শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

চীনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল অনিশ্চিত হলো কেন?

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

চীনের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে টায়াল করার বিষয়টি হঠাৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়লো কেন, তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ও বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। দু’ দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এই মর্মে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় যে, চীনের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনটির বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি) আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশকে (আইসিডিডিআরবি) এই ট্রায়াল পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদনের পর ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোডেক কোম্পানির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। অত:পর মানবদেহে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হতো। চীনা প্রতিনিধিদলের সফরের সময় এমনও বলা হয়, বাংলাদেশের ভ্যাকসিন উৎপাদিনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমতি পেতে পারে। পেলে সেটা হতো বাংলাদেশের জন্য একটা বিশাল প্রাপ্তি। এরকম দুর্লভ প্রাপ্তি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাগড়া দেয়ার কারণ কি, অনেকেই এ প্রশ্ন করছেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী শুধু প্রশ্ন নয়, চক্রান্তের কথাও সামনে এনেছেন। এক অনলাইন আলোচনায় তিনি ট্রায়ালের প্রক্রিয়ার প্রসঙ্গ ধরে বলেছেন, ‘দেশে যে কোনো (চিকিৎসা) গবেষণা করার অনুমতি দেয়ার মালিক হচ্ছে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি)। তাদের অনুমতিক্রমেই আইসিডিডিআরবি’র এ গবেষণা শুরু করার কথা। এখানে চক্রান্তটা বুঝতে হবে। আজ পুঁজিবাদ চাইছে, বিশ্বটাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে যাতে আমাদের অধিকার কাগজে-কলমে থাকে। আমাদের নিজেদের বিষয়টা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ না করি। একটা ভ্যাকসিন গবেষণা হবে, এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এত মাথাব্যথা কেন? স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ভুতের প্রবেশ ঘটেছে। চক্রান্তকারীদের প্রবেশ ঘটেছে।’ যদি তাই হয়, তবে বলতে হবে, এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নেই, করোনা মহামারির কোনো প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় বিশ্বজুড়ে এর সংক্রমণ বাড়ছে, বাড়ছে মৃত্যুও। কোনোভাবেই সংক্রমণ ও মৃত্যু রোখা যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে প্রতিষেধক ও ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের নিরলস চেষ্টা চলছে বিভিন্ন দেশে। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া।এসব দেশের ভ্যাকসিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিরাপদ ও এন্টিবডি তৈরিতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি টি-সেলও উৎপন্ন করে। চীনের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনও এন্টিবিডি ও টি-সেল তৈরিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন একইভাবে কার্যকর বলে জানা গেছে। এসব ভ্যাকসিন এ বছরের শেষ দিকে কিংবা আগামী বছরের প্রথম দিকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ও বাজারজাত হতে পারে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন যেমন দ্বিতীয় ট্রায়ালের পরে তৃতীয় ট্রায়ালের অপেক্ষায়, চীনের ভ্যাকসিনও তাই। এই তৃতীয় ট্রায়ালটি আমাদের দেশে হওয়ার কথা ছিল। সেটা না হলে বাংলাদেশ নানাভাবে বঞ্চিত হবে। ভ্যাকসিন যে দেশেরই হোক, মূল্য দিয়েই কিনতে হবে। বিনামূল্যে দেয়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় আছে বটে। হলে তো অনেক ভালো। সবদেশই উপকৃত হতে পারবে। তবে ভ্যাকসিন সবাই এক যোগে পাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। উদ্ভাবক দেশ তার জাতীয় চাহিদা পুরণের পরই রফতানি করবে। চীনের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বাংলাদেশে হওয়ায় সুবাদে বাংলাদেশ চীন থেকে ভ্যাকসিন আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার পেতে পারতো। আর বাংলাদেশী ওষুধ কোম্পানীগুলো ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমতি পেলে বাংলাদেশের জন্য তা হতো সোনায় সোহাগা। এখানে উৎপাদিত ভ্যাকসিন নিজস্ব চাহিদা দ্রুত পূরণ করতে পারতো। আবার রফতানির মাধ্যমে দেশ আয়ও করতে পারতো বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এপ্রসঙ্গে বলেছেন : ‘এখানে বিলিয়ন ডলারের ব্যাপার আছে। জনগণের স্বাস্থ্যের ব্যাপার আছে। ভ্যাকসিন ট্রায়াল যদি সফল হয়, তাহলে আমাদের এখানে একটা অর্থ সাশ্রয় হবে।’ এটাই ট্রায়ালে বাধার প্রধান কারণ বলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী মনে করেন।

করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশে গৃহীত ব্যবস্থাবলী বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উচ্ছ্বসিত তারিফ করেছেন। স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি, অনাচার, অপচয়, কর্তব্য অবহেলা যদি কম হতো তাহলে আমাদের সফলতার হারও অনেক বেশী হতো। এতকিছুর পরও সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমেছে। টেস্টের চাহিদা ও হার কমেছে। নিরাময়ের সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালের বেড ও আইসিও বেড খালি থাকছে অনেক রোগী বাসায় চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে যাচ্ছে। টেলিমেডিসিন এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটালাইজেশনের দূরদর্শী পদক্ষেপের সুফল ভালো ভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের তুলনা করলেই বাংলাদেশের অধিকতর সাফল্য ও এগিয়ে থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সুখ্যাত ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো করোনার কার্যকর ঔষুধ রেমডিসিডির রফতানি করছে। পিপিইসহ অন্যান্য সরঞ্জামও রফতানি করছে। চীনের সঙ্গে তার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন পরীক্ষার সঙ্গী হতে পারলে বাংলাদেশ করোনামুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক এগিয়ে থাকতে পারত। এক্ষেত্রে যারা বাধা সৃষ্টি করছে, তারা বাংলাদেশের মঙ্গল, কল্যাণ ও সাফল্য চায় না। তাদের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে এবং যে কোনোভাবেই হোক তাদের প্রতিহত করতে হবে। একই সঙ্গে চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের বিষয়ে দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, ভ্যাকসিন গবেষণা সময় ও অর্থসাপেক্ষ ব্যাপারে। গবেষক এবং গবেষণার সুযোগ ও অবকাঠামোও দরকার। এমতাবস্থায়, ডা, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে একমত হয়ে আমরা বলতে চাই : আমাদের উচিৎ, চীনের এ গবেষণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া। এতে সফল হলে চীনের সঙ্গে এই মর্মে একটা চুক্তি হতে পারে যে, সফলতার ৫০ শতাংশের মালিক হবে বাংলাদেশ। এতে দেশ ও জনগণের স্বার্থই সমুন্নত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Mohammad Yasin ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
চীনের জায়গায় যদি ভারত হত, তাহলে এই প্রশ্নটা আসতো না। কারণ এটা দেশটা স্বাধীনতাহীন একটা দেশ।
Total Reply(0)
MD Kader Howladar ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
আমি মনে করি যারা রাস্তাঘাটে থাকে হিরনচি গাঞ্জুট্টি তাদের গায়ে দেওয়া উচিত তারা যদি সুস্থ হন তারপরে ভালো ব্যক্তি রে দেওয়া উচিত আল্লাহ নারাজ যদি কোন প্রবলেম হয় তাহলে হিরনচি দেরি হোক তারপরে যদি ভাল হয় সুস্থ মানুষকে টিকাটি দেওয়া হোক খারাপ মাইন্ডে নিবেন না ভেবেচিন্তে বলেছি
Total Reply(0)
Akramul Hoque ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
মানুষ তো করোনাতে নিয়মিতই মারা যাচ্ছে। তাহলে চীনে একটু ভেকসিনটা ট্রায়াল করেই দেখুক।
Total Reply(0)
Zia Huq ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
We should apriciate it... be positive...In sha Allah ..it will be successful
Total Reply(0)
Zia Huq ২৭ জুলাই, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
We should apriciate it... be positive...In sha Allah ..it will be successful
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন