টিলেটার দুইটি এবং দুটি ডায়ালাইসিস বেড প্রদান করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সিলগালা অবস্থায় আছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকলে সরবরহকৃত মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। তাছাড়া সরকারি অর্থে ক্রয়কৃত সরকারি মালামাল একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার কোনভাবেই সমীচীন ও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই জরুরি ভিত্তিতে উক্ত মলামাল সিএমএসডিতে ফেরত আনা দরকার।

স্মারকের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যলায়ের মুখ্য সমন্বয়ক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক সমূহ)’ কে পাঠানো হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে অনুলিপি পাঠানো হয়নি।

একইভাবে আবু হেনা মোরশেদ জামান স্বাক্ষরিত ইনকিলাবের হাতে আসা অপর একটি স্মারকেও একই চিত্র উঠে এসেছে। ওই স্মারকে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় টেস্ট কিটের বাজেট/বরাদ্দ প্রদানের বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ঘটনাত্তোর অনুমোদন প্রদানের বিষয় উল্লেখ করা হয়। ওই স্মারকেও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যলায়ের সচিব, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে অবহিত করার কথা বলা হয়। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Abdul Mumin Rajon ১৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
যার লজ্জা নাই তার ঈমান নাই,
Total Reply(0)
Saddam Hossain Rahul ১৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
কথা সত্যি
Total Reply(0)
Md Nazmul Hossain ১৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৬ এএম says : 0
বুঝতে হবে.। আগে বাশের থেকে কঞ্চি হইত.। এখন ডিজিটাল যুগে কঞ্চি থেকে বাশ হয়
Total Reply(0)
Robiul Hassan Choton ১৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
সে কথা আপনি প্রধানমন্ত্রীকে আগে বলেন নাই কেনো। আপনাকে মন্ত্রী বানিয়েছেন কেনো। আপনি সমাধান করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীকে বলে পদত্যাগ করতেন। তখনই প্রধানমন্ত্রী সরাসরি পদক্ষেপ নিতেন। আপনি তা না করে তাদের সাথে এক সাত হয়ে শাস্ত খাত টা ধংস করে দিলেন।
Total Reply(0)
Md Hamidul ১৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলো বাঁশ আর সাহেদ হলো কঞ্চি
Total Reply(0)
Zamal U Ahmed ১৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোটেও উপেক্ষিত নয়। তার ছেলে সিন্ডকেট সদস্য বলে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি সবই জানেন, শুধু অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর লোভের কারণে নীরব ভূমিকা গ্রহণ করতেন বলেই মনে হচ্ছে।
Total Reply(0)
Samim Ahmed ১৬ জুলাই, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
কী অদ্ভুত দেশ! একজন মানবিক মানুষ করোনা পরীক্ষার জন্য অত্যাধুনিক হাসপাতাল, একঝাক দক্ষ ও নিবেদিত চিকিৎসক, টেস্টিং কিটসহ প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রপতি নিয়ে বসেছিলেন, কিন্তু তাঁকে পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়নি। অপরদিকে একজন ভণ্ড, প্রতারক যার হাসপাতালের লাইসেন্স নেই, সুস্থ্য ডাক্তার নেই, কিট নেই, পিসিআর মেশিন নেই- তাকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই হলো আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
Total Reply(0)
hedaet ১৬ জুলাই, ২০২০, ৭:২৪ এএম says : 0
আজব দেশ বাংলাদেশ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন