শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ব্যাপক পরীক্ষা সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়তে পারত

করোনা বিপর্যয়ের নেপথ্যে- শেষ পর্ব

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২০, ১২:০০ এএম

বরিস জনসন আরও বেশি আশাবাদী ছিলেন। সেময় তিনি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘বিপুল সংখ্যক চিন্তিত লোকের জন্য এটি সাধারণ বিষয় হওয়া উচিত।’ তবে ব্রিটিশ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ইতোমধ্যে ক্রমবর্ধমান চাপ অনুভব করছিলেন। বার্মিংহাম, লন্ডন এবং অন্যান্য স্থানের নিবিড় পরিচর্যা ওয়ার্ডগুলোকে তাদের ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি চাপের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছিল।

ইংল্যান্ডের বৃহত্তম স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি হসপিটালস বার্মিংহ্যামের চিফ অপারেটিং অফিসার জনাথন ব্রাদারটন বলছিলেন, ‘এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মহামারি পরিকল্পনা কাজে আসছে না।’ গত ১০ মার্চ ক্রমেই উত্তেজিত হয়ে ওঠা এসএজিই সভায় বিজ্ঞানীরা নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটগুলোর রোগীদের সংখ্যা থেকে উপসংহারে পৌঁছেন যে, সারা দেশে কমপক্ষে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার সংক্রমণ ঘটেছে। এক সভায় অধ্যাপক ফার্গুসনের সতর্কবার্তা মন্ত্রিপরিষদের কর্মকর্তাদের অবাক করে দেয়। এর ৬ দিন পর ফার্গুসন জানিয়েছিলেন যে, এসএজিই’র মডেলিং প্যানেলটি তাদের অনুমান থেকে এসেছে। সংস্থাটির পূর্বের পূর্বাভাস হিসাবে, গ্রীষ্ম পর্যন্ত নয়, দুই সপ্তাহের মধ্যে এপ্রিলের শুরুতেই সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটবে। ফার্গুসন সেদিন একটি গণসমীক্ষা প্রকাশ করেছিলেন, যেখানে প্রথমবারের মতো কয়েক লাখ মানুষের মধ্যে একটি সম্ভাব্য মৃত্যুর সংখ্যা অনুমান করা হয়েছিল। মত বদলে সংস্থাটি স্কুল বন্ধকরণসহ সামাজিক দূরত্বের কার্যকর ব্যবস্থাগুলো আরোপ করার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। সভার স্বরণিকা অনুযায়ী দলটি পরামর্শ দিয়েছিল, ‘দ্রত কাজ করাই শ্রেয়।’ ফ্রান্সসহ বেশিরভাগ ইউরোপ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে, জনসন বাধ্যতামূলক লকডাউন আরোপ করতে ২৩ মার্চ অবধি আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করেছিলেন। ব্রিটেন, স্পেন, বেলজিয়াম, ফ্রান্স এবং ইতালি জানিয়েছে যে, দেশগুলিতে এখন মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের সর্বাধিক। ফ্রান্সে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন এবং ম্যাখোঁ স্বীকার করেছেন যে, তার সরকার প্রস্তুত ছিল না।

তিনি বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তটি সত্যি কথা বলতে, ফাটল, সঙ্কট উন্মোচিত করেছে। করোনাভাইরাসে ব্রিটেনে ৪৪ হাজার মৃত্যুর পরও দেশটির কর্মকর্তারা তাদের ক্রিয়াকলাপের পক্ষে সাফাই গাচ্ছিলেন। স্বাস্থ্য বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছিলেন. ‘সরকারের কর্মপস্থা দুর্বলদের রক্ষা করার সুযোগ দিয়েছে এবং নিশ্চিত করেছে যে, সংক্রমণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছলেও জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়বে না।’ তবে জনসন স্বীকার করেছেন যে, তার সরকার গাছাড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। তবে, বেশ কয়েকজন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা তার নীতি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিতে চেয়েছেন।

অধ্যাপক ফার্গুসন একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, আগেই লকডাউন আরোপ না করার সিদ্ধান্তটি সরকার এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের; মডেল প্রস্তুতকারীদের নয়। তিনি জোর বলেছিলেন যে, মার্চের গোড়ার দিকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক করেছিলেন, ব্রিটেনের অপর্যাপ্ত পরীক্ষার অর্থ বিজ্ঞানীদের কাছে মহামারিটি সনাক্ত করার মতো অপর্যাপ্ত তথ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘পুরো ইউরোপ জুড়ে ব্যাপক পরীক্ষা করা অন্য এক ব্যাপার হতো, যা সবচেয়ে বড় পার্থক্য তৈরি করতে পারত।’

অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, মার্চের শুরুতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলোর রিপোর্টসমূহ আরও পরীক্ষা বা মডেলগুলোর জন্য অপেক্ষা না করে লকডাউন আরোপ করার জন্য যথেষ্ট কারণ হওয়া উচিত ছিল। ড. আন্দ্রে, যিনি করোনাভাইরাস নিয়ে বেলজিয়ামকে পরামর্শ দেয়ার আগে বহু বছর আফ্রিকার মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করে কাটিয়েছেন, তিনি অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের ভ্রান্ত জ্ঞান ও অহমিকা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তারা দেশগুলোকে করণীয় সম্পর্কে সর্বদা জ্ঞান দিতে থাকে। কিন্তু যখন এসব বিশেষজ্ঞের নিজের দেশে এটি ঘটে?’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের আরও একটি শিক্ষা নিতে হবে। শিক্ষাটি হ’ল নম্রতা।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন