শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

পবিত্র ঈদুল আজহা

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২০, ১২:০৩ এএম

এক অভূতপূর্ব বৈশ্বিক দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে ত্যাগের মহিমা, ঐশী অনুপ্রেরণা ও আনন্দের বার্তা নিয়ে ফিরে এসেছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। করোনাভাইরাস মহামারীর সাথে গত দুই যুগের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও ধ্বংসাত্মক বন্যার মধ্যেই আগামীকাল বাংলাদেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। আরবী ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ, খুশি, উৎফুল্লতা ইত্যাদি। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে ঈদ নিছকই আনন্দ, খুশি বা উৎফুল্লতা নয়। এর সঙ্গে আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক দিকও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ঈদুল আজহা মহান আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ ও আত্মত্যাগের মহিমায় সমুজ্জ্বল। পশু কোরবানির মাধ্যমে পরম করুণাময় আল্লাহর নির্দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তার সন্তুষ্টি অর্জনই ঈদুল আজহার লক্ষ্য। কোরবানি ঈদুল আজহার প্রধান আমল বা কর্তব্য। এর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য হলো নিজের মধ্যে থাকা পশুবৃত্তি ও স্বভাবকে কোরবানির মাধ্যমে বিনাশ করা। মহানবী (সা:) এই ঈদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেছেন : এটি তোমাদের পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ:)-এর সুন্নাত। বলাবাহুল্য, হযরত ইব্রাহীম (আ:) আল্লাহ পাকের প্রতি গভীর আনুগত্য ও তাঁর রাহে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের যে নজির স্থাপন করেন, ঈদুল আজহা তারই স্মারক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্দেশে এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য হযরত ইব্রাহীম (আ:) তার প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ:)- কে কোরবানি করার যে অনান্য সাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তার নজির মানব ইতিহাসে বিরল। আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি এবং রহমত ও নির্দেশে হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর স্থলে দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। সেই থেকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে পশু কোরবানির বিধান চালু হয়।

আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, কোরবানির পশুর গোশত বা রক্ত কোনোকিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছায়না। বরং তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। বলার অপেক্ষা রাখেনা, ঈদুল আজহার মর্মবাণী হলো এই তাকওয়া। তাকওয়ার অর্থ হলো মুমিনের সেই সংকল্প যাতে প্রয়োজন বোধে সে তার সবকিছু এমনকি প্রাণও আল্লাহপাকের নামে কোরবানি করতে প্রস্তুত। আসলে যে কোরবানিতে তাকওয়া নেই, আল্লাহপাকের দৃষ্টিতে তার কোনো মূল্য নেই। গোশত খাওয়া, সামাজিকতা রক্ষা করা কিংবা অর্থবিত্তের গরিমা প্রকাশ করা কোরবানি নয়। কোরবানির নিয়ত ও লক্ষ্য যদি ঠিক না হয়, তবে সে কোরবানির কোনো ফায়দা নেই। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের দেশে কোরবানির এই দিকটি অনেকেই খেয়াল রাখেন না। অনেকেই কোরবানির মর্মবাণী অনুধাবন না করে নানা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে কোরবানি করেন। তাদের কোরবানি তাদের কোনো কাজে আসেনা। কোরবানিকে ওয়াজিব করা হয়েছে। যাদের জন্য তা ওয়াজিব রাসুলেপাক (সা:) তাদেরকেই কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই মর্মে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে এমন লোক কোরবানি না করলে সে যেন ঈদগাহে না যায়। কোরবানির ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক, মানবিক নানা কল্যাণকর দিকও রয়েছে। ধনী-দরিদ্র সবাই যেন ঈদের আনন্দ সমভাবে উপভোগ করতে পারে, সে জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কোরবানির গোশতের অংশ আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রের মধ্যে বিতরণ আবশ্যক যাতে তারাও ঈদের আনন্দ সমভাবে ভোগ করতে পারে।

করোনাভাইরাসের কারণে বিগত ঈদুল ফিতরের নামাজ ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এবারো ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের জামাত করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এই ঈদে করোনাভাইরাসের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বন্যার দুর্যোগ। বন্যায় দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। তাদের জীবনে ঈদের আনন্দ বলে কিছু নেই। সামর্থ্য অনুসারে তাদের জন্য সাহায্যেরা হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। করোনার কারণে কর্মহীন মানুষের অভাব-দারিদ্র্যের পাশাপাশি বন্যায় উদ্বাস্তু মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ সওগাত পৌছে দেয়া প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের নৈতিক-সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ বন্যার সময়টাতে করোনা সংক্রমণের সতর্কতার পাশাপাশি ডেঙ্গু ও পানিবাহিত রোগের আশঙ্কা সম্পর্কেও সকলের সতর্ক থাকা বাঞ্চনীয়। এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ প্রশাসনের লোকজন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করি। খাদ্য, পানি, ওষুধের সঙ্কটে দিশেহারা মানুষের ত্রাণ সহায়তায় সরকারি-বেসরকারিভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো জরুরী। যদিও এবার করোনা মহামারী ও বন্যার কারণে ঈদে ঘরমুখী মানুষের স্রােত আগের মত নেই। তথাপি যথাযথ সংস্কারের অভাবে সড়ক-মহাসড়ক বেহাল হয়ে পড়ায় ঈদে মানুষের নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছে, তেমনি ঈদের ছুটিতে শহরের খালি হওয়া বাসাবাড়ির নিরাপত্তা নিয়েও সাধারণ মানুষের উদ্বেগ রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঈদের ছুটিতে এবং ছুটি শেষে ঈদযাত্রীদের যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে সড়ক-মহাসড়কে শৃংখলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত বন্যার্ত অসহায় মানুষদের জন্য ঈদের আনন্দ, কোরবানির গোশত ভাগাভাগি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকারের পাশাপাশি একটি সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং রোগ-বালাইয়ের এ সময়ে আমরা সকলকে সচেতন হয়ে চলার আহবান জানাই। সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন