বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : রাজধানীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

নদীগর্ভে ঝারকাটা ব্রিজ সরিষাবাড়ী-কামরাবাদ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের বন্যা পরিস্থিতি বিভিন্ন স্থানে অবনতি হয়েছে। পদ্মা, যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ অধিকাংশ নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ফরিদপুরে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জামালপুরে ঝারকাটা ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় সরিষাবাড়ী-কামরাবাদ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া দেশের মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা মানিকগঞ্জ, মাদারিপুর এবং রাজধানী ঢাকার নি্ম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।

চলমান বন্যা এক মাস হতে চলল। এরই মধ্যে দেশের ২৬টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৩৫ লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে বহু বাঁধ। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদিপশু, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, থাকা-খাওয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে বানভাসিরা। পানি যত বাড়ছে বিভিন্ন স্থানে তত তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় অনেক স্থানে বানভাসিরা ত্রাণ পাচ্ছে না। চরম দুর্ভোগে আছে বানভাসিরা।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে আগামী ৩ দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি ও বিস্তৃত হবে। এছাড়া ভারতের অরুনাচল, আসাম, মেঘালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে এবং বন্যার অবনতি হচ্ছে। ভারতীয় অংশের পানিতে দ্রæতই দেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।

ভোলা থেকে মো.জহিরুল হক জানিয়েছেন, সদর উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর তীরবর্তী ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট হতে চর চটকিমারা খেয়ার ঘাট পর্যন্ত প্রায় কয়েক কিলোমিটার এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ভাঙছে। নদী ভাঙনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে ভেদুরিয়া এলাকা।
ফরিদপুর থেকে নাজিম বকাউল জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। বর্তমানে ফরিদপুর জেলার সদরপুর, চরভদ্রাসন ও সদর উপজেলার শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি জীবন-যাপন করছে অন্তত ৩ লাখ মানুষ। এ অবস্থায় চরাঞ্চলের মানুষেরা দীর্ঘ প্রায় ১ মাস ধরে নৌকায় ও ঘরের ভিতর পানির মধ্যে বসবাস করায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে আছেন। কুড়িগ্রামের চিলমারীকে দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবল থেকে রক্ষার্থে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে নতুন করে সøুইস গেইট নির্মাণ ও পুরাতন সøুইস গেইট সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে চিলমারীবাসী।
কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না জানান, পদ্মা ও গড়াইয়ের পানি হু-হু করে বাড়ছে। ইতিমধ্যে জেলার কুমারখালী এলাকায় গ্রাম রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। মিরপুর উপজেলায় পদ্মা নদীর তালবাড়িয়া পয়েন্টে বন্যা সতর্কতা পূর্বাভাস দেখানো হয়েছে।

মাদারীপুর থেকে আবুল হাসান সোহেল জানান, শিবচরে পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাঠালবাড়ী চরজানাজাত পশ্চিম বন্দরখোলা সন্নাসীরচর বহেরাতলা নিলুখী এলাকার বেশকিছু নিচু এলাকা বন্যার পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ওই সব এলাকায় চলছে নদীভাঙন। কালকিনি উপজেলার আড়িয়াল খা ও পালরদী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পূর্ব এনায়েতনগর, বাশিগাড়ী সাহেবরামপুরের বেশ কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায়ও চলছে নদীভাঙন। রাজৈর উপজেলার গোয়াল বাথান এলাকায় কুমার নদীর পানি বৃদ্ধিতে চলছে নদীভাঙন। ইতিমধ্যে ২ শতাধিক পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছ্ ে। শেরপুর থেকে মো: মেরাজ উদ্দিন জানান, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। জেলায় পানি কমতে শুরু করলেও এখনও চালু হয়নি উত্তারাঞ্চলের সাথে শেরপুরের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত এক সপ্তাহ যাবৎ বন্ধ রয়েছে এ সড়কে যান চলাচল। এখনও পানিবন্দি অধিকাংশ এলাকায় ত্রাণ পৌঁছেনি।

জামালপুর সংবাদদাতা জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সরিষাবাড়ীতে বন্যার পানির তোড়ে ঝিনাই নদীর উপর নির্মিত ২শ’ মিটার ঝারকাটা ব্রিজের মধ্যবর্তী অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে সরিষাবাড়ী শহরের সঙ্গে কামরাবাদ ইউনিয়নের ১৫-১৬টি গ্রামসহ মাদারগঞ্জের বেশ কয়েকটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জেলার ৭ উপজেলার ৮ পৌরসভা ও ৬৮ ইউনিয়নের মধ্যে এখন ৬০টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আঞ্চলিক ও স্থানীয় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে রয়েছেন বানভাসিরা। এখন পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছেন ২২ জন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন