শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভিন্ন আমেজে ঈদ উদযাপন

করোনা-বন্যা থামাতে পারেনি আনন্দ নাগরিকদের মোবাইলে প্রধানমন্ত্রীর ‘ঈদ শুভেচ্ছা’ উপহার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:০৪ এএম

এবার ভিন্ন মাত্রায় উৎযাপিত হলো পবিত্র ঈদুল আজহা। বৈশ্বিক মহামারি করোনা ও জাতীয় দুর্যোগ ‘বন্যা’র মধ্যেই মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা আসে মুসলমানদের ঘরে ঘরে। প্রতিদিন করোনায় দেশে অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে আক্রান্ত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। করোনার এমন সঙ্গীন পরিস্থিতির মধ্যেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দেয় বন্যা। আশঙ্কা ছিল বন্যা আর করোনায় ঈদ পালন অনুষঙ্গে ছন্দপতন ঘটাবে। উৎসবের সেই রোশনাই, বর্ণচ্ছ¡টা হবে ম্রিয়মাণ। কিন্তু করোনা ও দীর্ঘবন্যা ঈদে মানুষের উৎসবে ছেদ ফেলতে পারেনি। প্রতিক‚ল পরিবেশের মধ্যেই যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য আর উৎসবের আমেজেই পালিত হয়েছে ঈদুল আজহা। শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ এমনকি বন্যায় ডুবে থাকা এলাকার বাঁধ ও নৌকায় মানুষকে ঈদ উদযাপন করতে দেখা গেছে। ঈদ উৎযাপনে মানুষের মধ্যে আনন্দের কোনো কমতি ছিল না। যে যেভাবে পেরেছেন ঈদে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। আশঙ্কা ছিল এবার কোরবানি কম হবে। কিন্তু সে আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করে সারাদেশে লাখ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে। করোনার কারণে যারা ঢাকা ছাড়েননি; তাদের অনেকেই নিজ নিজ এলাকায় কোরবানি দিয়ে গরিব মানুষের মধ্যে গোশত ভাগাভাগি করে দিয়েছেন। এই দুর্যোগময় করোনার মধ্যেই রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে রেকর্ড করা ‘ঈদ শুভেচ্ছা’ বার্তা মোবাইল ফোন ফোনে নাগরিকদের উপহার ঈদ উদযাপনে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘদিন থেকে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ। অফিস-আদালতসহ সবকিছুই সীমিত আকারে চালু রয়েছে। পরিবহণ চলছে সীমিত পর্যায়ে। এর মধ্যে দেশের ৩৪ জেলা বন্যাকবলিত। কয়েকটি জেলায় নদীভাঙন ছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়েছে বন্যা। রাজধানীর আশপাশের সব নিচু এলাকার মানুষ পানিবন্দি। এর মধ্যে গতকালও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫০ জন মানুষ। দেশে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ (২ লাখ ৪৪ হাজার ২০ জন)। প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় সাড়ে দিন হাজার মানুষ। এর মধ্যেও ঈদে মানুষের মধ্যে আনন্দ ও উৎসবে কমতি দেখা যায়নি। ঈদ যেন মানুষের মুখে হাসি ফোঁটানোর জন্যই এসেছিল। ঈদুল আজহার দিন উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েদের বাঁধ ভাঙা উচ্ছ¡াস দেখা গেছে। যারা ঢাকা কিংবা নিজ এলাকার বাইরে চাকরি করেন, ঈদের সময় বাড়িতে বেড়াতে যান তারাও প্রতিবেশি ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে ঈদ উদযাপন করেন।

ইনকিলাবের জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা জানান, যেসব এলাকায় বন্যার পানি সেখানে দেখা গেছে ঈদের দিন নৌকায় রান্না করেছেন গৃহিনীরা। বাঁধে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো সেখানেই ভালোমন্দ রান্না করেছেন। যারা কোরবানি করেছেন তারা প্রতিবেশিদের মধ্যে গোশত ভাগ করে দিয়েছেন। ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে করার ওপর বিধিনিষেধ ছিল। করোনার কারণে মূলত মসজিদের ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু মুসল্লির সংকুলান না হওয়ায় অনেক এলাকায় মানুষকে বিল্ডিংয়ের ছাদে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

করোনার কারণে রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা, কক্সবাজার, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বন্ধ রাখা হয়। ভ্রমণ পিপাসুরা যেন বেড়াতে যেতে না পারেন সে জন্য হোটেল, মোটেল বন্ধ রাখা হয় কঠোর নির্দেশনায়। কিন্তু তাতে থেমে থাকেনি ঈদে মানুষের চিত্তবিনোদন ও ঘুরে বেড়ানো। ঈদের ছুটিতে স্থানীয় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের অসংখ্য হাওর, রাজশাহী শহরের পার্শ্বের পদ্মাপাড়, নাটোরে চলনবিল, দিনাজপুরের স্বপ্নপুরি, রংপুরের ভিন্নজগৎ, নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্ক, ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, রাজধানী ঢাকার হাতিরঝিল, নারায়ণগঞ্জের শেখ রাশেল পার্ক ও বঙ্গবন্ধু সেতুর দুই ধারসহ স্থানীয় বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দশনার্থীদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। লাখ লাখ আবালবৃদ্ধবণিতা ঈদের দিন বিকেল ও পরের দিন এসব স্থানীয় বিনোদন স্পটে ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটান। আমাদের সংবাদদাতা জানান, এবার ঈদে বঙ্গবন্ধু সেতুর টাঙ্গাইলের পার্শ্বে ও সিরাজগঞ্জ জেলার পার্শ্বে শত শত গাড়ির সারি দেখা গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছেলেমেয়ে নিয়ে ঈদের দিন সেখানে সময় কাটাতে যান।

ঈদে এবার সরকারি চাকরি ও গার্মেন্টস কর্মীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা ছিল। একই সঙ্গে ঘরমুখো মানুষের জন্য বাস, ট্রেন ও লঞ্চের বাড়তি কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তারপরও লাখ লাখ মানুষ গ্রামের বাড়িতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামে গেছেন। সামর্থ্যবানরা কোরবানি দিয়েছেন। গরিব, দুস্থদের মধ্যে কোরবানি দেয়া পশুর গোশত ভাগ করে দিয়েছেন। ঢাকায় বসবাস করেন এমন রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সমাজসেবি, বিত্তবানদের বড় একটি অংশ করোনার কারণে ঢাকায় ঈদ করেছেন। এদের অনেকেই গ্রামে কোরবানি দিয়েছেন শুধু গরিব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিদের মধ্যে গোশত ভাগ বাটোয়ারা করে দেয়ার লক্ষ্যে।

ভারত তথা উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, মহানন্দা, তিস্তা, ধরলা নদীর অববাহিকায় প্রায় ৩৪টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। চরম দুর্ভোগে কয়েক কোটি মানুষ। একই সঙ্গে নদী ভাঙনে রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, মাদারিপুর, শরীয়তপুর, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি জেলার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। সরকরি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় তারা নিদারুণ কষ্টে দিনযাপন করছেন। এমন বাস্তবতার মধ্যেও মানুষ উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদুল আজহা পালন করেছেন।

এবার ঈদ উদযাপনে বঙ্গভবন ও গণভবনে রাষ্ট্রীয় কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। কিন্তু করোনা মহামারি ও বন্যা দুর্যোগ মাথায় রেখে ঈদুল আজহায় দেশবাসীকে সাহস জোগাতে, শুভেচ্ছা জানাতে রেকর্ড করা ফোন কল পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই সে অডিও বার্তা বেজে উঠছে নাগরিকদের ফোন। ওপ্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি শেখ হাসিনা। বছর ঘুরে আবার পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের মাঝে এসেছে। আমি পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি আশা করছি করোনাভাইরাস মহামারির সব অন্ধকার কাটিয়ে ঈদুল আজহা সবার মাঝে আনন্দ বয়ে আনবে।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা করোনায় বিপন্ন ও বন্যায় দুর্গত মানুষের মধ্যে ঈদ আনন্দের প্রেরণা দিয়েছে।

করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনায় সারাদেশের মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক মসজিদে একাধিক ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় অধিকাংশ মসজিদের বাইরে রাস্তার ওপর মুসল্লিদের ঈদের নামাজে অংশ নিতে হয়েছে।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ছয়টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তিনটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। ঈদের খুৎবা পূর্ব বয়ানে মসজিদের খতিব ও ইমামরা ঈদুল আজহার তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। নামাজ শেষে খুৎবা পেশ করা হয়। ঈদ জামাত শেষে মসজিদে মসজিদে করোনা মহামারি থেকে মুক্তি, দেশ ও জাতির মঙ্গল এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি উন্নতি সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পাশাপাশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতদের জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও মুসল্লিরা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানান।

তবে ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিদের মাঝে হাত মেলানো ও কোলাকুলির দৃশ্য এবার চোখে পড়েনি। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চির পরিচিত এমন দৃশ্য থেকে বিরত থাকেন মুসল্লিরা।

প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
আক্তার হোসেন ৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
এটি ছিল একটি ব্যতিক্রমী কোরবানির ঈদ
Total Reply(0)
ফজলুল হক ৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
ঈদের সময় স্বাস্থ্য বিধি মানা ও অসামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে খুব কম দেখা গেছে
Total Reply(0)
সেলিম উদ্দিন ৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:৪৭ এএম says : 0
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে রেকর্ড করা ঈদ শুভেচ্ছা বার্তা এই ঈদের একটা বড় চমক ছিল
Total Reply(0)
মহিউদ্দিন ৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:৪৮ এএম says : 0
ঈদের সময় গ্রামের চিত্র দেখে বোঝা যায় নি যে দেশে করোনা নামক মহামারীর চলতেছে
Total Reply(0)
রেজবুল হাসান ৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
সকল চাকরিজীবিদেরকে কর্মস্থলে থাকতে বলা হলেও অধিকাংশ মানুষ করতে গ্রামে চলে গেছে
Total Reply(0)
আবির ৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:৪৯ এএম says : 0
বন্যার পানিতে প্লাবিত 34 জেলার মানুষের ঈদ খুব একটা ভালো কাটেনি
Total Reply(0)
সুলতান আহমেদ ৫ আগস্ট, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহামারী থেকে মুক্তি দান করুক
Total Reply(0)
নিরব ৫ আগস্ট, ২০২০, ১০:১৭ এএম says : 0
সমার্থক আমাদের উচিত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো
Total Reply(0)
খালেক ৫ আগস্ট, ২০২০, ১০:১৮ এএম says : 0
মানুষ পরিবারকে নিয়ে ঈদ কাটালেও তাদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছিল
Total Reply(0)
গোলাম ফারুক ৫ আগস্ট, ২০২০, ১০:১৮ এএম says : 0
ঢাকার মসজিদ গুলোতে স্বাস্থ্যবিধি ঈদের নামাজ আদায় করা হয়েছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন