শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল

বানভাসিদের ঈদের আনন্দ দুঃস্বপ্নে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের অধিকাংশ জেলায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও মাঝারি আবার কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকা জেলার আশেপাশের নদীগুলোর পানি বাড়ছে। যা আগামী ২৪ ঘন্টা অব্যাহত থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া জানান, বাড়ছে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি। উত্তর পূবাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ নদীরগুলোর পানি গত কয়েকদিন কমে এলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে। ফলে এসব নদীর আশেপাশের এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এদিকে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। আগামী ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া পদ্মা ও গঙ্গা নদীর পানি এখন স্থিতিশীল আছে। যা আগামী ৪৮ ঘন্টা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নওগা জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, চাদপুর, রাজবাড়ি, শরীয়তপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। গতকাল দেশের ১৭টি নদীর ২৭টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্টে পানি ৭ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে ২৮, ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে ৬১, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৭২, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৮২, কাজিপুর পয়েন্টে ৬২ , সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৬০, আরিচা পয়েন্টে ৬৮, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১০৭, আত্রাই পয়েন্টে ১১, গুড় নদীর সিংড়া পয়েন্টে ৯০, ধলেশ্বরী নদীর জাগির পয়েন্টে ১০৪, এলাসিন পয়েন্টে ১১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর জামালপুর পয়েন্টে ৯, কালিগঙ্গা নদীর তারাঘাট পয়েন্টে ১১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ১১৪, ভাগ্যক‚ল পয়েন্ট ৭১, মাওয়া পয়েন্টে ৬৫ এবং সুরেশ্বর পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার, পুরাতন সুরমা নদীর দিরাই পয়েন্টে ৫, তিতাস নদীর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পয়েন্টের ২৮, মেঘনা নদীর চাঁদপুর পয়েন্টের ২৫, আড়িয়াল খা নদীর মাদারিপুর পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ক্ষেতের ফসল। পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। সবকিছু হারিয়ে চাষিরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙন ও বন্যায় সবকিছু হারিয়ে বাঁধ বা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ। এ অবস্থায় বানভাসিদের ঈদের আনন্দ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। করোনায় এবং তিন দফা বন্যায় কাজ নেই, কারও কাছে কোনো টাকাও নেই। সরকারি ও বেসরকারি কিছু সহায়তাই এখন ভরসা। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের পিঠ একেবারে দেয়ালে ঠেকে গেছে। বেশিরভাগ মানুষের সাধ্য নেই এবারে ঈদে পশু কোরবানি দেওয়ার। বানভাসিদের মতে, যেখানে জীবনই বাঁচে না, সেখানে কিসের ঈদ। আনন্দের বদলে ভোগান্তির ঘোলা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন হাওরপাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লাখো মানুষ।

মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, আমাদের বাড়িঘর নদীতে গেছে , গেছে ফসলী জমি, এখন স্ত্রী সন্তান নিয়ে কি করবো কোথায় যাব কিভাবে বেচে থাকবো জানিনা । আমাদের এ দুর্দশা দেখার বা সাহায্য করার মতো কেউ এগিয়ে আসেনি। অত্যন্ত ক্ষোভ ও দু:খের সাথে কখাগুলো সাংবাদিকদের কাছে বলেন নদীভাঙ্গনের শিকার সদর উপজেলার উত্তর পাচখোলা গ্রামের দিনমজুর মজিবর সরদাসহ আরো অনেকেই। গত কয়েকদিনের অব্যাহতভাবে আড়িয়াল খা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে মাদারীপুর সদর উপজেলার বেশ কিছু স্থানে নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে

সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, শাহজাদপুর, কাজীপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, চৌহালী, রায়গঞ্জ, কামারখন্দ ও সদর উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চলনবিলসহ নি¤œাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করা পুকুর তালিয়ে যায়।

একাধিক মৎস্যচাষি জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধি পেলে আগামী ২-১ দিনের মধ্যে আরও দুই শতাধিক পুকুর তলিয়ে যেতে পারে। এতে মৎস্যচাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, শ্রীনগরে বন্যায় ৫২টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার ভাগ্যকুল,বাঘড়া, শ্যামসিদ্ধি ও কোলাপাড়া, ষোলঘর, শ্রীনগর সদর, পাটাভোগ, কুকুটিয়া ও আটপাড়া ইউনিয়নের ৫২টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিয়নও বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে শুরু করেছে।

ভ‚রুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ভ‚রুঙ্গামারীর বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। তবে পানি কমলেও দূর্ভোগ কমেনি বন্যাকবলিত মানুষের। ভাঙছে কালজানি দুধকুমার। ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার সময় পাচ্ছেনা অনেকেই।

দৌলতপুর (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজকোর্ট, পুলিশ লাইন্স, কারাগারসহ জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস চত্বর পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বন্যার পানিতে দৌলতপুরের বিষ্ণুপুর, ছাতিয়ান, জিয়নপুর ও রোহাসহ বিভিন্ন গ্রামের কৃষকের পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

রামগতি (ল²ীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান মেঘনার তীব্র ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। রাক্ষুসে মেঘনা ইতিমধ্যে গিলে খেয়েছে চরকালকিনি, সাহেবেরহাট, চরফলকন ও পাটারিরহাট ইউনিয়নের ৩৬ ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি ওয়ার্ড। ভাঙন ঠেকাতে না পারলে খুব শীঘ্রই পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে আরও ১২টি ওয়ার্ড। এ ছাড়াও ভাঙনের মুখে রয়েছে চরলরেন্স ও চরমার্টিন ইউনিয়ন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন