মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

শিগগিরই ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে ব্যবস্থা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২০, ৯:৩৯ পিএম

‘ফ্লোর প্রাইস এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা’ মন্তব্য করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, শেয়ারবাজারকে সঠিকভাবে চলতে (মুভ) দেয়া উচিত। কিছু বিষয় নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলে যতদ্রুত সম্ভব ফ্লোর প্রাইসের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শনিবার (১৮ জুলাই) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) আয়োজিত ‘শেয়ারবাজারে করোনাভাইরাসের প্রভাব ও পুনরুদ্ধারের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাংলাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ পতন দেখা দেয়। এই পতন ঠেকাতে মার্চের ১৯ তারিখ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দাম) নির্ধারণ করে নতুন সার্কিট ব্রেকার চালু করা হয়। এতে দরপতন ঠেকানো গেলেও দেখা দেয় লেনদেন খরা। এর প্রেক্ষিতে একটি পক্ষ থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার জন্য নানামুখী চাপ দেয়া হচ্ছে।

সিএসই আয়োজিত সেমিনারেও ফ্লোর প্রাইস নিয়ে সমালোচনা করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ফ্লোর প্রাইস এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা, এটা আমরাও বুঝি। বাজারকে ঠিকভাবে মুভ করতে দেয়া উচিত। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। কিছু বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলে যতদ্রুত সম্ভব আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব।

‘বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকলে টাকার অভাব হবে না’ উল্লেখ বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, মজার বিষয় হচ্ছে আমরা যখন যোগদান করেছিলাম তখন লেনদেন ছিল ৫০ কোটি টাকার মতো। এখন সেটা তিনশ কোটি টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে, এটা আশার ব্যাপার। আমরা আশা করি শিগগিরই এটা পাঁচশ কোটি টাকার ওপরে চল যাবে। আসলে বাজারের ওপর বিশ্বাস বা আস্থা আসলে টাকার অভাব হবে না।

তিনি বলেন, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করে ফেলেছিল। ডিএসইর সহায়তায় আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। বাজারে মেসেজ গেছে কেউ অনিয়ম করলে পার পাবে না।

তিনি বলেন, ব্যাংকের ২০০ কোটি টাকার যে তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছি। আশাকরি এই প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যাবে।

সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন- মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সভাপতি নিহাদ কবির, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী, ডিএসইর এমডি কাজী সানাউল হক, সিএসইর এমডি মামুন-উর-রশীদ, আইসিবির এমডি আবুল হোসেন, ডিবিএ সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হুসাইন প্রমুখ।

 

নিহাদ কবির বলেন, বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার মতো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম বলে অভিযোগ করে। তাদের মতে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ৭-৮টা কোম্পানি আছে বিনিয়োগ করার মতো। আমাদের শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আসে না, এর পেছনে অন্যতম কারণ সঠিক মূল্যায়ন না পাওয়া। এখানে লোকসান করা কোম্পানির দর বাড়ে।

 

তিনি বলেন, রেগুলেটরদের যথেষ্ট ইন্টারফেয়ার করার অভিযোগ আছে। শেয়ার বিক্রি না করার জন্য ফোন দিয়ে নির্দেশ দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে। কিন্তু ব্রোকারেজ হাউজ গ্রাহকের নির্দেশে শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য। আগামীতে এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আনার জন্য সহায়ক পলিসির ঘাটতি রয়েছে। এটা সমাধান করা দরকার। এছাড়াক্ষুদ্র ও বড় সকল বিনিয়োগকারীর স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে হবে।

 

বিএপিএলসির সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, ব্যাংকগুলোর সমস্যা নন পারফরমিং লোন (এনপিএল)। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কোনো ব্যাংক সমস্যায় আছে এমন কোনো তথ্য আমার জানা নেই। অথচ ব্যাংকগুলোকে ইক্যুইটির ২৫ শতাংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এটা ঠিক না। বিনিয়োগ কী পরিমাণ করবে, সেটা ব্যাংকের ওপরই ছেড়ে দেয়া উচিত।

 

তিনি বলেন, অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনলে শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। তাই যখনই অনিয়ম হবে, তখনই শাস্তি প্রদান করতে হবে। শেয়ারবাজারে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তারল্য। তবে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) কাছে টাকা নেই। যদিও এরা প্রাইমারি ইনভেস্টর।

 

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হুসাইন বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে। এটা তুলে দেয়ার ব্যাপারে প্রত্যেকে বলেছেন। খবরের কাগজে মিডিয়ায় বহু লেখালেখি হচ্ছে। যারা বোঝেন, তারা সবাই বলেছেন এই ফ্লোর প্রাইস যদি থাকে, তাহলে শেয়ারবাজার শেষ হয়ে যাবে।ক্ষুদ্র কিছু বিনিয়োগকারী বুঝতে পারে না। তাদের ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসির অভাব আছে।

 

তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে মার্কেটে তারল্যের মন্দাবস্থা। এছাড়া এই পদ্ধতির কারণে ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এটি যদি আর কয়েক মাস থাকে, তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক স্টেকহোল্ডাররা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে লেনদেন হচ্ছে না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না। এদিকে বড় করে খেয়াল রাখা দরকার।

 

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, ২০১০ সালের ধস শুরুর পর থেকেই আইসিবি বিনিয়োগ করে আসছে। নিজের ব্যবসার কথা চিন্তা না করে শুধু শেয়ারবাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য বিনিয়োগ করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা এনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে আইসিবি। তবে ২০২০ সালে এসে আইসিবি বিনিয়োগ সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

 

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আইসিবির বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। এটা এখন বাড়ানোর জন্য আইসিবির গৃহীত ঋণের সুদহার কমানো উচিত। আর তিন মাস অন্তর সুদ প্রদানের পরিবর্তে প্রতিবছর প্রদানের সুযোগ করে দিতে হবে। এই মুহূর্তে শেয়ার বিক্রি করে সুদ প্রদান করা সম্ভব না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন