বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা

মাস্ক কেলেঙ্কারি নেপথ্যে হাসপাতালের দুই পরিচালক

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনা মহামারির মধ্যে নকল মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএসএমএমইউ’র প্রক্টর প্রফেসর মোজাফফর আহমেদ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান ও বিএসএমএমইউ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার মজুমদার বিষয়টি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত শারমিনের মালিকানাধীন অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ২৭ জুন ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেও শারমিন জাহান কিভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী হন এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র। অপরদিকে, মাস্ক ক্রয় নিয়ে অভিযোগের তীর উঠেছে বিএসএমএমইউ’র পরিচালক হাসপাতাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন ও সহকারি পরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তারা দু’জনে মিলে কোনও রকম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়াই নিজস্ব লোকদের মাধ্যমে এসব কেনাকাটা করেছেন। এমনকি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছিলোনা টেন্ডার প্রক্রিয়া ও মান যাচাই-বাছাই কমিটি। নিজ ক্ষমতাবলেই পরিচালক ও সহকারি পরিচালক মাস্কসহ করোনার সময়ে সকল কেনাকাটা সম্পন্ন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এজাহারের উদ্ধৃতি দিয়ে ওসি আবুল হাসান বলেন, এই কার্যাদেশের বিপরীতে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল ৩০ জুন প্রথম দফায় ১৩শ’, ২ জুলাই দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় ৪৬০ ও ১ হাজার এবং চতুর্থ দফায় ৭০০ মাস্ক সরবরাহ করে। তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় পণ্য ‘সামগ্রিক গুণগতমানের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পাওয়া যায়নি’ বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলার অভিযোগ করা হয়, কোনো কোনো ফেইস মাস্কের বন্ধনি ছিঁড়ে গেছে, কোনো মাস্কের ছাপানো ইংরেজিতে লেখা ‘ত্রুটিপূর্ণ’ পাওয়া গেছে। এ ধরনের ত্রুটিতে কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে, মাস্ক নিম্নমানের ছিল। এর ফলে কোভিড-১৯ সম্মুখ যোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারত। এ বিষয়ে গত ১৮ জুলাই অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিএসএমএমইউ। ২০ জুলাই লিখিত জবাবে শারমিন দুঃখপ্রকাশ করেন, যা আসামির দোষ স্বীকারের শামিল। বিষয়টি আমলে নিয়ে শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ৪২০ ও ৪০৬ ধারায় মামলা দায়ের করা হয় বলে ওসি জানান। মামলার এজাহারে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী শারমিন জাহানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর শারমিন ২০০২ সালে ছাত্রলীগের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে তিনি মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ না পেলেও দলের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত।
শারমিন ২০১৬ সালের ৩০ জুন স্কলারশিপ নিয়ে চীনের উহানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উহানে লকডাউন শুরু হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার শিক্ষা ছুটির মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। এর মধ্যে চীনে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের মার্চে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল নামে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান খুলে নিজেই ব্যবসা শুরু করেন।

বিএসএমএমইউ’র পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মোট ৪টি লটে ৩ হাজার ৪৬০টি মাস্ক গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ত্রুটিপূর্ণ ৯৫৯টি মাস্ক ফেরৎ দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল এর কাছ থেকে গ্রহণকৃত মাস্কের সংখ্যা ২ হাজার ৫০১টি। ৭৩০ টাকা হিসেবে এর আর্থিক মূল্য ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৭৩০ টাকা। তবে শারমিন জাহানকে মাস্ক ক্রয় কি ভিত্তিতে দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তাকে মোবাইলে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকাবার অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী শারমিন জাহানের মোবাইলে কল ও এসএমএস করলেও তিনি কোন সারা দেননি।

বিএসএমএমইউ ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া জানিয়েছেন, কারণ দর্শানো নোটিশে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। করোনা মাহামারিতে সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরণের আপস নয়। এই ঘৃণ্য কাজের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইনানুগ ব্যবস্থাসহ সব ধরণের ব্যবস্থা নেবে। মামলা দায়ের ছাড়াও ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার সাথে সাথেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের সত্ত্বাধিকারী হওয়ার সুযোগ আছে কিনা এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চালানো অন্যায়। তবে এটি আইনি বিষয় হওয়ায় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করে যদি কেউ অন্যায়, অসততা ও নীতি বিরোধী কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
MANZUR KADER ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
এটা যোগসাজশে ঘটেছে। এখন ধরা পড়ে একে ওপরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। সরবরাহ ও গ্রহণকারী উভয়কেই পাকড়াও করা হোক। জিরো টলারেন্স ।
Total Reply(0)
MD. Samsul Alom ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
পত্রিকার শিরোনামে রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরাটা সমীচীন নয় এর প্রভাবে ব্যক্তিক অপরাধ আইনের দৃষ্টিতে প্রভাবিত হতে পারে তাই শিরোনাম করার সময় অপরাধির ব্যক্তিগত পরিচয় তুলে ধরুন।
Total Reply(0)
Ahmed ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করে কি ব্যবসা করতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা, তিনি কিভাবে ব্যবসা করেন।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
সেখানেও এমন হাসি খুশিই থাকবেন আশা রাখি।
Total Reply(0)
তাসফিয়া আসিফা ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৩ এএম says : 0
সেখানেও এমন হাসি খুশিই থাকবেন আশা রাখি।
Total Reply(0)
Muhib Uddin ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
দেশ ও জাতির সাথে যে সকল মানুষরূপি দানব অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা ও ভেজাল/জালিয়াতি করবে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক দৃষ্টান্তমূলক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন৷ দেশে দূর্নীতি, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনা এভাবে চলতে থাকলে আরও ৩০/৪০ বছর পর দেশের অস্তিত্ব (স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব) হুমকির মুখে পড়তে পারে অর্থাৎ দুর্নীতিবাজ জানোয়াররা তাদের ব্যক্তি স্বার্থে হয়তো একদিন দেশের মাটি ও মানুষকে বিক্রি করে দিতে মোটেই কুন্ঠাবোধ করবে না ৷ রক্তচোষক দূর্নীতিবাজ মীরজাফরদের কারণে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের অবস্থা যেন রোহিঙ্গা জাতির মত না হয় সে জন্য দুর্নীতিবাজ নির্মূলে ৱাষ্ট্রীয় ও সামাজিক যুগপৎ আন্দোলন এক্ষুণি শুরু করতে হবে।
Total Reply(0)
Alim Hussain ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৫ এএম says : 0
এদের কী লজ্জা শরম কিছুই নাই!!! এতো এতো প্রভাবশালী গডফাদারদের ধরাধরি চলছে কিন্তু তাদের মাঝে এখনো কোন ভয় নাই!!!
Total Reply(0)
Mahmudul Islam ২৫ জুলাই, ২০২০, ১২:৫৬ এএম says : 0
বাংলাদেশেটা এরকম এক দেশ যেখানে সব সম্ভব। যেমন এই মহিলা প্রতিষ্ঠান থেকে আগে আম, লিচু, কাঠাল বিক্রি করত। হঠাত করে মাস্ক বিক্রি করা শুরু করলো। তমা কন্সট্রাকশন-ব্রীজ বানানোর কোম্পানি মাস্ক বেচা শুরু করলো। কোন নিয়ম নাই এই েদেশে। অন্তত কয়েক লাখ লোক পাওয়া যাবে তারা মাস্ক বিক্রি শুরু করলো। আর যারা আসল মেডিক্যাল ব্যবসায়িী তাদের কথা বাদ দিলাম।
Total Reply(0)
Mohammed Shah Alam Khan ২৫ জুলাই, ২০২০, ৮:৩০ এএম says : 0
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পর দুঃখ প্রকাশ করার সহজ অর্থ হচ্ছে দোষ স্বীকার করে নেয়া। আবার সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করলে সরবরাহ কারি শারমিন বলেন তিনি মাস্ক সরবরাহের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেননি, দুঃখ প্রকাশ করেছেন এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হবারা কারনে। এখানেই বিচারের বিষয়, একজন সরবরাহ কারী তিনি প্রস্তুত কারক হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন। তবে তাঁকে মালামাল সরবরাহ করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করেই জিনিষ দিতে হবে কারন সরবরাহকৃত মালামালের দায় দায়িত্ব সরবরাহকারীর উপর বর্তাবে। এখানে শারমিন তাঁর দায় দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। তবে তিনি প্রথম দুই চালান ভাল দিয়েছেন কিন্তু পরবর্তীতে খারাপ দিয়েছেন এটা কিভাবে হয়েছে সেটা দেখার দায়িত্ব ছিল শারমিনের কোম্পানীর মানে শারমিনের। তারপরও একটা সরবরাহকৃত মালামালে যদি বিভ্রাট দেখা দেয় তাহলে সেই সরবরাহকৃত মালামাল সাধারণত ফেরৎ দেয়ার নিয়ম। জান যায় এজহার দেয়ার পর পুলিশ শারমিনকে গ্রেফতার করেছে। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরাসরি পুলিশের স্মরনাপন্ন হওয়াটা কতটা আইনগত বিষয় সেটা আমার জানানেই। আবার সাধারন একটা মামলা (কোন মারামারি কিংবা খুনের বিষয় নেই কিংবা শান্তি ভঙ্গের কোন কারন নেই) দেয়ার সাথে সাথে প্রতিপক্ষকে গ্রেফতার করা এটা কতটা আইনি কাজ সেটাও বুঝা গেলনা। সাধারন ক্ষেত্রে দেখা যায় পুলিশের কাছে মারামারি খুনা খুনির মামলা দেয়ার পরও আসামীদের ধরা হয়না যদিও পুলিশের নাকের ডাগায় তাদেরকে ঘুরাফেরা করতে দেখাযায়। বর্তমান সরকারের স্বাস্থ অধিদপ্তরের বিভিন্ন দুর্নীতি চলার কারনে হয়ত এখন সরকার সচেতন তাই মামলা হবার সাথে সাথেই ধরপাকড় শুরু হয়েছে যাতে করে অপপ্রচার বন্ধ থাকে। এটা যদি গ্রেফতারের কারন হয়ে থাকে তাহলে বলাযায় বিষয়টা ঠিকই আছে। এখন আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে পরবর্তী খবর জানার জন্যে। আল্লাহ্‌ আমাকে সহ সবাইকে (বিশেষ করে উকিল সাহেবদেরকে) সত্য জানা, সত্য বুঝা, সত্যের পথে থাকার এবং সত্যের পথে চলার ক্ষমতা দিন। আমিন
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২৫ জুলাই, ২০২০, ৯:২৭ এএম says : 0
Satrolig aowamilg theke asha eai ................ guli sara ar karei ba eto himmot?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন