শ্রাবনের দুঃসহ গরমে নাজেহাল দক্ষিনাঞ্চলের জনজীবনে মঙ্গলবার ভোর রাতের প্রবল বর্ষন কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও অবিররাম বজ্রপাত ও ঝড়ো হওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অনেকটাই লন্ডভন্ড হয়ে যায়। উত্তর বঙ্গোপসোগর ও তৎসংলহগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সকাল সোয়া ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে বরিশাল মহানগরীর বেশীরভাগ রাস্তাঘাটও সয়লাব হয়ে যায়। এসময় পটুয়াখালীর কলাপাড়াতে ৫৫ মিলিমিটিার বৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল মহানগরী ও ঝালকাঠী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবারহ ব্যবস্থা পূণর্বাশনের আগেই আবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দ্বিতীয় দফার বর্ষনে জনজীবন অচল হয়ে পরে। দুপুর ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশালে অঅরো ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বেশীরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবারহ পূণর্বাশন সম্ভব হয়নি। তবে কাজ করছে বিদ্যুৎ কর্মীরা। উপক’লভাগ সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের ঘন মেঘাচ্ছন্ন। বঙ্গোপসাগর থেকে সঞ্চালনশীল মেঘমালা ধেয়ে আসছে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লভাগে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, মৌশুমী বায়ুর অক্ষ ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ এবং লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তরে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌশুমী বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লভাগে মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষনের সম্ভবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। বুধবারের পরবর্তি ৪৮ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।
গত দু মাস ধরেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান হ্রাসের সাথে তাপমাত্রার পারদ ক্রমশ ওপরে উঠতে থাকায় স্বাভাবিক জনজীবন সহ কৃষি ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দক্ষিণাঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদেও কিছুটা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হওয়ায়। এমনকি দুঃসহ গরমে কৃষকরা জমিতে বীজ রোপন পর্যন্ত করতে পারছিল না। ইলিশের ভরা মৌশুম হলেও জেলোরা নৌকা নিয়ে নদী ও সাগর মোহনায় মাছ ধরতে পারছিল না । এমনকি নদী ও সাগর মোহনায় স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রার পরিমান বেশী থাকায় ইলিশের পরিভ্রমনও বাধা গ্রস্থ হচ্ছিল। ফলে ভরা মৌশুমে এবার দক্ষিণাঞ্চলের ইলিশের ভ্রমনস্থলে উপস্থিতি যথেষ্ঠ কম।
ভরা শ্রাবনের জুলাই মাসটি দক্ষিণাঞ্চলে অতিক্রান্ত হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত দিয়ে। বরিশালে সোমবার তাপমাত্রার পারদ প্রায় ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছুয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের মতে জুলাই মাসে সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান স্বাভাবিকের চেয়ে ১১.৩% বেশী হলেও বরিশাল অঞ্চলে তা ছিল ১৫.৬% কম। এমনকি জুন মাসেও দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ২% বেশী বৃষ্টির স্থলে বরিশাল অঞ্চলে তা ০.৬% কম ছিল।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, বর্ষা মথায় করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌশুমী বায়ু ৭ জুন দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপক’লে পৌছার পরে বরিশাল অঞ্চলে তা পৌছে ১১ জুন। ১২ জুন তা সারা দেশেই বিস্তার লাভ করে। কিন্তু জুন মাসেই দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এমনকি জুলাই মাসেও বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৫১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছিল আবহাওয়া বিভাগ। কিন্তু বাস্তবে বৃষ্টি হয়েছে ৪৩৮ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫.৬% কম। চলতি আগষ্টেও দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে ৩৯০Ñ৪৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। উপরন্তু চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২ টি বর্ষকালীন লঘুচাপ সৃষ্টির কথা জানিয়ে তা থেকে একটি বর্ষাকালীন নি¤œচাপে পরিনত হবার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
তবে আগষ্টের বৃষ্টিবিহীন প্রথম দুদিন অতিবহিত হয়েছে ৩৫-৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসের দুঃসহ তাপ প্রবাহে। মঙ্গলবার ভোরের বর্ষন জনজীবনকে যথেষ্ঠ সিক্ত করলেও তা কতদিন অব্যাহত থাকবে সে বিষয়ে জনমনে কিছুটা শংকা থাকলেও আবাহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী দুদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কথাই বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন