বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোটি মানুষের ভরসা একটি মাত্র ল্যাব

দক্ষিণাঞ্চলে করোনা শনাক্তে ধীরগতি

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

দক্ষিণাঞ্চলে করোনা শনাক্তের বিষয়টির কোন অগ্রগতি না হওয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষ শনাক্তের আগেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার এক কোটি মানুষের জন্য একটি মাত্র পিসিআর ল্যাবে কাজ করছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক করোনা সন্দেহভাজন রোগী এ ল্যাবে এসে ভীড় করলেও পরীক্ষার সুযোগ না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এমনকি ভোলার সাগর বেষ্টিত মনপুরাসহ বরগুনার পাথরঘাটার সাগর পাড়ের মানুষও এ ল্যাবটির ওপর নির্ভরশীল। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ করোনা উপসর্গের রোগীকে পরীক্ষা করাতে ৮-১০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
অথচ দেশের প্রতিটি জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষেত্রে বিষয়টি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ভোলাতে দিন কুড়ি আগে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হলেও কারিগরি ত্রুটিতে চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। এমনকি ত্রুটিপূর্ণ এ মেশিনটি পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হতে পারে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর থেকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে আরো একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও সে ক্ষেত্রেও কোন অগ্রগতি নেই। পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পটুয়াখালীতেও অনুরূপ ল্যাব স্থাপনের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞগণ। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও কাজে অগ্রগতি নেই।
বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ভোলা ও পটুয়াখালীতে অবিলম্বে ল্যাব চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশের নমুনা পরীক্ষা সহজতর হবে। পাশাপাশি শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় ল্যাব চালু হলে বাড়তি কোন জনবল ছাড়াই বর্তমানের দ্বিগুণ নমুনা পরীক্ষা সম্ভব হতো। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এ ল্যাবটিতে প্রতিদিন ২শ’ থেকে সোয়া ২শ’র বেশি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। উপরন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্র্মচারীদের নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়ায় প্রতিদিন সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ সাধারণ মানুষ ল্যাবটিতে ভীড় করলেও তাদের ৮-১০ দিন পরের তারিখ লিখে একটি সিøপ ধরিয়ে দিচ্ছেন।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, এখানে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ কমপক্ষে ৩০ জন কর্মী প্রয়োজন হলেও কর্র্মরত মাত্র ১০ জন। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১২০টি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৫৯ জন। ফলে অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এনেও কাজ চালানো যাচ্ছে না।
গত ৭ এপ্রিল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে পিসিআর ল্যাবটি চালু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার নমুনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। মৃত্যুর সংখ্যাও প্রায় ৯০।
পরীক্ষার সীমাবদ্ধতায় দক্ষিণাঞ্চলে করোনাভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি ক্রমে বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, ‘যত বেশি পরীক্ষা, তত বেশি রোগী শনাক্তের পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসাসহ আক্রান্তদের আইসোলেশনে রাখা সম্ভব হতো। এতে করে সংক্রমণকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনাও সম্ভব হতো। তবে এজন্য প্রয়োজন দ্রুত রোগী শনাক্তের পাশাপাশি আইসোলেশনসহ চিকিৎসা নিশ্চিত করা’।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন