বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঈদ যাত্রায় বাধা বন্যা

বাস-ট্রেনে ভিড় নেই

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:০৪ এএম

আর একদিন পরেই ঈদুল আজহা। ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় নেই বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে। তবে লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। বাস মালিকরা জানান, ঈদে ৩০ শতাংশ দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। তারপরেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। আর ৫০ শতাংশ সিট খালি রেখে চলছে ট্রেন। ঈদে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন না করায় ট্রেনে বাড়তি যাত্রী যাওয়ার সুযোগ আগেই চলে গেছে।
করোনা সংক্রমণের মধ্যেও গত ঈদুল ফিতরে ঘরমুখী মানুষের স্রোত দেখা গেছে। এবার ব্যতিক্রম। পরিবহন মালিকরা জানান, করোনা, অর্থনৈতিক সঙ্কট ও বন্যা পরিস্থিতি এ সঙ্কটে এবার ঈদে ঘরে ফেরার ঢল নেই। করোনা ভয় কেটে উঠলেও হাতে টাকা না থাকায় মানুষ ঈদযাত্রায় শরিক হতে আগ্রহী হচ্ছে না। পাশাপাশি বন্যার কারণও রয়েছে।
সরকারি তথ্যমতে, বন্যায় ইতোমধ্যে দেশের ৩১টি জেলায় মোট ১০ লাখ ২১ হাজার ৮৩৪টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার দেওয়া সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, বন্যায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪১ জন। বন্যাকবলিত উপজেলার সংখ্যা ১৫৪টি এবং ইউনিয়নের সংখ্যা ৯১৭টি। পানিবন্দি পরিবার সংখ্যা ১০ লাখ ২১ হাজার ৮৩৪টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৮ জন।
গণপরিবহনের মালিকরা জানান, এবারের ঈদযাত্রায় গণপরিবহনের সংখ্যা কমিয়ে মাত্র ৩০ শতাংশ পরিচালনা করা হবে। কিন্তু এরপরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই গণপরিবহন পরিচালনা করা হচ্ছে। আর কাউন্টারের পাশাপাশি অনলাইনেও অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করা যাচ্ছে। অন্যান্য ঈদে যাত্রীর তুলনায় গণপরিবহন সঙ্কট থাকলেও এবারের ঈদে উল্টো চিত্রই দেখছেন তারা।
সরেজমিনে মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কাউন্টারগুলোতে নেই কোনও ঈদের আমেজ। অগ্রিম টিকিট নিয়ে বসে থাকলেও যাত্রীর দেখা নেই। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু যাত্রী আসছেন। জানতে চাইলে মহাখালী টার্মিনালের এক মালিক জানান, পরিবহন বন্ধ থাকায় গত রমজানের ঈদে নগরবাসীর অনেকেই গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেননি। তাতে আমাদের ধারণা ছিল এবার ঈদে বাড়তি চাপ পড়তে পারে গণপরিবহনে। তাছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হয়নি। ধারণা করা হয়েছিল সড়কেই চাপ থাকবে ঘরমুখো মানুষের। এসব বিষয় মাথায় রেখেই পরিবহন মালিকরা ঈদযাত্রার প্রস্তুতি নিলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সোহাগ পরিবহনের পরিচালক মারুফ তালুকদার সোহেল বলেন, আমাদের মোট সক্ষমতার ৩০ শতাংশ পরিবহন পরিচালনা করার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এই পরিবহনগুলোর জন্যও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এই সময়ে ২০ আসনের বাসে ১৪ থেকে ১৫ জন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন দূরপাল্লার প্রতিটি বাসে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, দেখতে দেখতে ৫ মাস হয়ে গেলো। এভাবে আর কত ভর্তুকি দেবো? পকেট থেকে আর কত দেওয়া যায়? সরকারও আমাদের এই সেক্টরকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমি আমাদের কর্মকর্তাদের ডেকে বলেছি তারা যেন বিকল্প চিন্তা করেন। ভর্তুকি দিয়ে আর ব্যবসা করা যাবে না। ঈদের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ৩০ শতাংশ পরিবহন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু যাত্রী নেই। অন্যান্য বার এমন সময়ে ঈদযাত্রীদের টিকিট দিয়ে পেরে উঠতাম না। সেখানে এবার টিকিট নিয়ে বসে থেকেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এখন যে কোনও দিনের টিকিট পর্যাপ্ত রয়েছে। যে কেউ আসলেই টিকিট পাবে। যাত্রী না থাকার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকরোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি তো রয়েছেই, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্যা। মানুষের কাছে টাকা নেই বললেই চলে। আর বন্যা পরিস্থিতির কারণে মানুষ গ্রামের বাড়িতে যেতে আগ্রহী নয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যতক্ষণ যাত্রী থাকবে ততক্ষণ পরিবহন পরিচালনা করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস পরিচালনার জন্য সব মালিককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখাসহ বাস পরিচালনার জন্য যেসব স্বাস্থ্যবিধি প্রণয়ন করে দেওয়া হয়েছে সেগুলো পালন করা হবে। খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, করোনার কারণে অধিকাংশ কোম্পানীর বাস বসে আছে। যাত্রী না থাকায় চলাচল করছে না।
অন্যদিকে, স্বাভাবিক সময়ে ঈদে কমলাপুর রেল স্টেশনে পা রাখা যেতো না। একেকটি ট্রেনে কয়েক গুণ যাত্রী উঠতো। আসনের দ্বিগুণ-তিন গুণের বাইরেও ট্রেনের ছাদে উঠতো হাজার হাজার যাত্রী। এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলছে মাত্র ১৯টি ট্রেন। ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের সংখ্যা বাড়েনি। আবার ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে শুধুমাত্র অনলাইনে। নতুন করে টিকিট বিক্রির সুযোগও নেই। এসব প্রক্রিয়ার কারণে ট্রেনে এমনিতেই ভিড় নেই।
তবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। গতকাল দুপুরের পর কয়েক হাজার যাত্রী ভিড় করে সদরঘাট টার্মিনালে। লঞ্চে সেই আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না।
লঞ্চ মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ঈদের আর দু’দিন বাকি। এ সময়ে লঞ্চ টার্মিনালে একসাথে অর্ধলক্ষ যাত্রীর সমাগম হতো স্বাভাবিক সময়ে। সে তুলনায় যাত্রী নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, বন্যার কারণে মানুষ আর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে না। ঈদ করতে গ্রামে যাবে কিন্তু থাকবে কোথায়? দেশের ৩১ জেলা এখন বন্যাকবলিত। তার মানে অর্ধেক জেলার মানুষ বিপদে আছে।
একটি বেসরকারি সংস্থার চাকরিজীবী মাহমুদ হোসেন জানান, কোরবানির ঈদে প্রতি বছর গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়ীতে যেতেন। এবার বন্যায় বাড়িঘর ডুবে গেছে। উপজেলা শহর থেকে নৌকায় যেতে হয় বাড়ি। ঘরেও থৈ থৈ করছে পানি। বাড়ির মানুষজনেরই থাকা-খাওয়া কষ্ট। এমতবস্থায় এবার তিনি আর যাচ্ছেন না। মুন্সীগঞ্জের মিলন জানান, বন্যায় তাদের বাড়িও তলিয়ে গেছে। এরই মধ্যে পরিবারের লোকজন নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। এ অবস্থায় ঢাকার কাছে হলেও তিনি এবার ঈদে বাড়ি যাবেন না। সায়েদাবাদ টার্মিনালের বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর অঞ্চলে নতুন করে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় ওই অঞ্চলের যাত্রীরা এবার ঈদে আর বাড়ি যাচ্ছেন না। এ কারণে ওই সব এলাকাসহ বন্যাকবলিত ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, যশোর অঞ্চলের বাসগুলোতে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম ও সিলেটের বাসগুলোতে কিছু যাত্রী ঈদে বাড়ি যাচ্ছে। গাবতলী বাস টার্মিনালের মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, উত্তরাঞ্চলের বন্যাকবলিত কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা জেলার যাত্রী কম। দিনাজপুর, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, ঠাকুরগাঁও, রংপুর জেলার যাত্রী আছে। তবে সংখ্যায় তুলনামূলক অনেক কম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Md Rubel Rubel ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৩ এএম says : 0
ভাড়া বেশি নিয়েছে কতৃপক্ষ কাছেই দাবি ভাড়া জেনো কমেয়ে দায়
Total Reply(0)
HM Shamim Ahmad ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৪ এএম says : 0
সাংবাদিকদের কাছে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও সমস্যা আর যাত্রী না থাকলেও সমস্যা
Total Reply(0)
HM Shamim Ahmad ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৪ এএম says : 0
সাংবাদিকদের কাছে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও সমস্যা আর যাত্রী না থাকলেও সমস্যা
Total Reply(0)
Nk Azad ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৪ এএম says : 0
যাএী নেই ফাঁকা কিন্তু টিকিট শেষ।
Total Reply(0)
Omar Faruk Shohag ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
টিকেট কাটতে পারিনি
Total Reply(0)
Md Sohel Rana ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
টিকিট কিনতে গেলে বলে বলে টিকিট নাই
Total Reply(0)
Md Sohel Rana ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৫ এএম says : 0
টিকিট কিনতে গেলে বলে বলে টিকিট নাই
Total Reply(0)
জাহিদ খান ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
এবার মানুষের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঈদ করার মতো ক্ষমতা নেই।
Total Reply(0)
জাহিদ খান ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
এবার মানুষের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ঈদ করার মতো ক্ষমতা নেই।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
হে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর তুমি রহম করো।
Total Reply(0)
কামাল রাহী ৩০ জুলাই, ২০২০, ১২:৩৬ এএম says : 0
হে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর তুমি রহম করো।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন