বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২৬ জেলায় বন্যা

পানিবন্দি ৩৫ লাখ মানুষ, ত্রাণ অপ্রতুল বৃষ্টি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে : আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২০, ১২:২৫ এএম

সারাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। চলমান বন্যা প্রায় এক মাস হতে চলল। এই স্থায়িত্ব আরও মাসখানেক হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এরই মধ্যে দেশের ২৬টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। প্রধান প্রধান সব ক’টি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। প্রায় ৩৫ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে বহু বাঁধ। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদিপশু, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, থাকা-খাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বানভাসিরা। পানি যত বাড়ছে বিভিন্ন স্থানে তত তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় অনেক স্থানে বানভাসিরা ত্রাণ পাচ্ছে না। বানভাসিদের দুর্ভোগ এখন চরমে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, এই বৃষ্টি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও বিস্তৃত ও ব্যাপক হবে। এছাড়া ভারতের আসাম মেঘালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে এবং বন্যার অবনতি হচ্ছে। ভারতীয় অংশের পানিতে দ্রুতই দেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদফতরের গাণিতিক আবহাওয়ার মডেলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও তিস্তা, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজান মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদী এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অববাহিকার নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে হালকা থেকে মাঝারি ধরণের টানা বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

দেশের বন্যাকবলিত জেলাগুলো হচ্ছে- কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, নওগাঁ, রংপুর, নাটোর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, ঢাকা ও ফেনী। বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকার পূর্বাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। টানাবৃষ্টিতে ডেমরা এলাকার ডিএন্ডডি বাঁধও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের নাপিতপাড়া গ্রামের পাশে পদ্মা রক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন শুরুর পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও ব্যাগ ফেলে গ্রাম রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, জেলার সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে ৩য় দফায় প্লবিত হয়েছে সিলেট-সুনামগঞ্জ নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে প্লাবিত হয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল। পানিতে ডুবে গেছে ফসল, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, ভেঙে গেছে বাঁধ, রাস্তাঘাট পানির নিচে।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়ায় বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ব্রীজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। এদিকে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোল এলাকায় ভাঙা রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে চিলমারী ও উলিপুর উপজেলার আরো ১০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত করেছে।

লালমনিরহাট থেকে মো. আইয়ুব আলী বসুনীয়া জানান, ৩ দিনের ভারি বর্ষণ ও ভারতের ঢলে তিস্তার পানি ফের বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো জলকপাট। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবার।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে মোশাররফ হোসেন বুলু জানান, বন্যা পরিস্থিতি অবার অবনতি হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি ২/৩ দিন আগে একটু কমলেও লাগাতার বর্ষনের কারণে আবার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবন্দির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। ভয়াবহ বন্যায় বানভাসিদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ৩৩টি ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের এক লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জামালপুর থেকে নুরুল আলম সিদ্দিকী জানান, জামালপুরে তিন দফা বন্যায় দীর্ঘ ২৫ দিন যাবৎ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষ। গতকাল যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটা উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সুনামগঞ্জ থেকে হাসান চৌধুরী জানান, তৃতীয় দফা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ। গতকাল সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে ৮ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদ সীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, পদ্মার পানি বিপদসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ফরিদপুর সদর উপজেলা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের শাতাধিক গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় পানির নিচে তলিয়ে গেছে ২৫টির অধিক স্কুল ও মাদ্রাসা।

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান জানান, পদ্মা-মেঘনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে গ্রাম অঞ্চল ছাড়াও শহরতলির রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পদ্মা-মেঘনায় ঘূর্ণীস্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার রাজ রাজেশ্বর ও হাইমচর উপজেলার নীলকমল ও মধ্যচরে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, বন্যার পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় শিবচর ও মাদারীপুর সদর উপজেলার বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত তিনদিন ধরে হুহু করে পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

শরীয়তপুর থেকে মো. হাবিবুর রহমান হাবীব জানান, সদরসহ নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ডুবে জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

শেরপুর থেকে মো. মেরাজ উদ্দিন জানান, বৃষ্টিপাত টানা বর্ষন ও ভারতের ঢলের পানির কারণে গত ২৪ ঘন্টায় জেলার নদনদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যহত আছে। ব্রক্ষপুত্র, চেল্লাখালী ও দশানী নদীর বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে মো. হাফিজুর রহমান মিন্টু জানান, শীতলক্ষার পানি বিপদসীমার সাত সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। শহরের প্রধান সড়ক সহ পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন রাস্তাঘাট।

মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থেকে ইসমাইল খন্দকার জানান, জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। ভাগ্যকুল পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার এবং মাওয়া পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী থেকে মো. ওমর ফারুক জানান, জেলার ৩ উপজেলা ফুলগাজী পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মৎস্যঘের ও বীজতলা এবং নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Joy Sarkar ২২ জুলাই, ২০২০, ২:৩৯ এএম says : 0
এখনো সময় আছে নদী খাল দখলমুক্ত করুন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ।সময় হারায় গেলে তখন আর কিছু সম্ভব হবেনা। নদী-খাল প্রকৃতি দয়াকরে বাঁচান প্রকৃতি বাঁচান।
Total Reply(0)
M Ismail Emon ২২ জুলাই, ২০২০, ২:৪০ এএম says : 0
আমরা দাদাদের আশীর্বাদক্রমে সিঙ্গাপুর আছি
Total Reply(0)
MD Rahidul Islam Rashel ২২ জুলাই, ২০২০, ২:৪০ এএম says : 0
মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেফাজত করুক আমিন
Total Reply(0)
Syeda Nazmoon Naher ২২ জুলাই, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
Allah tumi shobai k rohom koro Ameen
Total Reply(0)
ইয়াছিন আলি ২২ জুলাই, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
আল্লাহ্ আমাদের প্রতি রহমান করো
Total Reply(0)
Md Rajjak ২২ জুলাই, ২০২০, ২:৪১ এএম says : 0
এটা ভারতের কিরমিনালির কারনে হয়েছে।
Total Reply(0)
Mohammad Delowar ২২ জুলাই, ২০২০, ২:৪২ এএম says : 0
Why our government not talking with Indian government to stop the water
Total Reply(0)
নাঈম ২২ জুলাই, ২০২০, ২:৪৩ এএম says : 0
স্থায়ী বাধ নির্মাণের ব্যবস্থা করতে হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন