বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কৌশল পাল্টে আসছে ইয়াবা

চট্টগ্রামে মাদকাসক্তের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অপরাধ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

‘শেষবারের মতো বলে যাচ্ছি, মাদক ছাড়–ন। না হয় এলাকা ছাড়–ন। এলাকায় থাকলে মাদক ছাড়তে হবে। আর মাদক না ছাড়লে আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ চট্টগ্রাম নগরীর পাথার ঘাটায় কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন হেঁটে মাইকিং করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওসি বলছেন, আমাদের কাছে খবর আছে এই এলাকায় মাদক বেচাকেনা হয়, সেবন হয়। মাদক ছাড়ুন, তা না হলে কঠোর ব্যবস্থা। কোতোয়ালীর ওই এলাকার মতো মহানগরীর অনেক এলাকায় মাদকের কারবার চলছে।
নগরীর কয়েকটি এলাকায় প্রকাশ্যে বসছে মাদকের হাট। মাদক ব্যবসা নিয়ে সংঘাত সহিংসতার ঘটনা এখন নিত্য দিনের। পুলিশের খাতায় যে অপরাধ তার বেশির ভাগের সাথে জড়িয়ে আছে মাদক। সর্বনাশা নেশার ভয়াল থাবায় বাড়ছে আসক্তের সংখ্যা। তাতে বেড়েই চলেছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতাসহ অপরাধ প্রবণতা। আসক্তদের উৎপাত বাড়ছে পাড়ায় মহল্লায়।
করোনা মহামারী আর র‌্যাব-পুলিশের অভিযানেও থামছে না মাদকের কারবার। কৌশল বদল হচ্ছে। কিন্তু নেশার বিস্তার থামছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আসছে ইয়াবা-ফেনসিডিল। করোনাকালে অভাব অনটন বাড়ছে। বাড়ছে বেকার, অভাবী মানুষের সংখ্যা। টাকার লোভে অনেকে বিপদগামী হচ্ছেন। মাদক বহন করছেন। বড় চালানে বড় ঝুঁকি। তাই ছোট ছোট চালানে ভাগ করে পাচার হচ্ছে ইয়াবা ফেনসিডিল।
ছোট চালানসহ বহনকারী ধরা পড়ছে। আড়ালে থাকছে রাঘব-বোয়ালরা। বাংলদেশে ইয়াবার প্রবেশপথ টেকনাফ সীমান্তে প্রতিদিনই কথিত বন্দুকযুদ্ধে লাশ পড়ছে। উদ্ধার হচ্ছে মাদক বহনকারীর গুলিবিদ্ধ লাশ। তারপরও থামছে না ইয়াবার আগ্রাসন। কারণ গডফাদারা আড়ালে-নিরাপদে। র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবা ফেনসিডিলের কারবার থামেনি। কৌশল বদল হচ্ছে মাত্র।
সড়ক, পাহাড়, সাগর আর আকাশ পথেও ইয়াবা পাচার হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার বিমানে পাচারকালে ১৮শ’ ইয়াবাসহ এক যাত্রী ধরা পড়ে। কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম নাইম (২৫) ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে সিভিল এভিয়েশন সিকিউরিটির সদস্যরা তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। পুলিশ জানায়, তার ব্যাগে নয়টি প্যাকেটে এসব ইয়াবা ছিল। নাইম স্বীকার করেছে কিছু টাকার লোভে ঢাকায় একজনের কাছে চালানটি পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল।
সড়কপথেও ইয়াবা পাচারে নিত্য নতুন কৌশল নেয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার লোহাগাড়া উপজেলায় পৃথক দুটি অভিযানে ৫৫ হাজার পিস ইয়াসা উদ্ধার হয়। একটি প্রাইভেটকার ও একটি মিনি ট্রাকে লুকিয়ে কক্সাবাজার থেকে এসব ইয়াবা ঢাকায় নেয়া হচ্ছিল। এসময় গ্রেফতার করা হয় দুই মাদক ব্যবসায়ীকে।
১৮ জুলাই কর্ণফুলী সেতু এলাকা থেকে ২৬ হাজার পিস ইয়াবার চালান আটক করে র‌্যাব-৭। ট্রাকের ধোঁয়া বের হওয়ার পাইপে লুকিয়ে এসব ইয়াবা আনা হচ্ছিল। ২২ জুলাই ১১ হাজার ৫৫৫ পিস ইয়াবাসহ একজনকে আটক করে র‌্যাব-৭। এসব ইয়াবা কাভার্ড ভ্যানে বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় নেয়া হচ্ছিল। ১৩ জুলাই ১৪ হাজার ৫১০ পিস ইয়াবার চালানসহ ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এসি বাস প্লাটিনাম পরিবহনের সুপারভাইজার ও হেলপারকে আটক করে র‌্যাব-৭। তারা বাসে চাকরির আড়ালে ইয়াবার ব্যবসা করতো। প্রতিবারই তারা পৃথক পৃথক কৌশলে ইয়াবা পাচার করতো। ইয়াবা পাচারের অভিযোগে আগেও অনেক বাস আটক করা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন