মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন : করোনা আক্রান্তকে সাহায্যকারী কি কিয়ামতে নিরাপদ থাকবে?

| প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

উত্তর : দুনিয়াতে আল্লাহতায়ালা যা কিছু প্রেরণ করেন। ইহার সকল কিছুতেই মানুষের জন্য কিছু না কিছু কল্যাণের রয়েছে। অযথা আল্লাহতায়ালা কিছুই করেন না। করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের মধ্যে কি কি শিক্ষা বা কল্যাণ রয়েছে, তা হয়তো আমরা অনেকে বুঝতেছিনা কিংবা আমাদের বুঝে আসতেছে না। করোনা ভাইরাসের মহামারীতে আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে সাহায্য সহযোগীতা করার মধ্যে আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে মানবতা, ধৈর্য্য ও পরোপকারের শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি আমাদের আমল নামায় নেকী বৃদ্ধি করে দিচ্ছেন। যা কিয়ামতের দিনের ভয়াবহ আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় তাদের সম্পদ খরচ করে, তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি বীজের মতো, যা যমীনে বপন করার পর তা থেকে সাতটি ছড়া জন্মে এবং প্রতিটি ছড়ায় একশ করে দানা থাকে। আর এভাবে আল্লাহ যাকে চান তার জন্য আরো বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, মহাজ্ঞানী।’ ( সূরা বাকারা:২৬১)। হযরত ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) বলেছেন,‘এক মুসলমান অপর মুসলমনের ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে এবং তাকে অপমানিত করবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাবে আল্লাহ তার প্রয়োজন মেটাতে অগ্রগামী হবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ব্যক্তির একটি বিপদ দূর করতে সাহায্য করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে একটি বিপদ থেকে মুক্ত রাখবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার অপরাধ গোপন রাখবেন।’(বোখারি:২৪৪২)।
সৃষ্টির কল্যাণ ও মানবতার ধর্ম হলো ইসলাম। করোনা আক্রান্ত প্রতিবেশির পাশে দাড়াঁনোর ইসলামের অনুসারী একজন মুমিনের একান্ত অপরিহার্য কর্তব্য। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কল্যাণমূলক ও খোদাভীরুতার কাজে পরষ্পর সহযোগী হও, মন্দ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরস্পর সহযোগী হয়ো না।’ (সূরা মায়েদা:২)। ‘আর আমি তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে দান করো, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগে। অন্যথায় অনুশোচনা করে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক, যদি আপনি আমাকে অল্প কিছু দিন সময় দিতেন, তাহলে আমি দান-সদাকা করতাম এবং নেক লোকদের অন্তভর্‚ক্ত হতাম। (সূরা মুনাফিকুন:১০)। ‘হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা তোমরা দান করো, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোন-বেচাকেনা, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ।’ (সূরা বাকারা:২৫৪)।

আমাদের যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে। তা নিয়ে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের পাশে দাড়াঁতে হবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্বচ্ছল হোক কিংবা অস্বচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের অপরাধ সমূহ যারা মাফ করে দেয়; ভালো মানুষদের আল্লাহ পাক ভালোবাসেন’। (সূরা আল ইমরান:১৩৪)। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন- আল্লাহর হাত পরিপূর্ণ। তোমরা রাত-দিন খরচ করলেও তা কমবে না। তোমরা কি দেখ না, যখন থেকে আল্লাহ আসমান ও জমীন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে (তিনি) কী পরিমান খরচ করেছেন? এতো পরিমান খরচ করার পরও তাঁর হাতের সম্পদে কোনো কমতি হয়নি।’ (বোখারি:৪৩২৭)। হযরত আবু হোরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন- তুমি খরচ কর, আমি তোমার জন্য খরচ করব।’ (বোখারি: ৪৯৬১)।

করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের মধ্যেও অনেক শিক্ষা রয়েছে। শুধু করোনা নয়, প্রত্যেকটি দুর্যোগ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, মানুষ মানুষের জন্য। হযরত ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা:) বলেছেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টিজগতে এমন একদল লোক রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহতায়ালা মানুষের প্রয়োজন মেটানোর নিমিত্তে পয়দা করেছেন। অভাবী লোক তাদের প্রয়োজন মেটাতে তাদের দিকে দৌড়ে আসে। কিয়ামতের দিন তারাই আল্লাহর আজাব থেকে নিরাপদ থাকবে।’(তাবারানী:১৩৩৩৪)। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানোর জন্য আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুক। আমীন।

উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন