শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাধা কাটছে

প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মন্ত্রিসভায় আইনের সংশোধনী অনুমোদন
বিশেষ সংবাদদাতা : পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে পার্বত্য এলাকায় দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে ভূমি নিয়ে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি হবে বলে সরকার মনে করছে। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ থেকে আইনটিতে ২৩টি সংশোধনীর প্রস্তাব পাঠানো হয়। এরপর সেগুলো পর্যালোচনা করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে ১৪টি সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আগে পাঁচ সদস্যের কমিশন কোনো বিরোধ নিষ্পত্তি করতে না পারলে কমিশনের চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হতো। কিন্তু সংশোধনীর ফলে পাঁচ সদস্যের কমিশনে চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। আইনের সংশোধনীতে একটি নতুন ধারা সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের দপ্তরে সচিব বা অন্যান্য কর্মকর্তার পদে উপজাতিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর সে ক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দারা অগ্রাধিকার পাবেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ ব্রিফিংয়ে সংশোধনীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। আগে কমিশন চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হতো। আইন সংশোধন হলে চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সিদ্ধান্ত কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে। চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে আর কোনো বিষয় চূড়ান্ত হবে না।
ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে আইনটি পাসের জন্য সংসদে যাবে জানিয়ে সচিব বলেন, সংসদ যেহেতু দুই মাস পরে বসবে, তাই ইমারজেন্সি বিবেচনায় এটাকে অধ্যাদেশ আকারে জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইন সংশোধনের ফলে কমিশন চেয়ারম্যানের ক্ষমতা খর্ব হলো কিনাÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঠিক খর্ব বলি না, একটু মডিফাই করা হয়েছে, এখন একক সিদ্ধান্ত নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সব প্রস্তাবই যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সামরিক-বেসামরিক অন্যদেরও মতামত নেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং সাংবাদিকদের বলেন, এ সংশোধনীর ফলে পার্বত্য এলাকায় ভূমি বিরোধ নিয়ে যে অচল অবস্থা ছিল, তা নিরসন হবে। তিনি বলেন, শিগগিরই এটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে এবং আইনের আওতায় নীতিমালা প্রণয়ন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমিসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটে। সেই চুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ের ভূমির অধিকার নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে এই কমিশন গঠন করা হয়।
তবে কমিশনের চেয়ারম্যানের হাতে একক সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা থাকায় ওই কমিশন কার্যকর হচ্ছিল না বলে অভিযোগ করে আসছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদেও চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), যিনি জনসংহতি সমিতির সভাপতি।
মিশন স্টেটমেন্ট
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘মিশন স্টেটমেন্ট’ প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রিসভায় ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রস্তাব মন্ত্রিসভার সোমবারের বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০০০ সালে যখন মিশন স্টেটমেন্ট তৈরি করে, তখন তা করা হয় অনেক বড় আকারে। তখন বেইজিং প্ল্যাটফর্ম ইস্যু ছিল, তার আলোকে ওটা করা হয়েছিল। এখন মিশন স্টেটমেন্ট অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে। এখন এক লাইনের মিশন স্টেটমেন্ট উনারা করেছেন। এজন্য আগেরটা প্রত্যাহার করে নতুন করে বহাল করতে চেয়েছেন।
এছাড়া জাতীয় ই-সেবা আইন- ২০১৫ এর খসড়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় ইতোপূর্বে নেয়ার সিদ্ধান্তও বাতিলের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ই-সেবাটা ছোট পরিসরের আইন হয়ে যায়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা বড় আইন করবে যার নাম হবেÑ ন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার অ্যাক্ট (এনইএএ)। এই আইনের মধ্যে সবকিছু আসবে। ই-সেবাও এর মধ্যে আসবে। যেহেতু নতুন করে বড় আইন করা হচ্ছে, সেজন্য ছোট আইনটি প্রত্যাহার করা হলো বলে মন্তব্য করেন সচিব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন