মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডুবন্ত ঢাকায় ভোগান্তি

টেকসই সমাধানের উদ্যোগ নেই খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও স্যুয়ারেজ লাইন কঠিন বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

দুদিনের টানা বৃষ্টিতে ডুবে গেছে রাজধানী ঢাকার অর্ধশতাধিক এলাকা। পানি নিষ্কাশনের অধিকাংশ চ্যানেল অকার্যকর হয়ে পড়ায় এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এতে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে মানুষের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও পানি ঢুকে পড়ছে। সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। জমে থাকা পানির কারণে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম খালগুলো অবৈধ দখল ও কঠিন বর্জ্যে ভরাট হয়ে আছে। নগরের খাল, ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও ব্রিক স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে পানি নদীতে যেতে পারছে না। এতে করে ভারি বর্ষণে নগরীর অলিগলি, প্রধান সড়ক, ফুটপাত পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
নগর বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে বিচ্ছিন্ন পরিকল্পনা নয়, বরং কোন এলাকার পানি কোন পথ দিয়ে বের করে দিতে হবে, তা নিয়ে সব সংস্থাকে একসঙ্গে একটি মহাপরিকল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, যতদিন খাল ও ড্রেন কেন্দ্রিক চিন্তা থেকে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও ঢাকা জেলা প্রশাসনকে বের করে আনা যাবে না, ততদিন ঢাকার পানিবদ্ধতা দূর হবে না। গত সোম ও মঙ্গলবারের বৃষ্টিতে রাজধানীর অর্ধশতাধিক এলাকা ডুবে যায়। গতকাল বুধবার তেমন বৃষ্টি না হলেও অনেক এলাকা থেকে এখনও পানি নামেনি। আগের দিন কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর অবধি পানি ছিল। একদিন পর এসব এলাকা থেকে পানি পুরোপুরি নামেনি। পুরাতন ঢাকার আলুবাজার এলাকায় গতকাল বিকালেও নৌকা চলতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিআরটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের কারণে রাজধানীর অনেকাংশে পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে পড়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মেট্রোরেলের উন্নয়ন কাজের কারণে মিরপুর-১০ থেকে আগারগাঁও তালতলা পর্যন্ত ওয়াসার ড্রেনেজ সিস্টেম অকেজো হয়ে ছিল অনেকদিন। বিজয় সরণির ‘বিমান চত্বর’ থেকে খামারবাড়ি হয়ে কাওরান বাজার পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ সিস্টেম অকেজো। ওই ড্রেনেজ সংস্কার করে দেয়ার জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, টিসিবি ভবনসংলগ্ন ওয়াসার ড্রেনেজ ছিল; যেখান থেকে পানি হাতিরঝিলে যেত। সে সময়ে কারওয়ান বাজারে কোনো পানি জমতো না। এখন পানি নিষ্কাশন ড্রেন ঘুরিয়ে দেয়ায় হাতিরঝিলে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে মিরপুর সাংবাদিক কলোনি এলাকার বিভিন্ন অলিগলি তলিয়ে যায়। স্থানীয়রা জানান, এলাকার খালটি ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। এ কারণে বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় রাস্তাঘাট ডুবে যায়। কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প গ্রহণ করেছে ঢাকা ওয়াসা। তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি। এ কারণে দুই দিনের বৃষ্টিতে মিরপুরের সেনপাড়া ও মনিপুরীপাড়ায় ব্যাপক পানি জমে।

এদিকে, বসুন্ধরা সিটির পেছনে অবস্থিত তেজতুরী বাজারের গার্ডেন রোড এলাকা, পূর্ব রাজাবাজার, পশ্চিম রাজাবাজার, কাঁঠালবাগান ও গ্রিন রোড এলাকায় পানি জমেছে। স্থানীয়রা জানান, ভারী বৃষ্টি হলে হাতিরঝিলের গেটগুলো সব পানি কাভার করতে পারে না। তখন এলাকা তলিয়ে যায়। জানা গেছে, ৯টি মেকানিক্যাল স্ক্যানারের মাধ্যমে হাতিরঝিলের আশপাশের এলাকার বাসাবাড়ির ও বৃষ্টির পানি ঢাকা ওয়াসার ড্রেনের মাধ্যমে হাতিরঝিলে অপসারিত হয়। কিন্তু নগরজুড়ে ৫০ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি কিংবা টানা বর্ষণ হলে এই স্ক্যানারগুলো পানির চাপ সামলাতে পারে না। তখন পানি জমাট বেঁধে পুরো এলাকা তলিয়ে যায়। গত দুদিনের বৃষ্টিতেও তাই হয়েছে।

অন্যদিকে, মেরুল বাড্ডা এলাকার নিমতলী, আনন্দনগর ও বৈঠাখালী এলাকা তলিয়ে গিয়েছিল। সড়ক থেকে শুরু করে আসপাশের বাসাবাড়ি এবং দোকানপাটেও পানি উঠে পড়ে। ডিএসসিসির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ধানমন্ডি-২৭, রাপা প্লাজা, ধানমন্ডি-৮/ এ স্টাফ কোয়ার্টার মোড়, কাঁঠালবাগান, গ্যাস্ট্রোলিভার গলি, কলাবাগান ডলফিন গলি, গ্রিনরোড, পানি নিষ্কাশন হয় পান্থপথ বক্স কালভার্ট-হাতিরঝিল হয়ে রামপুরা খাল দিয়ে বালু নদীতে। কিন্তু হাতিরঝিলে পানি প্রবেশের দরজাগুলো অনেকটা বন্ধ থাকায় এলাকায় পানিবদ্ধতা দেখা দেয়। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে আজিমপুর থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সড়ক তলিয়ে যায়। এই পানি আশপাশের বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও ঢুকে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এই এলাকাবাসীকে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিউমার্কেট পশ্চিম-দক্ষিণ পাশের বটতলা, বিজিবি-৪ নম্বর গেটের পানি বিজিবি ৩ নম্বর গেট, নাজিমউদ্দিন রোড, হোসেনি দালান, চকবাজার, লালবাগ, কাজী আলাউদ্দিন রোড ও বংশালের পানি নিষ্কাশন হয় বুড়িগঙ্গা সুইসগেট হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার ড্রেনগুলো অকার্যকর রয়েছে। এ কারণে পানি জমে ভোগান্তি বেড়েছে।

এদিকে, পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার এলাকা, সিদ্দিকবাজার মোড়, নাজিরাবাজার, নাজিম উদ্দিন রোড ও আলুবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পনি জমে আছে। ডিএসসিসি জানিয়েছে, এসব এলাকায় বড় সারফেস ড্রেন ও পাইপ ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মিয়াজান গলি, মাদ্রাসার গলি, ঋষিপাড়া, কেএম দাস লেন সংলগ্ন রাস্তা, আরকে মিশন রোড, অভয়দাস লেন, গোপীবাগ বাজার রোড এলাকায় নতুন ড্রেনেজ লাইন করার পরেও পানি সহজে নামছে না। ডিএসসিসি’র এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, সেগুনবাগিচা, পল্টন, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী, সার্কিট হাউজ রোড, রাজারবাগ, শান্তিবাগ, ফকিরাপুল ও আরামবাগের পানি সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট-কমলাপুর পাম্প-মানিক নগর খাল-জিরানি খাল ও মান্ডাখাল হয়ে বালু নদী ও বুড়িগঙ্গায় চলে যায়। কিন্তু কমলাপুরে অবস্থিত ওয়াসার পাম্পের ক্যাপাসিটি বেশি নয়। তাই বৃষ্টি হওয়ার পর এলাকার পানি নিষ্কাশন হতে সময় লাগছে। সে কারণে বৃষ্টিতে এসব এলাকা ডুবে যায়।

কাপ্তানবাজার, লক্ষীবাজার ও আগামাসী লেনের পানি নিষ্কাশন হয় ইংলিশ রোড-ধোলাইখাল বক্স কালভার্ট হয়ে সূত্রাপুর পাম্পে। জুরাইন, পোস্তগোলা, মুরাদপুর, শ্যামপুর, কদমতলা ও দয়াগঞ্জ রেল ব্রিজের পানি নিষ্কাশন হয় জিয়া সরণি খাল-রসুলবাগ-শিমরাইল পাম্প (পানি উন্নয়ন বোর্ড) হয়ে শীতলক্ষ্যায়। এছাড়া মীর হাজীরবাগ এলাকার পানি নিষ্কাশনের কোনও ব্যবস্থা নেই। এসব এলাকার কালভার্ট দীর্ঘদিন পরিস্কার না করায় পানি নামতে পারে নি। এতে করে এসব এলাকার রাস্তা ডুবে পানি ঘরে ঢুকেছে।

এসব প্রসঙ্গে নগর পরিকল্পনাবিদ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ঢাকাকে পানিবদ্ধতামুক্ত করতে হলে বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনা দিয়ে সাময়িক সমাধান হলেও টেকসই সমাধান হবে না। কোন এলাকার পানি কোন পথ দিয়ে কীভাবে আউট করতে হবে সে বিষয়ে আগে সব সংস্থার যৌথ পরিকল্পনা করতে হবে। এরপর কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে একেক এলাকা নিয়ে একেক বছর সমস্যায় থাকতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
সাবিত আহমেদ ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
সরকার নৌকা কে ঢাকার স্থায়ী যানবাহন করতে চলেছে। এতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
Total Reply(0)
সাবিত আহমেদ ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
সরকার নৌকা কে ঢাকার স্থায়ী যানবাহন করতে চলেছে। এতে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
Total Reply(0)
মোঃ ওসমান খান ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
সত্যিই তো এখন নৌকা ছাড়া গতি নেই
Total Reply(0)
রাজ কুমারী ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
হে মাবুদ তুমি সবাইকে শান্তিতে থাকার তৌফিক দান কর
Total Reply(0)
Nabi Newaz ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১২ এএম says : 0
এই বিষাক্ত পানি থেকে ডায়রিয়া ম্যালেরিয়া মহামারীর উৎপত্তি ঘটবে।
Total Reply(0)
Md Naimur Rahman Murad ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
ওমা এটা আমাগো সিঙ্গাপুর না।।।।ও হ্যা সিঙ্গাপুর শহর তো দিনে ২ বার ধৌত করা হয়।।এই ধৌত করতে গিয়েই মনে হয় জলাবদ্ধতা হয়েছে
Total Reply(0)
Md Naimur Rahman Murad ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
ওমা এটা আমাগো সিঙ্গাপুর না।।।।ও হ্যা সিঙ্গাপুর শহর তো দিনে ২ বার ধৌত করা হয়।।এই ধৌত করতে গিয়েই মনে হয় জলাবদ্ধতা হয়েছে
Total Reply(0)
Md Yousuf Hossen ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
প্রতিবছরই তো পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার বাজেট হয় তাহলে এই দুর অবস্থা কেন
Total Reply(0)
Abir Chowdhury ২৩ জুলাই, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
দুর্নীতির জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত/স্বনিয়ন্ত্রিত এলিট এনকাউন্টার টাস্কফোর্স গঠন করে মাঠে ছেড়ে দিলেই একবছরের মাথায় বাংলাদেশ পরিবর্তন হয়ে যাবে। সব সমস্যা পিছনে নিয়ে গেলে দুর্নীতিতে গিয়ে ঠেকে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন