শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দক্ষিণাঞ্চলে কোরবানির হাটে পশুর চেয়ে ক্রেতা কম হলেও দাম কমেনি এখনো

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৮ জুলাই, ২০২০, ৪:২৫ পিএম

ঈদ উল আজহার তিন দিন বাকি থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলে কোরবানির পশুরহাটে এখনো ক্রেতা সংকটে বিক্রেতারা হতাশায়। খোদ বরিশাল মহানগরীর ৪টি পশুরহাটে এখনও কেনাবেচা খুব একটা জমে ওঠেনি। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের অন্য জেলা উপজেলার সাপ্তাহিক হাটেও ক্রেতা সমগম খুবই কম। ফলে ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের দুঃশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। অনেকেই পুজি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মতে, দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় ২০ হাজার খামারির কাছে এবার ১ লাখ ১৩ হাজার ১১২ টি ষাড়, প্রায় ২১ হাজার ৫শ বলদ, ১৭ হাজার গাভী, ৫ হাজার ৮শ মহিষ, ৩০ হাজার ছাগল ও খাশি এবং প্রায় ৬শ ভেড়া মজুদ রয়েছে। এছাড়াও পারিবারিক পর্যায়ে আরো প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন ধরনের কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে এ অঞ্চলে। এবার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা উপজেলাতে প্রায় পৌনে ৩শ কোরবানির পশুর হাট বসার প্রাক্কলন করেছে প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। তবে ওয়াকিবাহল মহলের মতে করেনা সংকটে এবার দক্ষিণাঞ্চলে পশু কোরবানীর সংখ্যা গত বছরের চেয়ে অন্তত ৩৫Ñ৪০% হ্রাস পেতে পারে। সে হিসেবে ক্রেতা সংকটের কারনে কিছু সমস্যা হতেই পারে। তবে পশ্চিমাঞ্চল থেকে যদি কোরবানির গরু না আনা হয়, তবে এ অঞ্চলের পশু অবিক্রিত থাকার কথা নয়। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের মতে গত বছর ঈদ উল আজহায় দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলাতে ৪ লাখ ৩৪ হাজার পশু কোরবানি হয়েছিল। যা ছিল আগের বছরের চেয়ে অন্তত ১৫% বেশী। কিন্তু এবার করোনা সংকটে সম্পূর্ণ বিপরিত চিত্র।
অপরদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, এবার কোরববানির পশু বিক্রী কম হলেও সিন্ডিকেট করে দাম কমাচ্ছেন না বিক্রেতারা। পাশাপাশি বরিশালের হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই না থাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমন আতংকে হাটে ক্রেতা সমাগম যথেষ্ঠ কম। করোনা সংকটজনিত অর্থনৈতিক কারনেও কোরবানির পশুর হাটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের নগরীতে বাঘিয়া ও পোর্টরোড কসাইখানা দুটি স্থায়ী হাট ছাড়া রূপাতলী সোনারওগাঁও টেক্সটাইল মিল ও কাউনিয়া টেক্সটাইল মিল গেটের সামনে আরো দুটি অস্থায়ী হাটের অনুমতি দিয়েছে। তবে কসাইখানা হাটে এবার পশু বিক্রি না হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। অপর ৩টি হাটে সোমবার থেকে ৫দিন পশু বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
নগরীর প্রায় সবগুলো পশুর হাটে গরু কিনতে আসা একাধিক ক্রেতা জানান, হাটে গরু উঠেছে, কিন্তু বেচাকেনা নেই। দাম বেশি চাওয়ায়ও ক্রেতাদের আগ্রহ কম। সদর উপজেলার চরমোনাই পশুর হাটের চিত্রও প্রায় একই। স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে ক্রেতাদের অভিযোগ এটি কারো নজরদারিতে নেই। মেঘনাবেষ্টিত উপজেলা হিজলা’র টেকেরহাট বাজারে প্রচুর গরু উঠছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। ওই হাটের ইজারাদার হারুন অর রশিদ বেলা আড়াইটায় জানান, তখন পর্যন্ত দুটি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর যে গরুর দাম ১ লাখ টাকা ছিল, এবার সেই গরু ৮০ হাজার টাকাও কিনতে চাচ্ছেন না ক্রেতারা। ইজারাদার বলেন, করোনা সংক্রামনের ভয়ে মানুষ হাটে আসছেন না।
গতবছর ঈদ উল আযহার আগে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পশুর হাটে দৈনিক ১ লাখ টাকা খাজনা উঠলেও এবার ৪০ হাজারের বেশী পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। বরিশালের অন্যতম বৃহৎ বোয়ালিয়া হাটের ইজারাদার জানিয়েছেন, বৃহৎ হাট হিসাবে ঈদের ৪ দিন আগে যেমন জমজমাট হওয়ার আশা ছিল তা হয়নি। এ অবস্থায় ইজারা খরচ ওঠান নিয়েই শংকিত ইজারাদার।
জেলার আরেক ঐতিহ্যবাহি পশুরহাট, গৌরনদীর কশবা পশুরহাটও জমে উঠেনি। সেখানকার একাধিক বিক্রেতা জানিয়েছেন, এবার করোনায় বিক্রি হবে না এমন ধারনা করে পাইকাররা গরু-ছাগল এনেছেন কম। কমেছে ক্রেতাও। বানারীপাড়ার গুয়াচিত্রা পশুরহাটে গরু-ছাগল আছে প্রচুর, কিন্তু ক্রেতা কম। তবে এ অবস্থাতেও দাম কমাচ্ছেন না বিক্রেতারা। বিক্রেতারা শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন কাঙ্খিত দামে গরু বিক্রী করতে।
তবে দক্ষিণাঞ্চলের কোন পশুরহাটে স্বাস্থ্যবিধি বলতে এখন আর কিছু নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন