বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সিদ্ধান্তে গাণিতিক মডেলে নির্ভর করা উচিত নয়

করোনা বিপর্যয়ের নেপথ্যে-৩

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট অধ্যাপক দেবী শ্রীধর বলেছেন, ‘তারা ভেবেছিলেন যে, তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় আরও চতুর। তারা ভেবেছিলেন তারা ভাইরাসকে টেক্কা দিতে পারবেন।’ প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধান বিজ্ঞান কর্মকর্তা স্যার ডেভিড কিং বলেন, ‘অহঙ্কার শব্দটি আসলে ঔদ্ধত্য বলে আমার মনে হয়।’ ২০০৯ সালের বসন্তে সোয়াইন ফ্লু নামক একটি নতুন ভাইরাস মেক্সিকোতে কয়েক শ’ মানুষকে সংক্রমিত করেছিল এবং কয়েক ডজন মানুষ মারা গিয়েছিল।

ইউরোপে অবকাশ যাপনকারীরা বাড়ি ফিরে যেতে বিমানবন্দরগুলিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা সেসময় ১৯১৮ সালের ফ্লু মহামারীটির কথা স্মরণ করেছিলেন, যা সারা বিশ্বে প্রায় ৫০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল। মহাদেশটিতে ভয় ছড়িয়ে পড়েছিল। ইউরোপীয় সরকারগুলো দ্রুত কাজে নেমে পড়েছিল। ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মেক্সিকো ভ্রমণ বন্ধ করতে বলে এবং দেশের প্রত্যেকের জন্য ভ্যাকসিন কেনা শুরু করে। ব্রিটিশ হাসপাতালগুলো অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকাভুক্ত করে এবং মজুদ গ্লাভস এবং অ্যাপ্রোন সরবরাহ করে। ইউরোপের প্রতিটি দেশ প্রায়শই তার শত শত পৃষ্ঠার নিজস্ব বিস্তৃত মহামারি পরিকল্পনা আওড়ে নিয়েছিল। তবে, ব্রিটেন মহামারি পরিকল্পনাগুলোকে আমলাতন্ত্রের ভাষায় লেখা ভৌতিক সিনেমার স্ক্রিপ্টের মতো মনে করেছিল। ১৩ লাখের বেশি লোক হাসপাতালে ভর্তি হতে এবং ৮ লাখ মারা যেতে পারতো। এ বিপর্যয়ের পরিস্থিতি ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের নেতৃত্বাধীন মহামারিবিদ্যাতে নতুনভাবে উপ-বিশেষায়িত হয়। একটি সংক্রামক রোগের ফলাফল দেখানোর জন্য গাণিতিক মডেলগুলো ব্যবহার করা হয়। দেশটির ধারণা ছিল, মহামারীটিকে সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা জনস্বাস্থ্য সম্পদের অপচয় করা হবে।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্য নীতিতে বিশেষ আধিপত্য বিস্তার করা ব্রিটিশ সরকারকে শ্বাসকষ্টের ভাইরাস সম্পর্কে পরামর্শদাতা প্যানেলের প্রফেসর নীল ফার্গুসন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ছাত্র ও একজন অক্সফোর্ড প্রশিক্ষিত পদার্থবিজ্ঞানী যিনি ’৯০ এর দশকে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ভাইয়ের এইডসে মুত্যুর পর গণিতিক মহামারি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতারা বলেছেন যে, অধ্যাপক ফার্গুসন অল্প সময়ের মধ্যে সহজেই বোধ্যগম্য উত্তরগুলো সরবরাহ করার ক্ষেত্রে একগুঁয়ে নিজস্ব ধারা অনুসরণ করেন। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের মেডিসিনের অধ্যাপক ও অধ্যাপক ফার্গুসনের সাথে কাজ করা প্যানেলের অন্যতম সদস্য পিটার ওপেনশো বলেছেন, ‘তিনি দৃঢ়, পরিষ্কারভাবে ও খুব পরিমাপের সাথে উপসংহার টেনে প্রশ্নের উত্তর দেন এবং রাজনীতিবিদরা ঠিক এ ধরনের তথ্যই চান।’ তবে, চিকিৎসাগত অভিজ্ঞতা এবং মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দেয়া ঐতিহ্যবাহী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ফার্গুসনের গবেষণার বিষয়ে সংশয়ী ছিলেন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, তার ভাবষ্যদ্বাণী কেবল তার তথ্য এবং অনুমানের মতোই ভাল এবং সেক্ষেত্রে গণিতে পারদর্শিতাবিহীন নীতিনির্ধারকরা ফার্গুসনের গাণিতিক মডেলগুলিকে নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন।

২০০১ সালে ব্রিটেনের পশুসম্পদের মধ্যে পা ও মুখের রোগের মহামারিতে প্রথমবারের মতো নীতিনির্ধারকরা এ জাতীয় মডেলের ওপর নির্ভর করেছিলেন। পশু বিশেষজ্ঞদের আপত্তি সত্তে¡ও অধ্যাপক ফার্গুসনের গবেষণা নীতি নির্ধারকদের প্রতিরোধমূলকভাবে ৬০ লাখেরও বেশি শূকর, ভেড়া এবং গবাদি হত্যার পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেয়। পরবর্তী গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, হত্যাগুলির বেশিরভাগই ছিল অনর্থক। এরপর সরকারের একটি পর্যালোচনাতে নীতিনির্ধারকদের তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কোনোক্রমেই গাণিতিক মডেলটির উপর নির্ভর করা উচিত নয় বলে আহ্বান জানানো হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন ব্রিটেনের প্রাণি স্বাস্থ্যবিষয়ক পিরব্রাইট ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের প্রধান অ্যালেক্স ডোনাল্ডসন বলেছেন, ‘আমরা তাদের ডাকি গোলযোগ সৃষ্টিকারী। ভবিষ্যতে মহামারিতে প্রথম কাজটি করা উচিত হ’ল, ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মডেল প্রদর্শনকারীদের অন্তরীণ করে রাখা।’ (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন