বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভিন্ন এক ঈদযাত্রা

বাস ও লঞ্চে নেই স্বাস্থ্যবিধি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

ঈদ মানে বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ঢল। মানুষে ঠাসা রেল স্টেশন। কাউন্টারগুলো থাকে ভরপুর, সড়কে থাকে যানজট। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও বন্যার কারণে এবার ভিন্ন এক ঈদযাত্রা দেখছে যাত্রী ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। বাস টার্মিনালগুলোতে গতদিনের তুলনায় ভিড় বাড়লেও ঈদযাত্রার তুলনায় তা খুবই কম। সড়রঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী বাড়লেও আগের তুলনায় তা কিছুই নয়। আর কমলাপুরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী যাচ্ছেন খুবই আয়েশ করে।

চিরচেনা দৃশ্য নেই গাবতলী, সায়েদাবাদ এবং মহাখালী বাস টার্মিনালে। কাউন্টারে গত দু-তিন দিনের তুলনায় যাত্রী বাড়লেও অন্যান্য ঈদযাত্রার তুলনায় খুবই কম। স্বাভাবিক সময়ে যাত্রীরা যেখানে বাসের জন্য ছুটোছুটি করতো সেখানে উল্টো হাঁকডাকে যাত্রীদের প্রভাবিত করার চেষ্টায় লিপ্ত পরিবহন শ্রমিকরা।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, যাত্রীরা আসছেন, একটু অপেক্ষা করে বাসে উঠছেন। কাউন্টারে নেই যাত্রীদের ভিড়। অনেকে কাউন্টারে এসে টিকিট কেটেই বাসে উঠছেন। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্যান্য বার যাত্রাপথে দীর্ঘ যানজটের কারণে বাসের শিডিউল লন্ডভন্ড হয়ে যেত। কিন্তু এবার প্রত্যেক পরিবহনের শিডিউল বাস ছেড়ে যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ে। যে কারণে এবার যাত্রীদের কোথাও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না।

কল্যাণপুরে আহাদ পরিবহনের সুপারভাইজার চাঁদ আলী বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের হাসি-কান্না যাত্রীদের নিয়েই। যাত্রী বেশি তো শ্রমিকদের আয়-রোজগার বেশি। কিন্তু করোনায় বাসের যাত্রী অনেক কমে গেছে। ঈদ মানে পরিবহন শ্রমিকদের বাড়তি চাপ, বাড়তি আয়ও। কিন্তু এমন ঈদ কখনো দেখিনি আগে।

গত কয়েক দিনের চেয়ে যাত্রী বাড়লেও তুলনামূলক কমই বলে দাবি করেন অরিন পরিবহনের সুপারভাইজার সুজন। তিনি বলেন, ঈদ আসলে আমাদের ফুসরত থাকে না। যাত্রীদের পেছনে দৌড়াতে এবং হাঁকডাকও করতে হয় না। কিন্তু এবার যাত্রী কম। আবার সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে সিট খালি রেখে ভাড়া যা বাড়ানো হয়েছে তাতে লোকসানই। হাঁকডাকে যাত্রীদের অনেকেই ডেকে নিচ্ছেন নিজ নিজ কাউন্টারে। অধিকাংশ পরিবহন মালিক বাস কম চালাচ্ছেন। গাবতলী ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আলী মোহাম্মদ বলেন, যাত্রী না থাকায় অধিকাংশ দূরপাল্লার পরিবহনের ট্রিপ কমে গেছে। যাত্রী হলেই যাচ্ছে বাস।

গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় সারি সারি সাজানো দূরপাল্লার বাস। ব্যাগসহ যাত্রী আসতেই পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে শুরু হয় হাঁকডাক, প্রতিযোগিতা, টানাটানি। বরিশাল রুটের হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, এবার কপালই খারাপ, একে তো করোনা আতঙ্ক, তার মধ্যে বর্ষার প্রকোপ, কোথাও বন্যা। যে কারণে যাত্রী কমই এবার। এস আর পরিবহনের বগুড়ার যাত্রী সেলিম রেজা বলেন, ঈদুল ফিতরে তো যেতে পারিনি করোনার কারণে। কিন্তু ঈদুল আজহায় নাড়ির টানে যেতে হচ্ছে বাড়ি। আগেই জেনেছি এবার রাস্তায় কোনো যানজট নেই। টার্মিনালে এসেও দেখছি ফাঁকা। সেজন্য ভাল লাগছে। বরিশাল রুটের শ্যামলী পরিবহনের যাত্রী মেরাজুল ইসলাম বলেন, বাড়ি যাচ্ছি এটা ভেবে যেমন ভালো লাগছে তেমনি করোনা নিয়ে শঙ্কাও জাগছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। পথেঘাটে করোনার ভয়ের সঙ্গে বাড়তি ভাড়াও গুনতে হচ্ছে। তবে ঈদটা ভালোভাবে উদযাপনই লক্ষ্য।

এদিকে, সায়েদাবাদ টার্মিনালে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে বলে কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন। খুলনার যাত্রী শফিকুল ইসলাম বলেন, অর্ধেক আসন খালি রেখে ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি নেয়ার কথা। কিন্তু বাসগুলো পুরো একশ’ শতাংশই বেশি ভাড়া দাবি করছে। ওই টাকায় টিকিট না করলে কাউকে বাসে উঠতে দেয়া হচ্ছে না।

সিলেটের এক যাত্রী বলেন, ভাড়া বেশি দাবি করার কারণে অনেকে পিকাপ ভ্যানে যাচ্ছে। তাতে করোনার পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেশি।
এদিকে, সাভার হইওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মহামারি করোনা ও বন্যাকালীন ঈদের উৎসব ¤øান হলেও সানন্দে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা। সাভার ও আশুলিয়ায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের বাস। জীবিকার অন্বেষণে অনেকে বছরজুড়ে এখানে কাজে ব্যস্ত থাকলেও ঈদে বাড়ি ফেরা চাই। তাই ছুটি পাওয়া মাত্র বাসে কিংবা পিকআপে গ্রামে ছুটছেন তারা।

ওই কর্মকর্তা জানান, গতকাল বিকেলে সাভারের নবীনগর, বাইপাইল ও সাভার বাসস্ট্যান্ডে বাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষের চাপ। এদের মধ্যে বাসের টিকেটের মূল্য চড়া হওয়ায় ট্রাক কিংবা পিকআপে উঠে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই।

অন্যদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল ভিড় ছিল আগের দিনের তুলনায় বেশি। দুপুরের পর থেকে শত শত যাত্রী ভিড় করে টার্মিনালে। এক পর্যায়ে টার্মিনালে গাদাগাদি করে যাত্রীরা অবস্থান করে। পরে লঞ্চেও তারা ওঠেন গাদাগাদি করেই। লঞ্চ মালিক সমিতির এক নেতা জানান, এবার ঈদে তুলনামূলক কম যাত্রীই বাড়ি যাচ্ছেন। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এবার যাত্রীর সংখ্যা এক তৃতীয়াংশও হবে না। যা যাচ্ছে গত দুদিন ধরে। আজ শেষ দিনে ভিড় আরও বাড়তে পারে বলে জানান ওই নেতা।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন