বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শ্রীপুরে খুন করে লাশ ফেলল যমুনায় গ্রেফতার ৩

প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দী তিনটি লাশের খুনিদের গ্রেফতার করেছে গাজীপুরের শ্রীপুর থানা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার ভোরবেলা হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার অফিসপাড়া এলাকার আ: মান্নানের পুত্র আল আমিন (৩২), একই এলাকার মাহবুবুল আলমের পুত্র নয়ন (২০) ও জয়পুরহাট জেলার পবাহার থানার রফিকুল ইসলামের পুত্র রবিউল (২১)। তারা প্রত্যেকেই শ্রীপুর পৌরসভার মাস্টারবাড়ী নতুন বাজার এলাকায় একটি দোকানের কর্মচারী এবং পরস্পর বন্ধু।
জানা যায়, গত রোববার শ্রীপুর উপজেলা টেংরা গ্রামের বাদল ম-লের স্ত্রী নাসরিন আক্তার (৩৫), হাদিকুলের স্ত্রী মেহেরুন নেছা (৪০) ও উজিলাব গ্রামের জাহাঙ্গীরের কন্যা মেহেরুন নেছার পালিত মেয়ে জাইমাকে (৫) সাথে নিয়ে মাওনা চৌরাস্তায় ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর তারা আর বাড়িতে ফেরেননি। এ ব্যাপারে সোমবার দুপুরে নাসরিনের প্রথম স্বামী বাদল ম-ল শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করার জন্য এলে লোকমুখে জানতে পারে সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানার পুলিশ নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের বয়সের সাথে মিলে যায় এমন তিনটি লাশ পেয়েছে। সাথে সাথেই সে সিরাজগঞ্জের ঘটনাস্থলে গিয়ে তার হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের লাশ শনাক্ত করে। এদিকে শ্রীপুর থানা পুলিশ নিহতের ঘটনায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আল আমিন, নয়ন ও রবিউলকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার ঘটনা তারা স্বীকার করে।
গ্রেফতারকৃত আল আমিন তার স্বীকারোক্তিতে জানায়, ২০০৯ সালে সে গোপনে নাসরিনকে বিয়ে করে। আল আমিন নাসরিনের তৃতীয় স্বামী। এর আগে নাসরিন সউদী প্রবাসী গফরগাঁও উপজেলার সবুজ নামের যুবককে বিয়ে করে। এক বছরের মাথায় সবুজকে তালাক দিয়ে বাদলের সাথে নাসরিনের দ্বিতীয় বিয়ে হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় সংসারে কোনো সন্তান না আসায় বাদলের ঘর সংসারে থাকাবস্থায় দ্বিতীয় স্বামীর বন্ধু আল আমিনকে নাসরিন গোপনে তৃতীয় বিয়ে করেন। নাসরিন বাদল ম-লের বাড়িতে থাকলেও সময়-সুযোগে আল আমিনের সাথে মিলিত হতো। আল আমিন দীর্ঘদিন যাবৎ এক স্বামীকে বেছে নিতে নাসরিনকে চাপ দিয়ে আসছিল। এতে তাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। রোববার নাসরিন আক্তার ডাক্তার দেখানোর কথা বলে মেহেরুন নেছা ও জাইমাকে সাথে নিয়ে মাওনা চৌরাস্তার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় আল আমিনের কর্মস্থল রিজভী ইলেকট্রনিকসে সে চলে যায়। দুপুর অনুমান ১২টার দিকে আল আমিন তার সহযোগী রবিউল ও নয়নের সহযোগিতায় নাসরিনকে শোরুমের পেছনে একটি প্লাস্টিকের গোডাউনের ফাঁকা কক্ষে নিয়ে যায়। একপর্যায়ে আল আমিন তার সহযোগীদের নিয়ে নাসরিনের গলায় রশি পেঁচিয়ে খুন করে লাশ বস্তায় ভরে রাখে। ঘটনা প্রকাশ হওয়ার ভয়ে এক এক করে মেহেরুন নেছা ও জাইমাকে একই কক্ষে নিয়ে একই কায়দায় খুন করে লাশ বস্তায় ভরে রাখে। আল আমিন রিজভী ইলেকট্রনিকসের ম্যানেজার, রবিউল গাড়ির চালক, নয়ন সেলসম্যানের কাজ করত। আল আমিন বাড়ি যাওয়ার জন্য তার কর্মস্থল থেকে ছুটি নেয়। রাতে আল আমিন তার সহযোগীদের নিয়ে নীল রঙের প্রোবক্স গাড়িতে (নং ঢাকা-মেট্রো-গ-২৫-৪১৪৪) করে ওই তিন লাশ সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানা এলাকার খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে যমুনা নদীতে ফেলে শ্রীপুর চলে আসে। নিহতের স্বামী বাদল ম-ল বলেন, বেলা ১১টার পর থেকে নাসরিনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। তারা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল। শ্রীপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় এনায়েতপুর থানায় পুলিশ বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। শ্রীপুর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ট্রিপল হত্যাকা-ের ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন