মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘পাপুল ইজ এ স্মাগলার বাই প্রফেশন, এমপি বাইচান্স’

কুয়েতে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ’ বের হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

লক্ষ্মীপুর -২ আসনের এমপি মো. শহিদ ইসলাম পাপুলকান্ডে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে একে একে বেরিয়ে আসছে সাপ। শহিদের অপকর্মে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার হওয়া কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিসট্যান্ট আন্ডার-সেক্রেটারি মেজর জেনারেল শেখ মাজেন আল জারাহ ঘুষ নিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকই কুয়েতে নিতে অনুমোদন দেয়ার পাশাপাশি ঘুষ নিয়ে ৫ হাজার পাকিস্তানিকে কুয়েতে প্রবেশ করতে অনুমতি দেন। ইরাকি ও সিরিয়ানদের কুয়েতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও তিনি তাদেরকে এই সুযোগ দিয়েছেন। আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে এক হাজার ইরাকিকে ভিসা ইস্যু করেছেন। কুয়েতি মিডিয়াকে উদ্ধৃত করে গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন গালফ নিউজ।
এদিকে ২২ জুলাই দুদকে এমপি পাপুলের স্ত্রী মহিলা এমপি সেলিনা ইসলাম দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের পর ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে বলেন, ‘পাপুল কিছু নিতে নয় দেশবাসীকে কিছু দিতে এমপি হয়েছেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তবে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেছেন, কুয়েতের কারাগারে আটক লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুল একজন প্রফেশনালি স্মাগলার এবং তিনি বাইচান্স এমপি। পাপুল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৮৮ সালে সিলেটের একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সোনা চোরাচালান কারবারির সঙ্গে জড়িত থাকায় ধরা পড়েন। তখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর এম এ মতিন সংসদে বলেছিলেন, ‘হি ইজ এ স্মাগলার বাই প্রফেশন, এমপি বাইচান্স’। শহিদুল ইসলাম পাপুলের ক্ষেত্রেও এই শব্দটা ব্যবহার করতে চাই যে, ‘হি ইজ এ স্মাগলার বাই প্রফেশন, এমপি বাইচান্স। পাপুল আমাদের মনোনীত কোনো প্রার্থী নয়, সেজন্য আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত তাকে বহিষ্কার করতে পারেনি।

কুয়েতের আল কাবাস খবর দিয়েছে, বাংলাদেশের এমপি শহিদ ইসলামের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কুয়েতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালাম। এ জন্য মেয়াদ শেষের আগেই তাকে ঢাকায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। কুয়েতের সহিদের প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী প্রবাসী শ্রমিকরা বলছেন, সে দেশে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গেছে। কুয়েতের দূতাবাসে রাষ্টদূত আবুল কালাম আজাদ নানাভাবে পাপুলকে সহায়তা করেছেন। সে জন্য তিনি প্রবাসী শ্রমিকদের কোনো অভিযোগই গ্রহণ করতেন না।

জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও ব্যবসায়ী নেতা ছিলেন। এ জন্য তাকে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ দ‚তাবাসের তথ্যমতে, কুয়েতে বসবাস করেন সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশি। কিন্তু পাপুলকান্ড এবং রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদের কারণে কুয়েতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়েছে।

গালফ নিউজের খবরে বলা হয়, মেজর জেনারেল শেখ মাজেন আল জারাহ কিভাবে তিনি ৫ হাজার পাকিস্তানিকে ঘুষ গ্রহণের পর কুয়েতে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিলেন, কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন, তা এখন কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশন তদন্ত করে দেখছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শেখ মাজেন ওই বিভাগটি দেখাশোনা করছিলেন। এ সময়ে যেসব নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে এবং পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে, তার সব কাগজপত্র বাতিল করেছে কুয়েত। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এতে কি পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে। অভিযোগ আছে, হাজার হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে তিনি ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করেছেন। এর সঙ্গে জড়িত কুয়েতে অবৈধ কর্মকাÐে জড়িত বাংলাদেশি এমপি মো. শহিদ ইসলাম। শহিদ ইসলামের সঙ্গে তার কি পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছে তা নির্ধারণ করতে শেখ মাজেন স্বাক্ষরিত সব কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখছে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কুয়েতের প্রভাবশালী পত্রিকা আল কাবাসকে একটি স‚ত্র বলেছেন, এক হাজার ইরাকি ও শত শত সিরিয়ানকে ভিজিট ভিসা ইস্যু করেছেন শেখ মাজেন। কিন্তু এ দুটি দেশের মানুষের জন্য কুয়েত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি তা উপেক্ষা করে তাদেরকে এই ভিসা ইস্যু করেছেন। বর্তমানে তিনি এবং বাংলাদেশি এমপি শহিদ ইসলাম কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি। তাদের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ রয়েছে। তা হলো মানবপাচার, অর্থপাচার ও ঘুষ লেনদেন।

এরই মধ্যে কুয়েত কর্তৃপক্ষ এমপি শহিদের এবং তার কোম্পানির সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে, যাতে কুয়েতের আদালতের অজ্ঞাতে এসব অ্যাকাউন্টের অর্থ নড়চড় না হতে পারে। বাংলাদেশি এই এমপি নিরাপত্তা ও শ্রমিক নিয়োগ বিষয়ক কোম্পানি মারাফি কুয়েতিয়া গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এ ছাড়া কুয়েতে তার আরো তিনটি কোম্পানি রয়েছে। এগুলো সবই পরিচ্ছন্নতা ও শ্রমিক নিয়োগ বিষয়ক। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার জন্য সব রকম কাগজপত্র তৈরি করার বিনিময়ে অর্থ খরচ ও ঘুষ দেয়ার পরও বছরে নিট প্রায় ২০ লাখ কুয়েতি দিনার লাভ থাকত এমপি শহিদ ইসলামের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Ruhul Amin ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
ওনারা হচ্ছে ভি আই পি, সাধারণ চোর নয়,,খান্দানি চোর, এ দেশে খান্দানি চোরের কদর বেশি
Total Reply(0)
Solaimangazi Solaimangazi ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
পাপুলকে তো বাংলাদেশ সরকার আটক করে নাই । ওনাকে আটক করেছে কুয়েতের সরকার।কুয়েত সরকার ওনাকে সাতহাজার টাকার স্টাম এর বিনিময়ে ভিসা দিয়েছে ওনি নিয়েছেন সাতলাখ টাকা। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে মানুষকে ঘুষ দিয়েছেন।ওনিতো নিজের দেশের মানুষের সাথে বেইমানি করেছেন। বাংলাদেশ সরকার তো টাকার বিনিময়ে দুজনকেই এমপি বানিয়ে দিয়েছে। সরকারের উচিত হবে ওরা দুজনের সদস্য পদ বাতিল করা। কিন্তু সরকার তা করতেছেন না।ওর কারনে বহু লোক বিপদে পরবে কুয়েতে।
Total Reply(0)
মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
গঙ্গার জলের মতো দুদকের ভিতরে গিয়ে দুর্নীতিবাজরা পবিত্র হয়ে দুর্নীতিমুক্ত ক্লিন শীট নিয়ে বের হয়।এই খবর যদি শাহেদ আগে জানতো তবে সে পালিয়ে ইন্ডিয়া যেতে যেতে চাইত না
Total Reply(0)
মাহদী সিয়াম ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
এদের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ভিক্ষার থালা হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় উপযুক্ত শাস্তি মনে করেন মহাখালীর ভিক্ষুক সমিতির মহামান্য সভাপতি। আত্মমর্যাদা স্বার্থে নাম গোপন রাখা হলো।
Total Reply(0)
Shah Alam ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
পাপুলের খাদদামা কুয়েতকে বাংলাদেশ মনে করেছে বাংলাদেশে কোন আইন আছে মনে রাখতে হবে এটা কুয়েত বাংলাদেশ নয় কুয়েতে পাপুলের সাজা আরো বাডানো হয়েছে
Total Reply(0)
Shajahan Hossin ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
এইটা বাংলাদেশ নয় গায়ের জোর আর নেতার জোরে জেল থেকে বাহির হয়ে পরের দিন কুরবানীর গরুর মত গলায় ফুলের মালা দিয়ে রাস্তায় মিচিল করা তা হবে না।
Total Reply(0)
Arman Babu ২৪ জুলাই, ২০২০, ১:০৩ এএম says : 0
ওরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে যারা মানুষ নিয়ে প্রতারণা করে তাদেরকে ফাঁসি দেওয়া উচিত ওরা আমাদের বাংলাদেশের সম্মানহানি করছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন