শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

স্বর্ণের তেজ কমছে, নমনীয় রূপাও

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২০, ৪:০৭ পিএম

বেশ কয়েকদিন ধরে একের পর এক রেকর্ড ভেঙে বিশ্ববাজারে বাড়ছে মূল্যবান ধাতু স্বর্ণের দাম। তবে, আজ বুধবারের (২৯ জুলাই) চিত্র কিছুটা ভিন্ন। আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ নিয়ে কাজ করা সংস্থা গোল্ড প্রাইসের তথ্যে দেখা যায়, মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) সর্বোচ্চ যে দামে বিক্রি হয়েছে সোনা, বুধবার দুপুর পর্যন্ত একবারের জন্যও পার হয়নি সেই দাম। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে গতকালের তুলনায় আজ কম দামেই বিক্রি হচ্ছে আভিজাত্যের প্রতীক এই ধাতুটি।

গোল্ড প্রাইসের তথ্য মতে, মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৯৫৮.১১ ডলারে। অথচ আজকে প্রতি আউন্স সোনা বেচাকেনা হচ্ছে ১৯৫৮ ডলারের। দাম কমতির প্রবণতায় রয়েছে রূপাও। গতকাল (২৮ জুলাই) প্রতি আউন্স উজ্জ্বল এই ধাতুর সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ২৪.২৪ ডলার। আজ বিক্রি হচ্ছে এর কমেই।

এর আগে ২৭ জুলাই (সোমবার) সকালেই বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (এক আউন্স সমান ২৮.৩৫ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ওঠে ১৯৪৪ ডলারের বেশি। এর আগে ২০১১ সালে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম উঠেছিল ১৯২১ ডলারে। অর্থাৎ সে সময়ের চেয়ে প্রায় ২৪ ডলার বেড়ে দামের নতুন রেকর্ড গড়ে মূল্যবান এই ধাতু।

বিদেশী মিডিয়ার বিশ্লেষণ বলছে, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অন্য কিছুর ওপর আস্থা রাখতে না পেরে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ কিনতে থাকায় স্বর্ণের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে।
করোনাভাইরাসের মহামারিতে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৬০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই আতঙ্কের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার রাজনৈতিক উত্তেজনা। এসব অস্থিরতায় বর্তমানে সুদের হার প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নেমেছে। আবার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারে লভ্যাংশ নিয়ে অনিশ্চয়তাও সর্বোচ্চ পর্যায়ে। এতে অনেক বিনিয়োগকারী স্বর্ণ কেনাকে মনে করছেন নিরাপদ বিনিয়োগ। যদিও এতে লভ্যাংশ কিংবা সুদের হার পাওয়া যায় না; কিন্তু সংকটকালে এর দাম বেড়ে যায়। এ বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশ।
তবে স্বর্ণে বিনিয়োগের কিছু সমস্যাও আছে। লভ্যাংশ কিংবা সুদের হার না পাওয়ার পাশাপাশি স্বর্ণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাড়তি খরচ আছে। যুক্তরাজ্যের মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী বুলিয়নভল্টের গবেষণা পরিচালক আদ্রিয়ান অ্যাশ বলেন, স্বর্ণ মজুতের ক্ষেত্রে (ইন্সুরেন্সসহ) প্রতিবছর বিনিয়োগকারীর মজুতের দশমিক ১২ শতাংশ পর্যন্ত খরচ হয়। এই হিসেবে প্রতিটি সাড়ে ১২ কেজি স্বর্ণের বারের বর্তমান মূল্য প্রায় ছয় লাখ পাউন্ড। এতে প্রতিমাসে এক বিনিয়োগকারীর খরচ প্রায় ৬০ পাউন্ড। তারপরও স্বর্ণ কেনার দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র-চীন রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির জেরে দেশ দুটি পাল্টাপাল্টি কনস্যুলেট বন্ধ করার পর পড়ে গেছে মার্কিন ডলারের দর। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরের পর ডলারের সূচক সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে। মুদ্রানীতি নিয়ে আলোচনা করতে এ সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এমন দাম বাড়ার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে বাংলাদেশেও দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। বাজুসের একজন সদস্য জানান, গত শুক্রবার থেকে স্বর্ণের বাড়তি দাম কার্যকর হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ২ হাজার ৯১৬ টাকা বাড়িয়ে ৭২ হাজার ৭৮৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬৯ হাজার ৬৩৪ টাকা এবং ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৬০ হাজার ৮৮৬ টাকা। সনাতন পদ্ধতিতে স্বর্ণের দাম ৫০ হাজার ৫৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে স্বর্ণের দাম আগে কখনও এত ছিল না।

এদিকে বাজুস যখন দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল এক হাজার ৮৮৯ ডলার। অর্থাৎ বাজুসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার পর ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩৪ ডলার বেড়ে গেছে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার বিষয়ে স¤প্রতি ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার ও স্বর্ণ শিল্পী সমিতির সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার বলেন, ২০১১ সাল ছাড়া স্বর্ণের এমন দাম বাড়ার প্রবণতা কখনও দেখা যায়নি। শেয়ারবাজারে মন্দার কারণে আন্তর্জাতিক গেম্বলাররা (জুয়াড়ি) স্বর্ণ কিনে মজুত করছেন। এ কারণে স্বর্ণের এমন দাম বাড়ছে।

তিনি বলেন, স্বর্ণের দাম বাড়লেও আমাদের বিক্রি নেই। আমাদের দেশে স্বর্ণালংকার বেশি ব্যবহার করেন মধ্যবিত্তরা। করোনার কারণে এই মধ্যবিত্ত এখন বড় সমস্যায় পড়েছেন। তাছাড়া বয়স্করা এখন ঘর থেকে বের হচ্ছে না। সবমিলিয়ে আমাদের বিক্রি শূণ্যের কোঠায় নেমেছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৯ জুলাই, ২০২০, ৫:৪৭ পিএম says : 0
বুজো আর না বুজো পত্রিকায় লিখো। আমি একজন স্বরণের ব্যবসায়ী। ইনশাআল্লাহ। এবং ইংল্যান্ডে।
Total Reply(0)
Mohammed Kowaj Ali khan ২৯ জুলাই, ২০২০, ৫:৪৭ পিএম says : 0
বুজো আর না বুজো পত্রিকায় লিখো। আমি একজন স্বরণের ব্যবসায়ী। ইনশাআল্লাহ। এবং ইংল্যান্ডে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন