বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

শুটিং ফেডারেশনে তুঘলকি কান্ড!

জাহেদ খোকন | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

করোনাকালে দেশের সব খেলাধুলা যখন বন্ধ, ঠিক তখনি তুঘলকি কান্ডে সরব বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশন। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে দেশের প্রায় সব ক্রীড়াবিদ যেখানে ঘরবন্দী, সেখানে চলতি মাসের শুরুতে জাতীয় দলের চার শুটার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে রাইফেল আনার অভিযোগে ধর্না দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অফিসে! জানা গেছে, সরকারী অনুমতি ছাড়া ২০১৭ সালে ৭টি ওয়ালথার এলজি-৪০০ এয়ার রাইফেল জার্মান থেকে নিয়ে আসেন শুটাররা। কিন্তু দেশে নেমে শুল্ক না দিয়েই বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তারা। এই অভিযোগে দেশের ১৪ শুটারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এনবিআর। প্রথম দফায় ৬ জনকে ডাকা হলেও গত ৫ জুলাই সাক্ষ্য দিয়েছেন চার শুটার। আর এতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেশের শুটিং অঙ্গণ। এ ঘটনার রেশ ধরেই বেড়িয়ে আসে শুটিং ফেডারেশনের নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজের ফিরিস্তি। বিশ্বস্ত সুত্র জানায়, মূলত ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটি ও মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর দ্বন্দের কারণে এখন আলোচনায় শুটিং। অভিযোগ রয়েছে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে জার্মান থেকে রাইফেল আনার ঘটনায় নাকি দায়ী স্বয়ং ফেডারেশনের মহাসচিব অপু। হঠাৎ তার বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় তিনটি উড়ো চিঠি। চিঠিগুলোতে অপুর বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে ১০টিকে গুরুত্ব দিয়ে গত বছরের ২৯ জুলাই নির্বাহী কমিটির সভায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ফেডারেশন। যে কমিটির আহবায়ক হন ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য হোসনে আরা বেগম। সদস্যরা হলেন- পুলিশের প্রথম মহিলা ডিআইজি ইয়াসমিন গফুর ও ফেডারেশনের উপ-মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করতে গিয়ে কমিটি মহাসচিব অপুর বিরুদ্ধে অসংখ্য অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে। তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে মহাসচিব নির্বাহী কমিটির অনুমোদন ছাড়া এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেডারেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যা দেশের শুটিং খেলাকে মারাত্বক ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। তদন্ত কমিটি সাক্ষ্য প্রমাণসহ চলতি বছরের ২১ মার্চ ফেডারেশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে অপুকে দায়ী করে বলা হয়, জার্মান থেকে আনা ৭টি ওয়ালথার এলজি-৪০০ এয়ার রাইফেল উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। এসব অস্ত্রের কয়েকজন ক্রেতা তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে তথ্যটি জানান। শুধু তাই নয়, ১০ মিটার শুটিং রেঞ্জের ইলেকট্রনিক টার্গেট চেঞ্জার স্থাপনের কাজ নিয়েও দুর্নীতির খবর পাওয়া যায়। মহাসচিব অপুর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘ডেলকো বিজনেস অ্যাসোসিয়েটস’ ১০ মিটার রেঞ্জের আধুনিকায়নে দশটি ইলেকট্রনিক টার্গেট চেঞ্জার স্থাপনের কাজ করে ফেডারেশনের প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি করেছে। কেননা, প্রতিটি চেঞ্জারের মূল্য দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে। পরে ‘ভিশন ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ থেকে প্রতিটি চেঞ্জার ৬ লাখ ৭৭ হাজার ১২৪ টাকা করে কিনেছে ফেডারেশন। বিগত কয়েক বছরে ফেডারেশনের যাবতীয় ঠিকাদারী, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, পুরাতন এসি লাগিয়ে নতুন এসির মূল্য নেয়া, ফেসবুক পরিচালনায় ২৫ লাখ টাকা তোলা ইত্যাদী নিয়েও অভিযোগ আছে মহাসচিবের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রশিক্ষণ কমিটির আপত্তি স্বত্বেও রহস্যজনক কারণে বারবার জার্মানিতে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছে শুটারদের। নির্বাহী কমিটির অনুমোদন না নিয়ে এশিয়ান শুটিং কনফেডারেশনের নির্বাচনে প্রার্থীতা দাখিল করেছেন অপু। আবার নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত থাকলেও অ্যানুয়েল পারফরমেন্স এগ্রিমেন্ট (এপিএ) প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়মিত করেননি। ফেডারেশনের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এপিএ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম মাত্র ৩ মাসের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। যার খরচ ছিল ৭০/৮০ হাজার টাকা। যা তদন্ত প্রতিবেদনেও উল্লেখ আছে।

মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ অপুর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো নিয়ে কি ভাবছে ফেডারেশন? এ প্রসঙ্গে গতকাল বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের সভাপতি নাজিমউদ্দিন চৌধুরী বলেন,‘অভিযোগ প্রমাণের জন্য আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। যে কমিটি চলতি বছরের ২১ মার্চ আমাদের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কিন্তু প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরই দেশে লকডাউন পড়ে যায়। তাই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কিছু করা হয়নি। তবে লকডাউন একটু শিথিল হলে ২৮ মে কুরিয়ারের মাধ্যমে ফেডারেশরেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্যদের কাছে প্রতিবেদনের কপি পাঠিয়েছি। এরপর ৬ জুন করোনাকালে প্রথম সভা করি আমরা। এ সভায় মহাসচিব নিজেও উপস্থিত ছিলেন। তিনি লিখিত একটি ব্যাখ্যাও দেন। আমি বলেছি আগামী সভায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে। নির্বাহী সদস্যরা কি বলেন সেই আলোকেই সিদ্ধান্ত নেবো।’ এদিকে বক্তব্য নিতে মহাসচিব অপুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোনে তাকে পাওয়া যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন