শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজনৈতিক নেতা বনাম ব্যবসায়ী প্রতিযোগিতা

ঢাকা-১৮ আসনে আ.লীগের মনোনয়ন

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের ইন্তেকালে শূন্য হয়েছে ঢাকা-১৮ আসন। নির্বাচনের দিন-তারিখ নির্ধারণ না হলেও থেমে নেই নির্বাচনী প্রচারণা। নানাভাবে প্রচারণা চালিয়ে নিজের প্রার্থীতার কথা জানান দিচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। সাহারা খাতুনের মাগফেরাত কামনায় মসজিদে মসজিদে দোয়া, শোক জানিয়ে ফেস্টুন করা, করোনায় গরীব দুস্থ্যদের সহায়তা, দলের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালনসহ নানা ভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং ব্যবসায়ী নেতারা রয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়। এ আসনে এখন পর্যন্ত স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এবার এলাকার দলীয় নেতাকর্মীরা স্থানীয় নেতাদের দিকে থেকে মনোনয়ন চান। মনোনয়নে আলোচনার দৌড়ে রয়েছেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী খসরু। এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারীরা দুইজনকে ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। তবে তারা উভয়ই সরাসরি প্রার্থীতার বিষয়ে কিছু বলেননি।
ব্যবসায়ীদের প্রার্থী হওয়া নিয়ে কিছুটা মনস্তাত্তিক দ্ব›দ্বও শুরু হয়েছে দলের নেতাদের ভিতরে। তাদের মতে, দীর্ঘদিন রাজনীতি করেও যদি দলের মনোনয়ন না পান তাহলে দলের জন্য এতো কাজ করে কি লাভ! নেতারা রাজনীতি করে আসছেন একটা স্বপ্ন নিয়ে যে ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি হবেন। কিন্তু দল থেকে যদি ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে তা রাজনৈতিক নেতাদের জন্য কষ্টদায়ক। এ নিয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে তারা বক্তব্য দিচ্ছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমেও।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য, সাহারা খাতুন একজন সৎ ব্যক্তি ছিলেন। ফলে তার মতো একজন দক্ষ, সৎ ও ত্যাগী ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে এ আসনের মানুষ উপকৃত হবে। তবে দলের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে কর্মীরা কাজ করবে না বলেও জানিয়েছেন তৃণমূলের অনেক নেতা। নেতারা বলেন, ঢাকা-১৮ গুলশান বা ধানমন্ডির মত আভিজাতিক না। এখানে উত্তরার ভোটারের চেয়ে দক্ষিণ খান, উত্তরখান, তুরাগ, খিলক্ষেতের ভোটার বেশি। স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দেয়া না হলে এসব এলাকার ভোট পাওয়া সম্ভব হবে না।
প্রার্থীতার বিষয়ে হাবিব হাসান ইনকিলাবকে বলেন, ১৯৭৫-এর পর থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তিনি। এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকাকালীন সকল আন্দোলনে এ আসনে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছি। দলকে সংগঠিত রেখেছি। ২০০৮ সালে তৃণমূলর ভোটে এক নম্বর প্রার্থী ছিলাম; কিন্তু মনোনয়ন পাইনি। সাহারা আপা ভাল মানুষ ছিলেন। এবার আমরা চাই এ আসনের রাজনীতিবিদদের মধ্যে থেকে দলের মনোনয়ন দেয়া হোক।
তিনি আরো বলেন, যদি দলের কেন্দ্রীয় কোন নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলেও তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করবেন। কিন্তু দলের বাইরে থেকে কোন ব্যবসায়ী মনোনয়ন দেয়া হলে তা দুঃখজনক হবে। হাবিব হাসান দীর্ঘদিন উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এর আগে হরিরামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
প্রার্থীতার বিষয়ে এস এম তোফাজ্জল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, দলের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। দলকে সুসংগঠিত করে রেখেছি। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। কিন্তু স্থানীয় কেউ এমপি না থাকার কারণে এলাকার আশানুরুপ উন্নয়ন হয়নি। আমরা চাই স্থানীয় কেউ দলের মনোনয়ন পান। তাহলে এলাকার উন্নয়ন অগ্রগতি ভাল হবে।
তিনি আরো বলেন, যারা ব্যবসায়ী তারা তো দলের কর্মীদের চিনে না, এলাকার রাস্তাঘাটও চিনে না। তাদের ধারা উন্নয়নও হয় না, দলের সাথেও অনেক দূরত্ব থাকে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন দলের কর্মীদের থেকে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হোক। মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন দীর্ঘদিন উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছিলেন। দক্ষিণ খান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বড় ভাই এস এম মোজাম্মেল হকও দীর্ঘ সময় দক্ষিণখান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এদিকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমই) সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের মন্তব্য পাওয়া না গেলেও তার অনুসারীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে প্রত্যেক এলাকায় ফেস্টুন করা হয়েছে।
মাঠে রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম চৌধুরী খসরু। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা খসরু। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতিতে গরীর দুস্থ্যদের মাঝে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করছেন। এছাড়া কে.সি ফাউন্ডেশেনের মাধ্যমে আসনে স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
খসরু চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা শহরের মধ্যে এ আসনটি অনেক অনুন্নত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারায় এ আসনকে একটি আধুনিক উন্নত এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছা নিয়ে দলের মনোনয়ন চাইবো। আমরা আশা করি দল এ আসনে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেবে। তিনি আরো বলেন, এলাকার অনেক উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য আমাকে সরকারি সহায়তার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। নিজ উদ্যোগেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করার সামর্থ দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা।
ঢাকা-১৮ আসনে প্রবীণ রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন প্রায় ১২ বছর এমপি ছিলেন। গত ৯ জুলাই থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
শিমুল ২৯ জুলাই, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 0
বর্তমানে রাজনীতি হলো সবচেয়ে বড় ব্যবসা
Total Reply(0)
তানিয়া ২৯ জুলাই, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 0
সৎ ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া উচিত
Total Reply(0)
ডালিম ২৯ জুলাই, ২০২০, ২:০৭ এএম says : 0
ইদানিং ব্যবসায়ীদেরকে বেশি রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন