বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

চলছে কৌশলে দায় চাপানোর ষড়যন্ত্র

করোনা বিপর্যয়ের নেপথ্যে-২

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পূর্বাভাস দেয়ার জন্য এবং সরকারি নীতিমালা গঠনে গাণিতিক মডেল ব্যবহৃত হয়েছিল, যেগুলি ভ্রান্ত সুরক্ষার ধারণা তৈরি করেছিল। চীনের নির্মাতাদের সাথে ঠিক সময়ে চুক্তির বড় অংশ ও চিকিৎসা সরবরাহের জাতীয় মজুদের বেশিরভাগই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ বলে প্রকাশ হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী মহামারি এ সরবরাহ বিঘিœত করতে পারে, পরিকল্পনাকারীরা এমন ঝুঁকিকে অবহেলা করেছেন। জাতীয় সম্পদ বিশ্বব্যাপী অভাবের বিরুদ্ধে শক্তিহীন হয়ে গিয়েছিল। বৈজ্ঞানিক দক্ষতার জন্য সম্মানের শীর্ষস্থানে থাকা ইউরোপ, বিশেষত ব্রিটেন দীর্ঘকাল এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার সেরা মেডিকেল শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করেছে।

২০১৫ সালে মার্স করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর দক্ষিণ কোরিয়া সফরে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধান মেডিকেল অফিসার ডেম স্যালি ডেভিসকে বিশেষজ্ঞ হিসাবে সম্মানিত করা হয়েছিল। দেশে ফিরে তিনি সহকর্মীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এই জাতীয় প্রাদুর্ভাব ঘটবে না। এখন দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩শ’র নিচে মৃত্যু সংখ্যা মহামারিটির বিরুদ্ধে সাফল্যের একটি দৃষ্টান্ত। সেখানকার অনেক মহামারিবিজ্ঞানী তাদের পশ্চিমা পরামর্শদাতাদের দ্বারা তৈরি ভ্রান্ত ধারণায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাননি। সিওল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেও ইওং-সিওক বলেছেন, ‘বিষয়টি বেশিরভাগ কোরিয়ানদের কাছে একটি ধাক্কা হিসাবে এসেছে। সম্ভবত ব্রিটিশ নীতিনির্ধারকরা মনে করেছিলেন যে, মহামারি এমন একটি রোগ যা কেবল উন্নয়নশীল দেশেই দেখা দেয়।’ তবে, সব পাশ্চাত্য গণতন্ত্রই হোঁচট খায়নি। পদার্থবিজ্ঞান এবং বৃহৎ বায়োটেক খাতের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এটিকে বেশিরভাগ নেতাদের চেয়ে ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। কম সরঞ্জাম নিয়ে গ্রিস মৃত্যুর সংখ্যা ২শ’ পার হতে দেয়নি। তবে বেশিরভাগ দেশ যখন কী ভুল হয়েছে সে, সম্পর্কে জনসাধারণের প্রশ্ন মুখোমুখি, তখন সবচেয়ে উন্নতদের মধ্যে বিবেচিত ইউরোপ মহাদেশ কীভাবে এমন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে, তা ভেবে পাচ্ছে না। করোনা মহামারি ইউরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রকেও একইভাবে বিপর্যস্ত করেছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথমদিকে ইউরোপকে দোষারোপ করে এবং সেখানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। গত ১১ মার্চ তিনি আমেরিকানদের আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে কোনও দেশই বেশি প্রস্তুত বা বেশি স্থিতিশীল নয়।’ তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘ঝুঁকি খুবই খুবই কম।’ ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে ভাইরাসের কোনও সুযোগ থাকবে না।’ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত ইউরোপীয় দেশগুলির সাথে পাল্লা দিয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক সংক্রমণ ঘটেছে এবং মৃত্যুর হার আবার বাড়ছে। বেলজিয়ামে বিশ্বের সর্বোচ্চ মৃত্যুর হার রয়েছে। ইতালির ধনীতম অঞ্চলটি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্সের বহুল প্রশংসিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটিকে বিপর্যস্ত হয়ে ভিড় ভরা হাসপাতালগুলি থেকে রোগীদের উদ্ধার করার জন্য সামরিক হেলিকপ্টারগুলির শরণাপন্ন হতে হয়েছে।

তারপরেও ব্রিটেন বেশিরভাগ ইউরোপের ভ্রান্ত হিসাবনিকাশকে আকড়ে রয়েছে। কারণ দক্ষতা এবং যুগোপযোগিতা নিয়ে দেশটির বিশাল গর্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, ব্রিটেনের করোনা মডেলগুলির নির্ভুলভাবে মহামারিটির পূর্বাভাস দিতে পারে। নথিপত্র এবং সাক্ষ্য থেকে জানা যায় যে, তিনি ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে লকডাউন হওয়ার পরেও ব্রিটেনকে লকডাউন ঘোষণা করতে কয়েক সপ্তাহ দেরি করেছিলেন। ব্রিটেনের জরুরী বিভাগগুলি সংক্রমণের চাপ অনুভব করতে শুরু করার দু’সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলেন তিনি। এ সময় প্রতি তিনদিনে সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়াতে এখন কিছু বিজ্ঞানী বলছেন যে, এক সপ্তাহের আগেই লকডাউন আরোপ করলে ৩০ হাজার লোকের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো। প্রথম দিকে ব্রিটিশ সংবাদপত্রগুলিতে প্রশংসিত হওয়া ড. হুইটি এই সিদ্ধান্তগুলিতে তার ভ‚মিকা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি। তার বন্ধুরা বলছেন সরকার দায় এড়ানোর কৌশল হিসাবে তার ঘাড়ে দোষ চাপাতে ষড়যন্ত্র করেছে। ড. হুইটির বন্ধু এবং সহকর্মী লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের প্রফেসর ডেভিড ম্যাবে বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদরা বলছেন যে তারা ‘বিজ্ঞানকে অনুসরণ করছেন’ এবং তারপর যদি তারা ভুল সিদ্ধান্ত নেন, সেই দায় তার উপরেই চাপে। আমি নিশ্চিত নই যে, রাজনীতিবিদরা তার কথা শুনবেন।’ তবে, সমালোচকরা বলে থাকেন যে, সরকারের বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতাদের যৌথ দায়বদ্ধতা থেকে আলাদা করা অসম্ভব। (চলবে)

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
সাকা চৌধুরী ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:২৪ এএম says : 0
করোনা ভাইরাসের সাথে সাথে মতলববাজ সরকারগুলো থেকে আল্লাহ হেফাজত করুন।
Total Reply(0)
সাকা চৌধুরী ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:২৫ এএম says : 0
দায় চাপিয়ে কি পার পাওয়া যাবে। আল্লাহ তায়ালার কাছে ফিরে আসতেই হবে।
Total Reply(0)
হোসাইন এনায়েত ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:২৬ এএম says : 0
হে আল্লাহ বিশ্ববাসীকে করোনা মহামারি থেকে হেফাজত করো। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন