বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভোগান্তির নাম ওভারপাস-আন্ডারপাস

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : রাজধানীর বেশিরভাগ ওভারপাস ও আন্ডারপাসের বেহাল অবস্থা। পথচারীদের চলাচলের সুবিধা বিবেচনা করে এসব নির্মাণ করা হলেও অপরিচ্ছন্ন, নোংরা, আবর্জনাযুক্ত, দুর্গন্ধময় পরিবেশের কারনে একেবারে না ঠেকলে কেউই এগুলো ব্যবহার করতে চায় না। কোনোটা দখল করে রেখেছে হকার, কোনোটা আবার ভিক্ষুকদের নিয়ন্ত্রণে। সাথে ছিনতাইকারী, পকেটমার, বখাটেরাতো আছেই। তাতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। ইদানিং এর সাথে যুক্ত হয়েছে উলঙ্গ পাগল ও সাপহাতে বেদে মহিলারা। সব মিলিয়ে প্রতিনিয়তসীমাহীন ভোগান্তি ও বিব্রতকর অবস্থার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।
সরেজমিনে কয়েকটি এলাকার ওভারপাস (ওভারব্রিজ) ও আন্ডারপাস ঘুরে দেকা গেছে, কয়েকটি স্থানের ওভারপাস একেবারেই ব্যবহার হয় না। এর প্রধান কারণ রাস্তার মাঝখানে কোন বেড়া না থাকায় পথচারীরা ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হয়। রমনা পার্কের বিপরীতে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সামনের ওভারপাসটি কেউ ব্যবহার করে না। আবার কোন কোন ওভারপাস প্রশস্ত হওয়ায় সেগুলোর বেশিরভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে হকাররা। নিউমার্কেটের সামনে ওভারপাস হকারদের কারণে হাঁটাই যায় না। ঢাকা সিটি করপোরেশন লোহারপাতে অপেক্ষাকৃত অপ্রশস্ত কিছু ওভারপাস নির্মাণ করেছে। অপ্রশস্ত বলে এগুলো পুরোপুরি দখল করার সুযোগ নেই। কিন্তু এগুলো ব্যবহারও হয় কম। স্টিলের তৈরী ওভারপাসগুলোর বেশিরভাগেরই সিঁড়ির আশপাশের স্থানে দোকনপাট গড়ে উঠেছে। আর পুরাতন পাঁচটি প্রশস্ত ওভারব্রিজের একচিলতে জায়গাও বর্তমানে ফাঁকা নেই। সিঁড়ির গোড়া থেকে শুরু করে মধ্যবর্তী সবটুকু স্থানই সারাদিন ভাড়ার ভিত্তিতে দোকান বসছে। রাতে এগুলোতে চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। ওভারব্রিজগুলো দিয়ে পথচারীর স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। ক্ষুদে ব্যবসায়ী হকার আর ভিক্ষুকের দল নানা ফন্দি-ফিকিরের পসরা সাজিয়ে বসেছে। কোনো কোনো ওভারপাস পরিণত হয়েছে ভাসমান পতিতাদের স্থায়ী আবাসে। কোনো কোনো ওভারপাস দিনের আলোয় স্বাভাবিক থাকলে সন্ধ্যা হলেই চেহারা পাল্টে যায়। চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, পকেটমারসহ অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িতদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। অধিকাংশ ওভারপাসে দৃশ্যত সিটি করপোরেশনের আদৌ কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশও এগুলোর দিকে কোনো নজর দেয় না। এজন্য একেবারে না ঠেকলে পথচারীরা ওভারপাসগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ মনে করে। রাজধানীর কমলাপুরের ওভারব্রিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ওপাড়ের বাসাবো, খিলগাঁও, সবুজবাগ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ওভারব্রিজটি ব্যবহার করে। অথচ এর বহু স্থানে ভাঙ্গাচোরা, জোড়াতালি দেয়া। সিঁড়িগুলো নড়বড়ে। কোনো কোনো স্থানে সিঁড়িই নেই। মানুষ হাঁটার সময় পুরো ব্রিজ নড়ে।তার উপর ব্রিজের উপর সকাল বিকাল বাজার বসে। বিক্রেতারা বেশিরভাগ জায়গা দখল করে বেচাকেনা করে। আর তাতে পথচারীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়।
অন্যদিকে, আন্ডারপাসগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। আন্ডারপাস দিয়ে রাস্তা পারাপারকে ঝুঁকি বলেই মনে করেন বেশিরভাগ পথচারী। ভোগান্তি ছাড়াও আন্ডারপাসে গেলে সব হারানোর ভয় থাকে অনেকেরই। আন্ডারপাসগুলোতে নির্বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা থাকলেও বাস্তবে তা থাকে না। এতে করে যে কোনো মুহূর্তে বিপদের আশঙ্কা থাকে। ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যুৎ চলে যেতেই কারওয়ান বাজারের আন্ডারপাস পরিণত হয় অন্ধকার গুহায়। সেখানে মহিলারা শিকার হচ্ছেন নানা লাঞ্ছনার। আন্ডারপাসের অভ্যন্তরে বখাটে ও নেশাখোররা আড্ডা দেয়। সুযোগ বুঝে তারা পথচারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মহিলা পথচারীদের নানাভাবে হেনস্তা করতে দ্বিধা করে না তারা। গাবতলীর আন্ডারপাস নেশাখোর, ওপকেটমার, ছিনতাইকারীদের দখলে। চলে দুর্বৃত্তদের আনাগোনা। মোটর শ্রমিক ও স্থানীয় দোকানদাররা জানান, জেনে শুনে কেউই গাবতলী আন্ডারপাসটি ব্যবহার করে না। যারা এর সম্পর্কে জানে না তারাই ব্যবহার করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনে। বিষয়টি টার্মিনাল ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের জানা। কিন্তু পুলিশ রহস্যজনক কারণে আন্ডারপাসটি নিরাপদ রাখে না। গুলিস্তানের সর্ববৃহৎ পাতাল পথ এখন ব্যস্ততম মোবাইল সরঞ্জামাদির মার্কেট। ক্রেতা ছাড়া এই পথে কেউ যাতায়াত করে না। এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, সাধারণত ওভারপাসগুলো দিয়ে পারাপার হতে গেলে মানুষকে তিন তলা বা তারও বেশি উঁচুতে উঠতে হয়। এই কষ্টের জন্য অনেকেই ওভারপাস ব্যবহার করতে চান না বা অনেকেই সে কষ্ট করতে পারেন না। সেজন্য রাজধানীর ওভারপাসগুলো খুব একটা ব্যবহার হয় না। এজন্য ট্রাফিক সিগনালগুলোতে একটু বেশি প্রশস্ত করে জেব্রাক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করলে সিগনাল বন্ধ থাকাবস্থায় একসাথে বহু মানুষকে পারাপারের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে। এজন্য ২০ থেকে ৩০ ফুট স্থান বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। আবু নাসের বলেন, ওভারপাস ও আন্ডারপাসগুলোর অবস্থা বহু আগে থেকেই খারাপ। ময়লা-আবর্জনা, দর্গন্ধ ছাড়াও রাতে বেশিরভাগ ওভারপাস অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। মানুষ সেগুলো ব্যবহার করা নিরাপদ মনে করে না। মহিলারা তো নয়ই। সেজন্য এগুলোর বিকল্প কিছু ভাববার সময় এসেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন