বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পশুর হাটে বিশৃঙ্খলা

ঢাকায় জমতে শুরু করেছে : সীমানা ছাড়িয়ে রাস্তা-অলিগলিতে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০২ এএম

রাজধানীর কোরবানির পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। ১৬টি অস্থায়ী ও ১টি স্থায়ী হাটে আজ মঙ্গলবার থেকে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হবে। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১১টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ৬টি হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পশু কেনাবেচার যাবতীয় প্রস্তুতির কথা বলা হলেও বাস্তবে এর কিছুই লক্ষ্য করা যায় নি। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই হাটগুলোতে। নিয়ম উপক্ষো করে নির্দ্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে এলাকার রাস্তা-অলিগলিতে ঢুকে পড়েছে হাট। হাটের বিশৃঙ্খলা আর স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবনতা না থাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনাভীতি বাড়িয়ে দিয়েছে।

ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা গণমাধ্যমের সুবাদে দেখছি যে, অনেকেই ইতোমধ্যে ইজারায় বরাদ্দকৃত জায়গার বাইরে আবাসিক এলাকায়ও গরুর হাট বিস্তৃত করছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই আমরা মঙ্গলবার (আজ) থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবো। ইজারায় বরাদ্দকৃত জায়গার বাইরে কোনও ইজারাদার পশুর হাট বসাতে পারবেন না।

ডিএনসিসি এলাকায় ৬টি পশুর হাট বসেছে। ৬টি হাটের মধ্যে ১টি স্থায়ী এবং ৫টি অস্থায়ী হাট। স্থায়ী হাটটি গাবতলীতে। অস্থায়ী ৫টি হাট হচ্ছে- উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ ভবন পর্যন্ত খালি জায়গা, কাওলা শিয়াল ডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমূখী রাস্তার উভয় পাশের খালি জায়গা, ভাটারা (সাইদ নগর) পশুর হাট এবং উত্তরখান মৈনারটেক হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা। উত্তর সিটির হাটগুলোতে ইতোমধ্যে পশু এসেছে। আরও আসছে। হাটকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা লেগেই আছে। উত্তরায় নির্দ্দিষ্ট এলাকার বাইরে রাখা হচ্ছে কোরবানির পশু। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গাবতলীর হাটে পর্যাপ্ত পশু এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থায়ী এ হাটের ইজারাদার। তবে তিনি জানান, ক্রেতার চেয়ে হাটে উৎসুক জনতার ভিড় বেশি। বিশেষ করে দামী গরু দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছে মানুষ।

ডিএসসিসি এলাকার ১১টি পশুর হাটের মধ্যে রয়েছে- কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্ট্রেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর ব্লক-ই, এফ জি এর সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উম্মুক্ত জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের খালি জায়গা এবং রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা। ঢাকা দক্ষিণ সিটির হাটগুলোতে বিশৃঙ্খলা বেশি। প্রতিদিনই ট্রাকে ট্রাাকে গরু আসছে হাটগুলোতে। আর ইজারাদাররা হাটের সীমানার বাইরে রাখছেন পশু। এমনকি সীমানা ছাড়িয়ে অলি-গলি দখল করে রাখা হচ্ছে পশু। এতে করে স্থানীয় বাসিন্দারা করোনা আতঙ্কে ভুগছেন। কারণ হাটগুলোতে কোনো প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। এমনভাবে পশু রাখা হচ্ছে তাতে স্বাস্থ্যবিধি মানাও সম্ভব নয়। সেদিকে কারও নজর নেই। যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন হাটে দেখা গেছে চরম বিশৃঙ্খলা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বসানো হয়েছে হাট। এ ছাড়া দনিয়া এলাকার ভিতরে রাস্তা দখল করে হাট বসানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, গতকাল সোমবার থেকে দনিয়া এলাকার প্রধান সড়ক বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে রেখেছে ইজারাদারের লোকজন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার লাখ লাখ বাসিন্দা। দনিয়া বর্ণমালা স্কুলের সামনে বাঁশ দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখার কারণে এলাকার কেউ বের হতে পারছেন না। আবার শনিরআখড়া আন্ডারপাসের রাস্তাও দখল করে রাখায় যানবাহন চলতে পারছে না। রাতদিন যানজট লেগেই থাকছে। গতকাল দুপুরে আরএস টাওয়ারের এক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঈদের এখনও ৫ দিন বাকি। এখনই রাস্তা বন্ধ করে রাখলে মানুষ চলাচল করবে কিভাবে? নূরপুর এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, করোনার মধ্যে এভাবে এলাকার ভিতরে গরুর হাট বসায় খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। রাস্তা বন্ধ রাখায় এখনই তো হাঁটা যায় না। সামনের দিনগুলোতে কি হবে?

করোনাভাইরাসের গণসংক্রামণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতে হাটে গরু বেচাকেনা করতে পারে এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে ডিএসসিসি’ প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. রাসেল সাবরিন বলেন, ডিএসসিসি এলাকার ১১টি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ১১টি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকছে। আমাদের নির্ধারিত গাইডলাইনের বাইরে কোন অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে সাথে-সাথে তারা ব্যবস্থা নেবেন। এমনকি সংশ্লিষ্ট হাটের ইজারা বাতিল করা হবে।

ডিএনসিসি’র প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, কোরবানি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য শর্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিংয়ের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া প্রতিটি হাটে একটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও অন্যান্য শর্ত মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করতে একটি করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান। এছাড়াও হাটের আইনশৃঙ্খলা ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগের একাধিক টিমসহ বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগে সার্ভিলেন্স টিম গরুর হাটে মোতায়েন থাকছে।

করোনা সংক্রমণ রোধে ইজারা গ্রহীতাকে ইজারা প্রদত্ত অস্থায়ী পশুর হাটে বাধ্যতামূলকভাবে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাটের প্রবেশ পথে টিভি স্ক্রিনযুক্ত থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে প্রবেশকারীর শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করতে হবে। গায়ে জ্বর থাকলে কাউকে হাটে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। হাটে প্রত্যেক প্রবেশকারীকে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, হেড ক্যাপ ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে হাটে প্রবেশ করতে হবে। হ্যান্ড-স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক ও হেড কভার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এসব কাজ তদারকির জন্য মনিটারিং টিম রাখতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি সম্বলিত ব্যানার, পোস্টার টানানোসহ এসব বিষয়ে মাইকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করতে হবে। যদিও গতকাল শনিরআখড়া, শাজাহানপুর, কমলাপুর পশুর হাটে এসব নিয়মের কিছুই দেখা যায় নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Md Mamunur Rashid ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩২ এএম says : 0
গরূর হাটের ভিতর চাঁদাবাজি হয় এগুলো পুলিশ দেখে না। চট্টগ্রাম বিবিরহাট গরূ বাজারে কৌশলে চাঁদাবাজি করে চাঁদা না দিলে ঝামেলা করে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি
Total Reply(0)
Be honest ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
হে আল্লাহ্ গরীব দুঃখী মানুষের হেফাজত করুন!
Total Reply(0)
Be honest ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
হে আল্লাহ্ গরীব দুঃখী মানুষের হেফাজত করুন!
Total Reply(0)
Md Abrar Ahamad Abrar ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
গরুর হাটে একবার গেলেই করোনা হয়ে যাবে এই ভিতি ছড়িয়ে যাচ্ছে পশ্চিমাদের দালাল মিডিয়া গুলো, অথচ সাধারণ হাট বাজারে মানুষ প্রতিদিন যাচ্ছে সেখানেতো করোনার ভিতি নেই, সর্বোপরি কোরবানি উপলক্ষে যারা ঋন নিয়ে পশু লালন পালন করেছে কোরবানিতে ঠিকমতো পশু ক্রয় বিক্রয় না হলে এরা যে পথে বসবে তা নিয়ে এদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।
Total Reply(0)
Mazharul Islam ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৪ এএম says : 0
কুরবানি পশু কিনতে গেলেই করনা হবে।আর বাংলাদেশের সব কিছু যেখোলা তাতে সমস্যা নাই।ভারত থেকে গরু আসছে তাতেও সমস্যা নাই।মুল সমষ্যা হলো কুরবানি আমাদের ধমিও উৎসব। আর এর সাথে জরিয়ে আছে আমাদের কিছু পশু লালন পালন করা গরিব মানুষ।এরা সারা বছর কষ্ট করে নিজে না খেয়ে পশুটাকে খাওয়ায়।কিছু লাভের আশায়। কুরবানী না দিলে আল্লাহর অসন্তোষ্টির সাথে সাথে হাজারো মানুষের ও পেটে লাথি মারা হবে।তাহলে জেনে বুজে কেন এইটার করা হয়।
Total Reply(0)
Shopan Shopan ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৪ এএম says : 0
গরীবের করোনা ভাইরাস হয় না। পেটের জ্বালা মেটাতে হবে
Total Reply(0)
Ahamed Kabir ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
আমরা মেহনতি মানুষ অনেক কিছু বুঝিনা তার পরও চলতে হবে দূর দূরান্তে ۔কিছু সতর্ক থাকলে হয় তো এই মহামারী covid - 19 থেকে রক্ষা পাবো নাম্বার 1- আমার হাত নাক ,কান ,চোখ এবং মুখ স্পর্শ থেকে রক্ষা করতে হবে۔ 2- হাত ভাল করে ধুয়ে খানা খেতে হবে ۔3 - একান্ত প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কিছু না খাওয়া ۔
Total Reply(0)
Ahmed Kauser ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
কূরবানি হ‌উক শুধুই আল্লাহর জন্য।যারা কুরবানি দিবে তাদের যদি ঋন থাকে তাহলে আগে ঋন পরিশোধ করা উচিৎ।
Total Reply(0)
MD Khalid Hasan ২৮ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
কাপড়ের মার্কেটে তো পা ফেলাই যায় না। কোরবানি নিয়ে এতো চুলকানি কেন?
Total Reply(0)
Md.Mehedi Hasan ২৮ জুলাই, ২০২০, ৮:০৭ এএম says : 0
আল্লাহ সকল কে রক্ষা করুন,আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন